পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়েছে। রাজনীতির কথা শুনলে অনেকেই নাক ছিটকান এই বলে যে, রাজনীতি বা রাজনীতিবিদরাই সব শেষ করলো। অনেক অনাচার, অবিচার, স্বেচ্ছাচারিতা, অত্যাচার, ধ্বংস, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বৈরতন্ত্রের অনুশীলন রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, মানি লন্ডারিং প্রভৃতির জন্য রাজনীতি নয়, বরং উচ্চ বিলাসী রাজনীতিবিদরাই (মিডিয়ার ভাষায় হাইব্রিড) দায়ী, যারা ক্ষমতায় একবার অধিষ্ঠিত হতে পারলে ভিন্ন মতাবলম্বীদের ধ্বংস করার জন্য যত প্রকার আইন কানুন, কূটকৌশল প্রভৃতি চরম পর্যায়ে পৌঁছলেও মাটি ও মানুষ থেকে উঠে আসা রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের দ্বারাই বিশ্বের শোষিত মানুষের মুক্তি এসেছে। ফলে একদিকে বর্ণচোরা রাজনীতিবিদদের দ্বারা যেমন রাজনীতি কুলষিত হয়েছে, অন্যদিকে অনেক রাজনীতিবিদ নিষ্ঠার সাথে মানুষকে ভালোবেসে দেশ ও জাতিকে আলোর মুখ দেখিয়েছেন। তবে লুটেরাদের সংখ্যাই বেশি যাদের হাতে এখন রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ। যেখানে রাজনীতির চর্চা হয় অর্থাৎ গণতন্ত্র আপন গতিতে চলে যেখানে, সেখানে লুটপাট করার রাস্তাটি প্রশস্ত থাকে না। রাষ্ট্র, দেশ ও জাতি তথা শাসন ব্যবস্থায় একটি চেক এন্ড ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি তথা সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক গণতান্ত্রিক রাজনীতির একটি ক্ষেত্র অপরিহার্য, যে ক্ষেত্রটি বি-রাজনীতি হওয়ার কারণে ব্যাংক লুটেরা, ভ‚মিদস্যু, টাকাওয়ালা, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জুয়াড়ীদের নিয়ন্ত্রণে রাজনীতি চলে গেছে।
সম্প্রতি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের দুর্নীতির ফলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর হস্তক্ষেপ একটি ব্যতিক্রমধর্মী পদক্ষেপ, তা অবশ্যই স্বীকার করতে হয়। যদিও ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতা আমার নাই, তথাপি সুস্থ ধারায় প্রতিযোগিতামূলক ছাত্র রাজনীতির আমি একজন সমর্থক। যে বয়সে একজন মানুষ ছাত্র রাজনীতি করে সে বয়সে আমি খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সংগঠনে নিজেকে সম্পৃক্ত করি। অতিশয় ভদ্রলোকদের দৃষ্টিতে সে সংগঠনগুলি অতি নিন্মশ্রেণিভুক্ত মানুষের সংগঠন, যেমন- রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন, ঠেলাগাড়ী শ্রমিক ইউনিয়ন, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন, ইটভাটা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রভৃতি সংগঠন, যার সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে হয়েছে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন বস্তিতে বস্তিতে। যেহেতু ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতা আমার নাই এবং যেহেতু তর্কিত ছাত্র সংগঠনটির বিপরীত ধারায় রাজনীতিতে আমি সম্পৃক্ত সেহেতু উক্ত সংগঠনের ভাগ্যাহত নেতাদের নিয়ে কথা বলার চেয়ে বর্তমান ছাত্র রাজনীতির অনুশীলন নিয়ে কথা বলাটাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য।
অভিযোগ উঠেছে যে, সংগঠনটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের নিকট থেকে প্রকল্পের মোট বরাদ্দের ৬% টাকা চাঁদা দাবি করেছেন, যার মধ্যে ঈদ সেলামী বাবদ ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ইতোমধ্যে উপাচার্য পরিশোধ করেছেন। সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের ৬% পারসেন্ট বখরা/চাঁদা/সেলামী দাবির কথা শুনলে যে কোন বিবেকমান মানুষের চোখ যেমন কপালে উঠে তেমনি ভিসি কর্তৃক ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা পরিশোধ (পত্রিকার