কমিউনিস্ট শাসনের দীর্ঘ ৭০ বছর পূর্তিতে চীনা ইতিহাসের অন্যতম বড় সামরিক কুচকাওয়াজ ও নিজেদের তৈরি বিপুল সংখ্যক সমরাস্ত্রের প্রদর্শনী করতে যাচ্ছে বেইজিং। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী মঙ্গলবার তিয়ানআনমেন স্কয়ারের এ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সেখানে দেশটির প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, জনগণের মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু ব্যক্তি এবং ৯৭টি দেশের সামরিক অ্যাটাশেরা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছন, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বেইজিং ‘পেশীশক্তি’ প্রদর্শন করছে না বা এর প্রয়োজনীয়তাও দেখছে না তারা। এর মাধ্যমে তারা ‘শান্তিকামী ও দায়বদ্ধ চীনকে’ উপস্থাপন করবে।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামরিক বাহিনীর ৫৯টি পৃথক বিভাগের ১৫ হাজার সদস্য এবারের কুচকাওয়াজে অংশ নেবেন। ৫৮০টি সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শনী থাকবে, উড়ানো হবে ১৬০টি যুদ্ধবিমান। কুচকাওয়াজে চীনের আট হাজার সদস্যের শক্তিশালী শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি দলও প্রথমবারের মতো অংশ নেবে।
বিবিসি জানিয়েছে, চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে বানানো নতুন ক্ষেপণাস্ত্র, স্টিলথ ও মনুষ্যবিহীন যন্ত্রের সক্ষমতার এ প্রদর্শনী নিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) খুবই আগ্রহী। এতে সড়কে সহজে পরিবহনযোগ্য ডিএফ-৪১ আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের অত্যাধুনিক ভার্সনটি প্রথমবারে মতো প্রদর্শন করা হবে। চীনা সমর বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, এ মারণাস্ত্রটি বিশ্বের যে কোনও জায়গায় আঘাত হানতে এবং একইসময়ে ১০টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আক্রমণে সক্ষম।
প্রদর্শনীতে রাশিয়ার অ্যাভানগার্দ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনার মতো হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা ডিএফ-১৭রও দেখা মিলবে। জাহাজ ও বিমানবিধ্বংসী নতুন নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি থাকবে দূরপাল্লার একাধিক রকেট লঞ্চারের উপস্থিতি। দ্রæতগতিসম্পন্ন নজরদারি ও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ডি-৮ এবং ‘শার্প সোর্ড’খ্যাত দুটি মনুষ্যবিহীন ড্রোনও দেখাবে তারা।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই তারা একটি ‘শক্তিশালী সামরিক বাহিনী’ বানাচ্ছে, যা একইসঙ্গে বিশ্বের প্রধান প্রধান সামরিক বাহিনীগুলোর সক্ষমতার সঙ্গে তাদের দূরত্ব কমিয়ে আনবে।
গত এক দশকে দেশটি প্রতি বছরই তাদের সামরিক বাজেট ১০ শতাংশ করে বাড়িয়েছে; এ বছর তাদের সামরিক বাজেট দাঁড়িয়েছে ১৬৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে দেশটি কেবল সমরাস্ত্রের পরীক্ষানিরীক্ষা এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নেই ৫৬ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। দেশটির সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা শ্বেতপত্রে এ ব্যয়কে ‘যুক্তিসঙ্গত ও উপযুক্ত’ অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এশিয়া প্যাসিফিক নিরাপত্তা বিষয়ক শাংরি-লা ডায়লগের জ্যেষ্ঠ ফেলো আলেক্সান্ডার নেইল বলেন, ‘কুচকাওয়াজে অত্যাধুনিক অনেক মারণাস্ত্র প্রদর্শন করতে পারলেও চীন এখনও সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কয়েক দশক পিছিয়ে আছে।’