পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা ও যাত্রী হয়রানির বিষয়টি নতুন নয়। এ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। বছরের পর বছর ধরে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছে বিমানবন্দরটি। এই বন্দর দিয়ে প্রতিনিয়ত বিমানের উঠা-নামা, যাত্রী সংখ্যা এবং সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেলেও সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। এদিকে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। ১৯৮০ সালে যাত্রা শুরু করা বিমানবন্দরটিতে এখন বছরে প্রায় ৯০ হাজার বিমান উঠা-নামা করে। প্রতিদিন গড়ে উঠানামা করে ১৩০টি। বছরে প্রায় ৯০ লাখ যাত্রী যাতায়াত করে। সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যদিয়ে এই বিশাল সংখ্যক মানুষ যাতায়াত করছে। বিভিন্ন সমস্যা ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিপুল সংখ্যক বিমানের উঠা-নামার বিপরীতে বোর্ডিং ব্রিজ রয়েছে মাত্র ৮টি। ফলে বেশিরভাগ বিমানকে সময় মতো বোর্ডিং ব্রিজ দিতে পারে না কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় উপায় না থাকায় বে-এরিয়া দিয়ে যাত্রী উঠা-নামা করতে বাধ্য হচ্ছে বিমানগুলো। এতে সময় বেশি লাগার পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীরা। বয়স্ক ও শারিরীকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে, ইমিগ্রেশন হয়রানি, অপ্রতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মানহীন টয়লেট। দেশি-বিদেশি সব যাত্রীরই এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শুধু শাহজালাল বিমানবন্দরই নয়, দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও একই পরিস্থিতি বিরাজমান। এতসব সমস্যার মধ্য দিয়েই চলছে বিমানবন্দরগুলো। কর্তৃপক্ষ কেবল বলছে, সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বাস্তবে কোনো সুবিধা যাত্রীরা পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে একটি দেশের গেটওয়ে বলা হয়। বিমানবন্দরের চেহারা, সুযোগ-সুবিধা ও সেবার মানের ওপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমর্যাদার প্রকাশ ঘটে। আমাদের যে কয়টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে সেগুলোর যাত্রীসেবার মান এতটাই বেহাল যে, তা বিশদ উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া হয়, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর মানে এর মধ্য দিয়ে যাতায়াত আরামদায়ক ও মসৃন হবে। যাত্রীদের যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের ব্যবস্থাই করে থাকে। তারা জানে, বিমানবন্দরে যাত্রীদের ন্যূনতম সমস্যা হলে তা দেশের ভাবমর্যাদার জন্য ক্ষতিকর। ফলে তারা যাত্রীসেবা নিয়ে তটস্থ থাকে। এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়, আমাদের দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে। এ চিত্র নতুন না হলেও এবং এ নিয়ে প্রতিনিয়ত লেখালেখি হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো টনকই নড়ছে না। কোনো ঘটনা ঘটলে বা হইচই হলে কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা বলতে শুরু করে। এই উন্নয়ন কবে হবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। কর্তৃপক্ষের ভাবটা এমন যে, বন্দরের নানা অনিয়ম ও অসুবিধা নিয়ে কিছুদিন হইচই হবে, তারপর তা আড়ালে চলে যাবে। যত সমস্যাই থাকুক যাত্রীদের এসব বিমানবন্দর দিয়েই যেতে হবে। এ ধরনের বেপরোয়া মানসিকতা অত্যন্ত দুঃখজনক। যে যাত্রীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা ট্যাক্স নিচ্ছে, তা নিতে কর্তৃপক্ষের কোনো দ্বিধা হয় না। যাত্রীরা ট্যাক্স দেবে, বিপরীতে যথাযথ সেবা পাবে না, এটা কেমন কথা! বিমানবন্দরে তো যাত্রীরা থাকতে বা বসবাস করতে যায় না। তারা যাতায়াত করে। কাজেই এই যাতায়াতের সামান্য সময়টুকুতে কি তাদের স্বস্তি ও আরামের ব্যবস্থা করা যায় না? বিশ্বের কোনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন অসুবিধা ও অনিয়ম কল্পনাও করা যায় না। আমরা যদি কলকাতা বিমানবন্দরের কথাই ধরি, তাহলেও দেখা যাবে একটি রাজ্য হয়েও এর বন্দরে যাত্রীসেবা বিশ্বমানের। দুঃখের বিষয়, আমরা কলকাতার চেয়েও পিছিয়ে আছি। বলা হচ্ছে, শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে ২৪ লাখ বর্গফুট জমির ওপর তৃতীয় টার্মিনাল করতে যাচ্ছে সরকার। এ টার্মিনাল নির্মিত হলে বছরে যাত্রী সক্ষমতা দাঁড়াবে দুই কোটিতে। ২০২৩ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, টার্মিনাল সম্প্রসারণ করলেই কি যাত্রীসেবা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে? যদি বন্দর পরিচালনায় নিযুক্তদের যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে আচার-আচরণ না বদলায় তাহলে তো পুরণো এসব সমস্যা থেকেই যাবে। মূল কথা হচ্ছে, বন্দর সম্প্রসারণ করলেই হবে না, যাত্রীসেবার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে বন্দর যতই বড় করা হোক, বদনাম ঠিকই থেকে যাবে।
সীমিত পরিসরেও যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে এবং বন্দরে নিযুক্তদের আন্তরিক আচার-আচরণের মাধ্যমে যাত্রীদের মন জয় করা কোনো অসম্ভব বিষয় নয়। সমস্যার মধ্যেও যদি তাদের আচরণ অতিথিপরায়ণ হয়, তবে যাত্রীরাও বন্দরের সুযোগ-সুবিধার অভাবের কথা ভুলে যায়। তারাই পারে বিমানবন্দরগুলোকে যাত্রীবান্ধব করে তুলতে। অপ্রতুল সুযোগ-সুবিধা, তার ওপর যদি বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আচার-ব্যবহার খারাপ হয়, তখন যাত্রীদের কষ্টের সীমা থাকে না। আমরা মনে করি, বিদ্যমান সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থাপনা এবং সংশ্লিষ্টদের অতিথিপরায়ণতার বিষয়টির দিকে জোর দেয়া উচিত। মালামাল চেকিং হবে, তবে তার নামে হয়রানি কাম্য হতে পারে না। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, অনেক যাত্রীর লাগেজ কেটে মালামাল চুরি হয়ে যেতে। প্রিয়জনদের জন্য নিয়ে আসা মালামাল কে বা কারা লাগেজ কেটে রেখে দিচ্ছে। এ ধরনের কর্ম অত্যন্ত গর্হিত ও অনৈতিক। বিমানবন্দরের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারি যে এসব অপকর্মের সাথে জড়িত, তাতে সন্দেহ নেই। এই অসদাচরণ থেকে তাদের বের হয়ে আসতে হবে। যাত্রীরা তাদের সম্মানিত মেহমান। তাদের সেবা দেয়াই তাদের দায়িত্ব। বন্দরে কর্মরতদের এই মানসিকতা ধারণ করতে হবে। তাদের শুধু দায়িত্ব পালন করলে হবে না, দেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তাদের আচার-আচরণের ওপরই দেশের মানসম্মান অনেকাংশে নির্ভরশীল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।