ভাষ্য মতে) নৈতিকতার প্রশ্নে কতটা ধিক্কারজনক সহজেই অনুমেয়। এ মর্মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য (অধ্যাপক আরেফিন) সরকারি ঘরনার হয়েও বলেছেন যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই বিদ্যমান রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যেক ঘটনায় দেখা যায় যে, ভিসির একটি নিজস্ব বাহিনী থাকে। তবে প্রেক্ষাপট বলে যে, এ অবস্থা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, বরং সারা দেশেই বিদ্যমান; প্রশাসন ও রাজনীতি অঙ্গন যার অধিক্ষেত্র অনেক বড়। যে সরকার দুর্নীতির বিষয়ে যত বেশি কথা বলেছে সে সরকারের দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হওয়ার ইতিহাস তত বড়, এ কথা নতুন কিছু নয়। ১/১১ সরকারের নায়কেরাও এ তালিকা থেকে বাদ যায় না। উক্ত সময়ে টাস্কফোর্স দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে, কিন্তু দুর্নীতির তালিকা থেকে নাম কাটানোর জন্য ব্যাপক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে, কপাল পুড়েছে তাদের, যারা তৎকালীন দুর্নীতি দমন টাস্কফোর্সকে ম্যানেজ করতে পারেনি। ডিমান্ড এতো বেশি ছিল যে, চাহিদাপূরণ করে ম্যানেজ করাও ছিল দুরুহ ব্যাপার। ট্রুথ কমিশন গঠন করা হয়েছিল, যাদের অর্থকড়ি ছিল তারা কমিশন নির্ধারিত অর্থ জমা দিয়ে বেঁচে গেছেন, যা পরবর্তীতে হাইকোর্ট অসাংবিধানিক পন্থা বলে ঘোষণা করে।
বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় চাঁদাবাজি হওয়ার বিষয়টি যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য চাঁদা বা বখরা দিবেন কেন? এর পিছনে কী রহস্য রয়েছে? উক্ত টেন্ডার কাজে উপাচার্যের নিশ্চয় ভাগ বাটোয়ারা রয়েছে, নতুবা উপাচার্য ছাত্রদের নিকট নতজানু কেন হচ্ছেন? প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য নিয়োগ হয়, এ পদ্ধতি পূর্বেও ছিল, তবে এখন তারা দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন পাল্লা দিয়ে, টার্গেট শুধু ভিসি পদ বাগানোসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা আদায় করা। মেরুদন্ডহীন শিক্ষকরা যোগ্যতার ভিত্তিতে না হয়ে তদবিরভিত্তিক রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্যের পদপদবী দখল করেন বিধায় তাদেরকে সরকারি দলের ছাত্র নেতাদের নিকট নতজানু থাকতে হয়। মেরুদন্ড সোজা থাকলে এ ধরনের ছাত্র সমস্যা বা নেতাদের চাঁদাবাজি কোনো সমস্যা নয়। এ মর্মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপিকা নূসরাত শিমু একটি বক্তব্য দিয়েছেন, তার বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। অন্যান্য বক্তব্যের মধ্যে তিনি বলেছেন যে, ‘ছাত্রনেতাদের এতোটা ক্ষমতাধর ভেবে তোষামোদী, ভাগ বাটোয়ারা, কমিশন দেয়া এসব আমাদের বাদ দিতে হবে। ক্ষমতার লোভে বড়রা (রূপক অর্থে নয়, আক্ষরিক অর্থেই) যদি ছোটদের তোষামোদী করে, তাহলে ছোটরা আসকারা পেয়ে একসময় লাগামহীন ঘোড়া হবে, শীর্ষ নেতৃত্বের প্রতি শিষ্টাচার বহিভর্‚ত আচরণ করবে, উপাচার্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, এটাইতো স্বাভাবিক।’
বাংলাদেশের রাজনীতি, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, সামাজিক অভিব্যক্তি সব কিছুই চলছে এখন তোষামোদীভিত্তিক। তোষামোদী এমনি একটি বিষয় যে, মোটামুটি সকলেই এটাকে পছন্দ করে, সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি তো পছন্দ করেনই, এর চেয়ে বেশি পছন্দ করেন সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিকে যারা চার দেয়ালের ভিতরে নিরাপত্তার নামে আষ্টেপৃষ্টে বন্দি করে রাখে। ‘ছাত্রলীগকে ধরার পর যুবলীগকে ধরছি’- প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের মন্তব্যের পর যখন হালে জুয়ার