Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তরপ্রদেশে ‘বাংলাদেশি’দের শনাক্ত করে তাড়ানোর নির্দেশ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২ অক্টোবর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

‘বাংলাদেশি’ এবং অন্যান্য ‘বিদেশি’-দের শনাক্ত করে ভারত থেকে বিতাড়ন করতে উত্তরপ্রদেশের পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে যোগী সরকার। রাজ্যটিতে পুলিশকে যেভাবে ‘বাংলাদেশি’ এবং ‘অন্যান্য বিদেশি’ চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে তাতে অনেকেই এর মধ্যে আসাম এনআরসির ছায়া দেখছেন।
রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’, উত্তরপ্রদেশের পুলিশের মহানির্দেশক সমস্ত জেলা পুলিশ প্রধানকে চিঠি দিয়ে এ কথা বলেছেন। নির্বাসনটি ‘নির্দিষ্ট সময়সীমাবদ্ধ’ এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে, বলে জানান উত্তরপ্রদেশ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা। তবে যোগী রাজত্বে এই নতুন নির্দেশ মনে করাচ্ছে আরেক বিজেপি-শাসিত রাজ্য আসামকে। সে রাজ্যে সংশোধিত নাগরিক তালিকা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ। আসামে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ প্রয়োগের ফলে সে রাজ্যের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে প্রায় ১৯ লাখ মানুষের নাম। তারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে তাদের রাজ্য থেকে বিতাড়িত করা হবে।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে সমস্ত জেলার উপকণ্ঠে ট্রান্সপোর্ট হাব এবং বস্তি অঞ্চলগুলিতে সন্দেহজনক কোনও ব্যক্তিকে মনে হলেই তার সমস্ত নথি যাচাই করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে এমন সরকারি কর্মচারীদেরও সন্ধান করতে বলা হয়েছে যারা ‘বিদেশিদের’ জন্য জাল দলিল প্রস্তুত করতে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশি বা অন্যান্য বিদেশি হিসাবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের আঙুলের ছাপও নেওয়া হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে সমস্ত নির্মাণ সংস্থাগুলিকে জানানো হয়েছে যে সমস্ত শ্রমিকের পরিচয়ের প্রমাণপত্র রাখা তাদের দায়িত্ব।
গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আসাম এনআরসির প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, প্রয়োজনে তিনি তার রাজ্যেও একই রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আসাম এনআরসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আসামে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে হওয়া নাগরিকের তালিকাটি অবশ্য অন্যরকম ছিল। কারণ আসামে কারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কে বাংলাদেশ বা প্রতিবেশী অঞ্চল থেকে এসেছিলেন তা নির্ধারণের লক্ষ্য হিসাবে এটি করা হয়েছিল। যারা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার একদিন আগে ১৯৭১ সালের ২৪ শে মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত আসামের বাসিন্দা ছিলেন তারা যদি তা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে এনআরসিতে তাদের নাগরিক হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, আসামে নাগরিকপঞ্জি তৈরি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স-এর তত্ত্বাবধানে। সেখানে প্রতিটি নাগরিকের সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য নেয়া হয়েছে। তার পর সেই সব দলিল সরকারি দলিলের সঙ্গে মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চ‚ড়ান্ত তালকা তৈরি হয়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে এটি কোন প্রক্রিয়ায় চিহ্নিত করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। সব নাগরিকের তথ্য যাচাই হবে কিনা, সে সব নিয়েও কোনও উচ্চবাচ্য নেই। শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে কারো নথিপত্র চাওয়া এবং পরীক্ষা করে দেখা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।

আবার চিহ্নিতদের ফেরত পাঠানোর কথাও বলেছে যোগীর প্রশাসন। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, অন্য দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি সময় সাপেক্ষ এবং দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের আলোচনার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু একটি রাজ্য সরকারের প্রশাসন কী ভাবে অন্য দেশে ফেরত (পুশ ব্যাক) পাঠানোর কথা বলতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছাড়া এই প্রক্রিয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া এই প্রক্রিয়ার ফলে উগ্র প্রাদেশিকতাও উস্কে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। সূত্র: এনডিটিভি, টিওআই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