Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বেআইনি

বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে বেআইনী হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নিজেদের ব্যর্থতা ও অপকর্ম ঢাকার জন্য ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন ইসলামী ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চায়। এটা ইসলামের উপর মারাত্মক আঘাত। রাষ্ট্রে যেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, সেখানে ঢাবি ক্যাম্পাসে তা কিভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে ?

খেলাফত মজলিস : ঢাকসুর বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে খেলাফত মজলিসের আমীর প্রিন্সিপাল­­ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, ডাকসুর বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বেআইনী। দেশের সংবিধানে সকল নাগরিককে মত প্রকাশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। ডাকসু দেশের নাগরিকদের সেই সাংবিধানিক অধিকার কেঁড়ে নিতে পারে না। ডাকসুর এ ধরণের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যকে ¤øান করে দিবে।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন সরকারের ছাত্র সংগঠন শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরণের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। সরকার দলীয়দের ছত্রছায়ায় ক্যাসিনোর নামে মদ, জুয়া, হাউজিতে সয়লাব দেশ। সম্প্রতি নৈতিক অপরাধের কারণে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নেতৃদ্বয় ঢাকসুর বৈঠকে গৃহীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মভিত্তিক ছাত্র সংগঠনের তৎপরতা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করে ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতকরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।

ইসলামী আন্দোলন মহানগর উত্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে সংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এখতিয়ার ডাকসু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেই। রাষ্ট্রে যেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, সেখানে ঢাবি ক্যাম্পাসে তা কিভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে? তিনি গতকাল শুক্রবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তরের নিয়মিত বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগর সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হুসাইন, সেক্রেটারী মাওলানা আরিফুল ইসলামসহ নগর নেতৃবৃন্দ।

তিনি বলেন, দেশের জনগণ ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নয়; বরং সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজি নির্ভর রাজনীতি নিষিদ্ধ চায়।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ‘ক্যাসিনো-স¤্রাটরা’ সম্পদের পাহাড় গড়েছে। ক্যাসিনো নিষিদ্ধ হলেও বিদেশে থেকে ক্যাসিনো সামগ্রি কিভাবে আমদানি করা হলো এবং প্রশাসনের নাকের ডগায় কিভাবে ক্যাসিনো বাণিজ্য চলেছে তা জনগণ জানতে চায়।

ইসলামী ঐক্যজোট : ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী ঢাকা বিশ্বব্যিালয়ে ধর্মভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, এই ঘোষণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী ।

তিনি বলেন, তদানিন্তন পূর্ববাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ ও অবহেলিত মুসলিম জনগণের ইসলামী রাজনীতি ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, বিশ্বাস, রীতি-নীতি, মূল্যবোধ, ধর্মীয় বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধ ধারণ, চর্চা ও অনুশীলনের পথ প্রশ্রস্ত করার জন্যে নবাব সলিমুল্লাহর অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই লক্ষ্যে প্রথম থেকেই ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ইসলামিক ষ্টডিজ শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়। তাই বলা যায় ডাকসুর এই সিদ্ধান্ত ঐ গোষ্ঠীর সুর, চিন্তা ও আকাঙ্খার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মক্কা ইউনিভার্সিটি ও মদীনা ইউনিভার্সিটি হিসেবে অভিহিত করে উপহাস ও মশকরা করতেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মীয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ঘোষণা সংবিধান পরিপন্থী। কেননা সংবিধানে ধর্মীয় রাজনীতি ও সংগঠন করার অধিকার স্পষ্টভাবে চিহ্নিত।
তিনি বলেন, এই ঘোষণায় ডাকসুর অনৈসলামী চিন্তা-চেতনার স্বরুপ উন্মোচিত হয়েছে। অবিলম্বে এই অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

তালামীযে ইসলামিয়ার বিবৃতি : বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি আখতার হোসাইন জাহেদ ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূনুর রহমান লেখন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার কেন্দ্রস্থল। কোন ধর্ম বা মতাদর্শকে বাদ দিয়ে আদর্শ শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রয়েছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অবদান। ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত বামপন্থি ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর দাবি বাস্তবায়নেরই নামান্তর।

স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ও উগ্রবাদ দমনের নামে ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ও অনধিকার চর্চা। তাই ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ নয় বরং সকল মত ও মূল্যবোধ চর্চার পথ সুগম রেখে গণতান্ত্রিক ও আদর্শ শিক্ষাঙ্গন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, ইসলাম শাশ্বত শান্তির ধর্ম। মুসলিম জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে ধর্মীয় বিধান পালন অপরিহার্য। ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কেবল ছাত্রদের ধর্মীয় অধিকার খর্ব নয় স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানকেও লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করতে ডাকসুর প্রতি আহŸান জানান।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নেতৃবৃন্দ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