ক্যাসিনোতে পুলিশ ও র্যাবের অভিযান শুরু হলো, তখন যুবলীগের চেয়ারম্যান আঙ্গুল চোষার যে উপমা দিয়েছিলেন তা যথার্থই সত্য এবং সত্যের উপরে সত্য। যদিও তিনি পরে তার বোল পাল্টিয়ে নরম সুরে এখন বাহিনীদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। যুবলীগ চেয়ারম্যানের আঙ্গুল চোষার হুমকি এবং পরবর্তীতে অভিযান পরিচালনাকারীদের অভিনন্দন দুটিই সমর্থনযোগ্য। বাহিনীদের অভিনন্দন এই যে, তাদের দুঃসাহসিক অভিযানের ফলেই দেশবাসী জানতে পারলো যে, ঢাকা এখন ক্যাসিনোর রাজধানী এবং লক্ষ কোটি কোটি টাকা ক্যাসিনোর মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
তবে অভিনন্দন দেয়ার চেয়ে আঙ্গুল চোষার বক্তব্যটি আরো দ্রুব সত্য। কারণ বাংলাদেশে যত অপকর্ম সংগঠিত হয় সবই হচ্ছে গডফাদারদের ছত্রচ্ছায়ায়। র্যাব-পুলিশ যাকে সালাম দেয় তার পক্ষেই গডফাদার হওয়া সম্ভব, নতুবা নয়। বাংলাদেশে কোথায় কী অপকর্ম হয় পুলিশ-র্যাব তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব জানে এবং তাদের বখরা দিয়েই অপকর্ম চালাতে হয়। সকল টর্চারসেল তাদের নখ দর্পণে। তদুপরি মিডিয়ার ভাষ্য মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ক্যাসিনো বন্দের জন্য পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেয়া ছাড়া মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে জি.ডি করা হয়েছিল, তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কানে পানি যায়নি। যেখানে অন্যায় বা আইন ভঙ্গ হবে সেখানেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। বিষয়টি স্পষ্ট যে, মাসোহারা বা সাপ্তাহিক টোল বা দৈনিক বখরা দিয়েই আইন ভঙ্গকারীরা বেআইনী কার্যকলাপ করে অজস্ত্র অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও শহরের সরকারি দলের ক্যাডারদের এ ধরনের টর্চার সেল রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে বখরা দিয়ে জেলা উপজেলায় জুয়ার আসর চলে, যদিও জুয়া ও গণিকাবৃত্তি সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। সংবিধানের ১৮(২) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, ‘গণিকাবৃত্তি ও জুয়া খেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
ক্যাসিনো গড ফাদারদের রিমান্ডে বিভিন্ন তথ্যে রাঘব বোয়ালদের নাম বেরিয়ে এসেছে। সরকারের শুল্ক ও ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টকে ফাঁকি দিয়ে ক্যাসিনো মেশিন কীভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করলো? ক্যাসিনো ফাদারদের গ্র্যান্ড ফাদাররা এখনো রাজা বাদশা সম্রাটদের মতো বহাল তবিয়তে। তারপরও কি সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সরকারের মুখ রক্ষা না দুর্নীতি সমূলে উচ্ছেদ করায় সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ? শুধু মাত্র দেশকে লুটে খাওয়ার জন্য সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষার যারা জিকির তোলেন তারাই সেই সংবিধানের পবিত্রতা নষ্ট করে জুয়ার উপার্জিত টাকা বিদেশে পাচার করছেন। তারাই এখন নিজেদের সরকারের উপর সরকার মনে করেন এবং এ অবস্থার সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে সরকার স্বয়ং। ভোটারবিহীন নির্বাচনের জন্য পুলিশের পাশাপাশি ক্যাডারদের উপরও সরকারকে নির্ভরশীল হতে হয়েছে। এখন সরকার তার মুখ রক্ষার জন্য অভিযান করতে বাধ্য হচ্ছে, তবুও অভিযানকে স্বাগতম। তবে যাদের আইনগতভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলার জন্য দেশে ক্যাসিনো প্রতিষ্ঠিত হলো সে সকল সরকারি পোশাকধারীদের সরকার বিচারের আওতায় আনতে পারবে কি না এতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ নির্বাচনী নাটকে অর্থাৎ ভোটারবিহীন তথাকথিত নির্বাচনে