পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি অভিভাবকদের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তারা সন্তানের পড়াশোনার ক্ষেত্রে এসব বিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিভিন্ন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কিন্ডার গার্টেনের প্রতি বেশি আগ্রহী। এর মূল কারণ, সরকারি যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগের পড়ালেখার মান, পরিবেশ এবং অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি অভিভাবকদের এই অনীহা থেকেই বোঝা যায়, প্রাথমিক স্তরে দেশের শিক্ষার মান কতটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। অথচ সরকার প্রাথমিক পর্যায় থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে স্কুল মিল থেকে শুরু করে বৃত্তিসহ নানা সুবিধা চালু করেছে এবং করছে। তারপরও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতি শহরের অধিবাসীদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তারা সন্তানের সঠিক ও মানসম্পন্ন পড়ালেখা নিশ্চিত করার জন্য অধিক খরচ এবং কষ্ট করে হলেও বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, শহরে যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, বাস্তবে সেগুলোর চিত্র দেখলে সচেতন কোনো অভিভাবকই সন্তানকে তাতে ভর্তি করাতে রাজি হবে না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই চিত্র বছরের পর বছর অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না।
একটা সময় সরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা লাগত। সন্তানকে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারলে অভিভাবকরা নিশ্চিন্ত হয়ে যেতেন এবং গর্বও করতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে এমন অনেক স্কুল ছিল যেগুলোর সুনাম দেশব্যাপী ছিল। এসব স্কুলে যারা পড়াশোনা করেছেন, এখনও তারা গর্ব করে স্কুলের নাম উচ্চারণ করেন। দেখা যেত এসএসসি বা অন্যান্য পাবলিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরাই প্রথম সারিতে থাকত। আমরা যদি ঢাকা গভ: ল্যাবরেটরি স্কুলের কথাই ধরি, তাহলে তার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, একটা সময় এই স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ছিল সোনার হরিণের মতো। যে শিক্ষার্থী এই স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেতো তাকে নিশ্চিতভাবেই মেধাবী হিসেবে বিবেচনা করা হতো। স্কুলটিও বোর্ড পরীক্ষায় বরাবরই এগিয়ে থাকত। এখন সেই ঐতিহ্য নেই। শুধু এই স্কুলই নয়, রাজধানীসহ অন্যান্য জেলা শহরের সরকারি স্কুলগুলোও ছিল প্রথম সারিতে। বলা বাহুল্য, আগে সন্তানের প্রাথমিক পড়ালেখার বিষয় নিয়ে অভিভাবকদের তেমন কোনো চিন্তা ছিল না। কারণ তারা জানত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এবং সেখানে ভর্তি করালে চিন্তার আর কিছু নেই। এখন যারা সরকারি কর্মকর্তা এমনকি যেসব অভিভাবক রয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাই স্কুলগুলো থেকে পড়াশোনা করেই মানুষ হয়েছেন। দুঃখের বিষয়, কালক্রমে এই প্রাথমিক ও হাই স্কুলগুলো ঐতিহ্য হারিয়ে ম্লান হয়ে পড়েছে। বোর্ড পরীক্ষায় এসব স্কুলের ভাল ফলাফলের খবর খুব একটা পাওয়া যায় না। বেসরকারি স্কুল-কলেজগুলোই প্রথম সারিতে থাকে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সরকারি স্কুলগুলোর প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের তেমন কোনো দৃষ্টি নেই। আগের সুনাম কেন হারিয়ে গেল, এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। শিক্ষকদের মধ্যেও স্কুলের সুনাম ধরে রাখা বা বৃদ্ধির তেমন কোনো তাকিদ দেখা যায় না। এর কারণ হতে পারে, তারা নিজেদের আদর্শ শিক্ষক না ভোবে সরকারি চাকরিজীবী মনে করে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা হলো কি হলো না, মাস শেষে ভাল বেতন তো পাচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, রাজধানীর অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর খোলা জায়গা দখল হয়ে আছে। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে ওয়াসার ডিপ টিউবওয়েল, সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন, দোকানপাট এমনকি কাঁচাবাজার পর্যন্ত বসানো হয়েছে। এই যদি হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ, তাহলে সেখানে অভিভাবকরা কেন তার সন্তানকে ভর্তি করাবে? অথচ সরকার এসব স্কুল পর্যাপ্ত জায়গা দিয়ে গড়ে তুলেছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা এবং অবাধে চলাফেরার সুযোগ রাখা হয়েছে। এগুলোতে এখন শিক্ষার পরিবেশ বলতে কিছু নেই।
সরকার প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা ও উদ্যোগ নিলেও রাজধানীসহ জেলা শহরের প্রাথমিক স্কুলগুলোর শিক্ষার পরিবেশ এবং মানের বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। বিষয়টি আমলে নিলে রাজধানীসহ অন্যান্য জেলা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি অভিভাবকদের অনীহা থাকত না। সরকার বিনাবেতনে পড়াশোনার সুযোগ করে দিলেও শিক্ষার পরিবেশ ও মানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। যদি পারত তবে কোনো অভিভাবকই উচ্চ খরচে সন্তানকে বেসরকারি স্কুলে পড়াত না এবং বিনাবেতনে মানস্পন্ন শিক্ষার সুযোগ হাতছাড়া করত না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, সরকারি এসব স্কুলের প্রতি অভিভাবকরা যদি আগ্রহী না হয়, তবে সরকারের এত অর্থ ব্যয় করে কী লাভ হচ্ছে? সরকারের ইপ্সিত লক্ষ্য হাসিল না হলে বছরের পর বছর হাজার হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দেয়া হচ্ছে কেন? আমরা মনে করি, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর দিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এসব স্কুলের শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি অভিভাবকদের আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে হবে। যেসব স্কুলের জায়গা দখল করা হয়েছে, সেগুলো উচ্ছেদ করে প্রত্যেকটি স্কুলকে আদর্শ বিদ্যালয়ে পরিণত করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।