Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ উপকূলে ভারতের নজরদারি চীনের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরার আশঙ্কা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:৩৭ পিএম

বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে ২০টি নজরদারি রাডার স্থাপনে ভারতকে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশের উপকূলের সমগ্র নৌসীমানায় নজরদারি করতে পারবে ভারত। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর ফলে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে বিদ্যমান সম্পর্ক আছে, তাতে আঘাত লাগতে পারে। ভারতীয় মিডিয়া ও স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নৌসীমানায় নজরদারি বাড়াতে এবং ভারত-বাংলাদেশ অভিন্ন উপকূলে দৃষ্টি রাখতে এসব রাডার স্থাপন করবে ভারত। বিশেষ করে এ অঞ্চলে চীনা যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের উপস্থিতির কারণে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছে ভারতীয় মিডিয়া।
ভারত সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে শনিবার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয় নয়া দিল্লিতে। এরপর দুই দেশের মধ্যে ৭টি চুক্তি ও স্বারক স্বাক্ষরিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম উপকূলে নজরদারি বৃদ্ধির জন্য রাডার স্থাপন বিষয়ক চুক্তি।
তবে এখনও এ চুক্তিটির বিস্তারিত জানা যায় নি। ২০১৫ সাল থেকে ভারত মহাসাগরে নৌ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে ভারত ৬০০ কোটি রুপির প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে তারা রাডার স্টেশন বসিয়েছে মৌরিতিয়াস, সিসিলি, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে।
বাংলাদেশ উপকূলে ভারতের রাডার স্থাপন প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপ নয় বাংলাদেশ। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের খুবই ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান। এ নিয়ে চীন কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেবে তা ভেবে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। ওদিকে সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন অর রশিদ বলেন, যেসব টার্মস এবং রেফারেন্সের ওপর নির্ভর করে চুক্তিটি করা হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে নজরদারি ব্যবস্থা। হতে পারে এর মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারীদের চেক করা অথবা গোয়েন্দা কাজে ব্যবহার করা হবে ওই রাডার ব্যবস্থা। তবে চুক্তিটির এখনও বিস্তারিত জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। এই চুক্তি থেকে বাংলাদেশ কি উপকার পাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চুক্তিটির বিস্তারিত প্রকাশ করার পরে তা জানা যাবে।
ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে যুক্ত চীনের অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে ভারত। কারণ, ওয়ান বেল্ট ওয়াল রোড ইনিশিয়েটিভ অতিক্রম করেছে পকিস্তান, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্য দিয়ে। আঞ্চলিক পর্যায়ে ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে চীনের ওই প্রকল্প। পারস্য মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ভারত যে তেল আমদানি করে তার শতকরা ৭০ ভাগের বেশি আসে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল দিয়ে। আর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলবর্তী উপকূলীয় রাষ্ট্রগুলোতে রয়েছে ভারতের শতকরা ৪০ ভাগ বাণিজ্য।
ওদিকে ২০১৩ সালে চীনা দুটি সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ। এর সমালোচনা করেছে ভারতীয় মিডিয়া। তারা একে বলেছে, ভারতের জন্য উস্কানিমূলক কর্মকান্ড। চীনা প্রযুক্তির সহযোগিতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করছে। সে বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ হার্ডওয়্যারের উৎস চীন। তাই চীনের প্রভাব কমাতে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব করেছে ভারত। তাদের কাছ থেকে ২০১৭ সালে সম্পাদিত সমঝোতা স্বারক অনুযায়ী সাপ্লাই ক্রেডিট সিস্টেমে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য এই ঋণ দেয় ভারত। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখনও ওই ঋণ ব্যবহার করে নি।
আগস্টে ওই ঋণ ব্যবহার করে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই অনুরোধ করেন। সেপ্টেম্বরে ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বাংলাদেশকে তথ্য শেয়ার, সরঞ্জাম উৎপাদন ও শিপ বিল্ডিংয়ে আরো সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান ভারতের নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল করমবীর সিং। তিনি ওই সময় বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দেন যে, ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য এই অঞ্চল হলো নৌসীমানায় যুক্ত থাকার প্রাণকেন্দ্র।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন-বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