যারা এ সরকারের মাথায় জয়ের মুকুট পরালো সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সরকার বিচারের আওতায় আনবে কোন মুখে? তারপরও আশার কথা এই যে, যুবলীগ চেয়ারম্যানের ভাষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর (আঙ্গুল চোষাদের) যদি বোধদয় হয় তবেই অভিযানটি কিছুটা হলেও সাফল্য লাভ করবে। তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে, গৃহপালিত নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, ক্যাডার সমন্বয়ে ২৯ ডিসেম্বর/২০১৮ রাতে ভোটের জুয়ায় সরকার সফল কাম হয়েছে। ভোট লন্ডারিংয়ের বিচারের দাবি একদিন হয়ত উঠতেও পারে।
এইচ.টি. ইমাম সরকারের পক্ষে অভিভাবকত্বসুলভ বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তিনিই এখন বড় আওয়ামী লীগার। তার মতে, গ্রেফতারকৃত ক্যাসিনো গড-ফাদারগণ যুবদল, বিএনপি করতো। এর মধ্যে একজন ফ্রিডম পার্টি করতো বলেও জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠে, সরকারি দল কত টাকার বিনিময়ে বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টিকে তাদের দলে ভিড়িয়েছে। এইচ.টি. ইমামরা যে দলের নাম শুনতে পারেন না, তাদের নিকট নিজ দলের বড় বড় পদ বিক্রি করেন কত টাকার বিনিময়ে, এ প্রশ্নগুলিরও মীমাংসা হওয়া দরকার। তবে টাকা দিলেই যে রাজনৈতিক দলের নেতা ক্রয় করে ভালো পদ শিকার করা যায় এটাও তার একটি প্রমাণ। অন্যদিকে কোরবানির হাটের মতো দেশের সকল বিশেষ করে বড় বড় রাজনৈতিক দলের হাট চাঁদরাত (অর্থাৎ নমিনেশন দাখিল পর্যন্ত) পর্যন্ত খোলা থাকে। ফলে হাটের গরুর মতো (নীতি আর্দশের তোয়াক্কা না করে) রাজনৈতিক দল নেতা বেচা-কেনা চালিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিও রাজনীতিকে কুলষিত করেছে।
জাতীয় পত্রিকার ভাষ্য মতে ও সচিত্র প্রকাশিত খবরের মর্ম মতে, গ্রেফতার অভিযানে অভিযানকারী কর্মকর্তারা জুয়ারি গডফাদারদের এমন এমন স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সাথে দেয়ালে সাঁটানো ছবিতে এমন আন্তরিকতা দেখা গিয়েছে যা না দেখলে বিশ্বাসই করা যেতো না যে, পর্দার আড়ালে বা কাদের ছত্রচ্ছায়ায় গডফাদারা এ অপরাধগুলি চালিয়ে গেছে। পত্রিকায় আরো সংবাদ বেরিয়ে আসছে যে, মূল হোতারা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এটা কিসের আলামত? সমঝোতা না নাটকীয়তা? এ প্রশ্নগুলির পরিসমাপ্তি সরকারের সদিচ্ছার উপরে নির্ভর করে। সরকারের ভবিষ্যত কর্মকান্ড থেকেই বুঝা যাবে যে, অভিযানের শিকড় কতটুকু গভীরে প্রবেশ করবে। টাকার প্রভাবে রাজনৈতিক পরিবেশ কুলষিত হওয়ার কারণেই গডফাদাররা রাজনৈতিক অঙ্গনকে দখল করে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে দেউলিয়া করে ফেলেছে। খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে, ব্যাংকগুলিতে টাকা নাই। সরকারি ছত্রচ্ছায়ায় যদি ক্যাসিনো চলে, ব্যাংকে টাকা থাকবে কী করে? এ কারণেই দেশের গরিব দিন দিন গরিব হচ্ছে, ধনীরা হচ্ছে আরো ধনী। পাকিস্তানি ২২ পরিবারের স্থলে সৃষ্টি হয়েছে ২২শত পরিবার। ভ‚মিদস্যুদের হাতে গরিবের চাষাবাদের জমি চলে যাচ্ছে। সংবিধানের ১৮(২) ধারা মোতাবেক পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর প্রদান করা হলেও ভূমিদস্যুদের বিষয়ে রাষ্ট্র নির্বাক, যেমনটি ছিল ক্যাসিনোর বিষয়ে। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক যে অবস্থা বিরাজমান তাতে মধ্যবিত্ত পরিবার আর থাকবে না, থাকবে শুধু উচ্চ বিত্ত আর অন্যদল পরিচিত হবে শ্রমজীবী হিসেবে। রাষ্ট্র ষড়যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে, না রাষ্ট্র ব্যবস্থাপকরা নিজেই ষড়যন্ত্র করছে, এটাই এখন দেখার বিষয়।
লেখক: কলামিস্ট ও আইনজীবী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।