Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-দিল্লি চুক্তি ও সমঝোতা

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৭টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নয়াদিল্লীর হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর এই চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছে। এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন দুই প্রধানমন্ত্রী। চুক্তি-সমঝোতার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে ভারতকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রদান, ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের ‘স্ট্যান্ডার্ড অপরেটিং প্রসিডিউর’ চূড়ান্ত হওয়া, বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের আর্থিক ঋণের দ্রুত বাস্তবায়ন, হায়দরাবাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়, যুব বিষয়ক সহযোগিতা ও উপকূলীয় নজরদারি ব্যবস্থা। যে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন হয়েছে সেগুলো হলো, বাংলাদেশ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সরবরাহের জন্য এলপিজি আমদানি, খুলনার ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ ভারত প্রফেশনাল স্কিল ডেভলপমেন্ট ইন্সটিটিউট এবং ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের বিবেকানন্দ ভবন। চুক্তি ও সমঝোতা সই এবং প্রকল্প তিনটির উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই চুক্তি ও সমঝোতার মধ্যেদিয়ে দুই দেশের বহুমুখী ও বহুমাত্রিক সহযোগিতা বিশ্বে সৎপ্রতিবেশীসূলভ সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অনুরূপভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক বিশ্ববাসীর কাছে তার উদাহরণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশ আসলে কী পেল, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বাংলাদেশের অনেকেই আশা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মধ্য দিয়ে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে একটা বড় রকমের অগ্রগতি হবে। বাস্তবে তা হয়নি। অপেক্ষা ও আশ্বাসের মধ্যে এই ইস্যুর ইতি টানতে হয়েছে। পক্ষান্তরে ভারতের চাহিদা মাফিক ফেনী নদীর পানি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তি যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন বাংলাদেশ ফেনী নদীর পানি দেয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মত হয়। সে সময় তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় ফেনী নদীর পানির বিষয়টিও ঝুলে যায়। ইতোমধ্যে ভারত বার বার তাগাদা দিলেও ফেনী নদীর পানি দিতে বাংলাদেশ সম্মত হয়নি। যদিও তিস্তার পানি ও ফেনী নদীর পানির বিষয় একই ধরনের নয়। তিস্তা যৌথ নদী। এর পানির হিস্যা বাংলাদেশের অধিকার। পক্ষান্তরে ফেনী একান্তই বাংলাদেশের নদী। ভারত এর পানির হিস্যাদার নয়। এই নদীর পানি ভারতকে দেয়া বাংলাদেশের সদিচচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। অত্যন্ত দু:খজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ভারত অনৈতিকভাবে ফেনী নদী থেকে পানি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটে বার্গেনিংয়ের বিষয় না হলেও এর একটা সুযোগ যে ছিল, বাংলাদেশ তা ছেড়ে দিয়েই ভারতকে ফেনী নদীর পানি দিতে রাজি হয়েছে। এ সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের তিস্তার পানির জোরালো দাবি উত্থাপনের উল্লেখ আছে। এই সঙ্গে বলা হয়েছে, তিস্তা ছাড়াও অন্য পাঁচ নদীর পানি নিয়েও কথা হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দাবি, অভিন্ন সকল নদীর পানিবন্টন ও যৌথ অববাহিকা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোনো কথা নেই। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার, বলা বাহুল্য, আরও দ্রæতায়নের ব্যবস্থা হয়েছে। বাকী চুক্তি ও সমঝোতার মধ্যে উপকূলীয় নজরদারির ব্যবস্থা ছাড়া বিশেষ উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু নেই। এই উপকূলীয় নজরদারি কীভাবে হবে, সে বিষয় বিস্তারিত জানা যায়নি। এক্ষেত্রে ভারতের একক ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা এবং সেটা হলে অন্য প্রতিবেশী দেশ তা সুনজরে দেখবে কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
অনেকেই ধারণা করেছিলেন, ভারতের আসামের বহুল আলোচিত এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা ফের যৌথ আলোচনার তোলা হবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সম্প্রতি নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই মর্মে আশ্বস্থ করেন যে, এতে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই। এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার ঢাকা সফরের সময়ও দুশ্চিন্তা না করতে বলেন। কিন্তুু বিজেপির সভাপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির নেতারা লাগাতার বলে যাচ্ছেন, ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের’ বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হবে। তাদের একথায় দুশ্চিন্তার অবশ্যই কারণ আছে যদিও দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পুনরায় ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বস্থ করা হয়েছে। বাংলাদেশকে স্পষ্টভাবেই এখন বলতে হবে, ভারতে কোনো বাংলাদেশী ‘অনুপ্রবেশকারী’ নেই, সুতরাং তাদের ঢুকতে দেয়ার বা গ্রহণ করার প্রশ্নই ওঠে না। উদ্বোধিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতের এলপিজি আমদানি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত দুটি কোম্পানী গড়ে উঠেছে। লাভজনক হবে, এই বিবেচনা থেকেই সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়েছে বলে অনেকের ধারণা যদিও এ নিয়ে ভুল বুঝার অবকাশ রয়েছে। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে। আর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এর ফলে বাংলাদেশের রফতানি বাড়বে, বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। প্রসঙ্গক্রমে বলা আবশ্যক, ভারতের সঙ্গে কোন বিষয় কী ধরনের চুক্তি ও সমঝোতা হয়, অনেক সময় খোলাখুলিভাবে তা জানানো হয়না। বাংলাদেশ কী দিলো তা জানা বা বুঝা গেলেও কী পেল তা উহ্য থেকে যায়। আমরা এও দেখছি, বাংলাদেশ ভারতের চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু দিয়ে দিলেও তার পাওয়ার ঘরে শূন্যই থেকে যায়। এটা সুষম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পরিচয় বহণ করে না। আমাদের ন্যায্য প্রাপ্যের ব্যাপারে সচেতন ও নিরাপোষ হতে হবে এবং সকল চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে জনগণকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন