চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
শেষ
অপচয় বলতে বুঝানো হয় আল্লাহ যেখানে অর্থ ব্যয় করা হারাম করেছেন সেখানে অর্থ ব্যয় করা এবং এমন সব কাজে অর্থ ব্যয় করা যা বিলাসিতা ও অপ্রয়োজনীয় বলে পরিগণিত হয়। ইসলাম সকল ক্ষেত্রে ইনসাফ ও সুবিচার কামনা করে। তাই ইসলাম অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ন্যায়সঙ্গতভাবে অর্থ ব্যয় করা পছন্দ করে। সুতরাং বাড়ি-ঘর তৈরিতে ন্যায়ানুগতভাবে কারুকার্য করাও ইসলাম অনুমোদন করে; তবে তা হতে হবে অবশ্যই বিলাসিতা পরিহার করে ন্যায়পরায়ণতার সীমারেখার মধ্যে।
মজবুত ও সুন্দর করা ঃ ইসলাম মুসলিম স্থপতির কাছে দক্ষতার সাথে উৎকর্ষের সাথে মজবুত ও সুন্দর করে স্থাপত্য শিল্প নির্মাণ করা কামনা করে। কারণ রাসূসুল্লাহ স. এক হাদীসে বলেছেন, তোমরা কেউ কোন কাজ করলে সে তা উৎকর্ষ ও দক্ষতার সাথে করুক তা আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন। ‘‘ইমাম আবূ ইয়া‘লা আল-মাওসিলী, আল-মুসনাদ, তাহকীক : হুসাইন সালীম আসাদ, দামেশ্ক : দারুল মামূন লিত্-তুরাছ, ১৪০৪ হি./ ১৯৮৪ খ্রি., হাদীস নং- ৪৩৮৬; হাদীসটির সনদ সহীহ। মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদীছিস সহীহাহ, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ১১১৩।’’
আল্লাহর খলীফা হিসেবে মানুষের দায়িত্বের কথা ভুলে না যাওয়া ঃ ইসলামী স্থাপত্য শিল্প তৈরি কালে মানুষকে মনে রাখতে হবে যে, মানুষ এ পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা। সুতরাং স্থপতিকে তার স্থাপত্য শিল্প এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে স্থাপত্য শিল্পটি মানবকল্যাণ ও আল্লাহর দীনের দাওয়াত ও আল্লাহ ইবাদতে উৎসাহী করে।
বাথরুম (টয়লেট) কিবলামুখি না করা ঃ স্থাপত্য শিল্প নির্মাণের সময় আর যে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয় তা হচ্ছে বাড়ির অভ্যন্তরে টয়লেটগুলো যেন কিবলামুখি করে না করা হয়। কারণ রাসূলুল্লাহ স. পেশাব-পায়খানা করার সময় কিবলামুখি হয়ে পেশাব-পায়খানা করতে নিষেধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তোমরা কিবলামুখি হয়ে বা কিবলাকে পিছনে রেখে পায়খানা-পেশাব করো না। ‘‘ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, অধ্যায় : আবওয়াবুল কিবলাহ, পরিচ্ছেদ : কিবলাতু আহলিল মাদীনাহ্ ওয়া আহলিশ্ শাম ওয়াল মাশরিকি, প্রাগুক্ত, হাদীস নং- ৩৮৬।’’
কবরের উপর কোন ধরনের স্থাপত্য তৈরি না করা : মুসলিমদের কবর হবে সাদাসিধে। এটি বেশি উঁচু করা যেমন হারাম, তেমন হারাম কবরের উপর কোন স্থাপত্য নির্মাণ করা, কবর বাঁধানো, চুনকাম করা ইত্যাদি। জাবির রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. কবরে চুনকাম করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। ‘‘ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, অধ্যায় : আল-জানায়িয, পরিচ্ছেদ : আন-নাহয়ু আন তাজসীসিল কবরি ওয়াল বিনা-ই আলাইহি, হাদীস নং- ২২৮৯।’’
উক্ত হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, কবরের উপর কোন কিছু নির্মাণ করা হারাম। তাই কোন ব্যক্তির কবরকে কেন্দ্র করে কোন স্থাপনা তৈরি, এমনকি কবর বাঁধানো ও চুনকাম করা, কবরের উপর কিছু লেখা, বাতি জ্বালানো ইত্যাদি স্পষ্ট হারাম।
স্থাপত্য শিল্প তৈরি করার সময় তাতে উন্নত নির্মাণ শিল্প কৌশল ব্যবহার করে, মজবুতভাবে, শান্তিতে বসবাস করতে পারার মত করে এবং ইবাদত-বন্দেগী, বিশেষত সালাত আদায়ের পরিবেশ তৈরি করে তা নির্মাণ করতে হবে। আরো খেয়াল রাখতে হবে যাতে যেখানে দীনের বিধান রক্ষা সহজতর হয়। আরো মনে রাখতে হবে যে, মানুষ এ পৃথিবীতে চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসেনি, তাকে তার রবের কাছে অবশ্যই একদিন আবার ফিরে যেতে হবে। অতএব, স্থাপত্য শিল্প নির্মাণ কালে এ কথা মনে রেখেই তা তৈরি করতে হবে। তাতে বাড়াবাড়ি ও বিলাসিতা যাতে না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবেই স্থাপত্য শিল্প ইসলামসম্মত হবে। বাংলাদেশ যেহেতু একটি মুসলিম দেশ। এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মুসলিম। তাই এদেশের স্থাপত্য শিল্প অবশ্যই ইসলামী স্থাপত্য শিল্প-নীতিমালা অনুসরণ করে নির্মাণ করা বাঞ্চনীয়। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মুল্যবোধ ও চেতনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন স্থাপত্য কর্ম শিল্প বা সংস্কৃতির নামে তৈরি করা এবং তার পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান কখনই কাম্য হতে পারেনা। এ প্রেক্ষিতে দেশের স্থাপত্য শিল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মূল্যবোধকে ধারণ করে এমন একটি আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সময়ের দাবী। উল্লেখ্য যে, এ দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশ হলেও অমুসলিম জনগোষ্ঠীর শিল্প, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে। যা বিশ্বধর্ম ইসলামের উদারতার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ আমাদের সকলকে ইসলামী নির্দেশনা মত স্থাপত্য শিল্প তৈরি করার তাওফীক দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।