Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান অভিযানের সুফল আসছে

| প্রকাশের সময় : ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

গত রোববার মতিঝিলের চারটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো সরঞ্জাম, মদ ও টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই চারটি ক্লাব হলো : মহামেডান, ভিক্টোরিয়া, আরামবাগ ও দিলকুশা ক্লাব। এর আগে র‌্যাব ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো সরঞ্জামসহ নানা কিছুর সন্ধান পায়। ইতোমধ্যেই জানা গেছে, স্পোর্টিং ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনো জুয়ার আসর বসতো। রাজধানীর অন্তত ৬০টি ক্যাসিনো জুয়ার আসরে গড়ে প্রতিদিন ৫০০ কোটি টাকার জুয়ার কারবার চলতো। এসব জুয়ার আসর পরিচালিত হতো সরকারি দল ও তার অঙ্গ সংগঠন বিশেষ করে যুবলীগের নেতাদের দ্বারা। এসব জুয়ার আসরে রাজনীতিক থেকে শুরু করে আমলা, পুলিশকর্তা, ব্যবসায়ী প্রভৃতি শ্রেণী-পেশার লোক অংশ নিতেন। হঠাৎ ক্যাসিনো জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হওয়ায় এবং কয়েকজন হোতা গ্রেফতার হওয়ায় এখন অনেক কিছুই জানা যাচ্ছে। মসজিদের শহর বলে পরিচিত ঢাকা যে ধীরে ধীরে ক্যাসিনো জুয়ার শহরে পরিণত হয়েছে, সাধারণ মানুষের তা জানা ছিল না। তারা বিস্মিত ও হতবাক। যে কারণেই হোক, ক্যাসিনো জুয়ার বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযানকে মানুষ স্বাগত জানাচ্ছে। তারা চাইছে, অভিযান যেন মাঝপথে থেমে না যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং কাউকেই এই অবৈধ ব্যবসা করতে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর মধ্যে এই অভিযানের কারণে ভীতি-আতংক দেখা দিয়েছে। অনেকেই লাপাত্তা হয়ে গেছেন। অনেকেই দেশ ত্যাগের ফিকিরে আছেন বলে জানা গেছে। ওদিকে প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশের কর্মকর্তা পর্যায়েও শংকা ও বিচলন দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলে ও অঙ্গ সংগঠনগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চলবে। প্রশাসনেও অভিযান চলবে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা প্রদর্শনের নীতি গ্রহণ করেছেন। তিনি দুর্নীতিবাজ কাউকেই ছাড় দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই নীতি ও সিদ্ধান্ত সর্বমহলে নন্দিত, প্রশংসিত ও সমর্থিত হয়েছে। সকলেই একমত, প্রধানমন্ত্রীর নীতি-ঘোষণা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা বড় ধরনের সাফল্য অর্জিত হবে।

ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, কমিশনবাজি, জুয়াসহ সকল অনৈতিক ও বেআইনী কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার তাকিদ দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে সর্বক্ষেত্রে এসব অপকর্ম ও অপরাধ বিস্তার লাভ করেছে। এসবের মূলে আছে সরকারি দল ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহের একশ্রেণীর নেতাকর্মী এবং প্রশাসন ও পুলিশের একশ্রেণীর দলবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এক্ষেত্রে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার কাজটি করা হয়নি। এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ায় দলের ভেতরকার সাপ-বিড়াল অনেক কিছুই বেরিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে এই অভিযানের সুফল বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়তে শুরু করেছে। খবর পাওয়া গেছে, সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি প্রায় নেই বললেই চলে। প্রশাসনে ও পুলিশের মধ্যে দায়িত্বশীলতা ও সেবার মনোভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে ঘুষ ও ক্ষমতার অপব্যবহার। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অবৈধ স্থাপনা ও দখল উচ্ছেদের বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। নদ নদী দখল মুক্ত করার অভিযানও নতুন করে শুরু করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। ১১ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক। চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনো জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযানে নামার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অনুরূপ অভিযান পরিচালনার তাকিদ অনূভূত হচ্ছে। টিআইবি’র তরফে বলা হয়েছে, ব্যক্তি, দল ও প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান নির্বিশেষে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেয়া হলে প্রত্যাশিত সুফল আসবে। টিআইবি’র মতে, ছাত্র ও যুব নেতাদের একাংশের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের প্রেক্ষিত দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। সর্বাত্মক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে চলমান অভিযান জনমনে প্রত্যাশার সৃষ্টি করবে। দুর্নীতিবিরোধী সকল ব্যক্তি ও সংগঠনের অভিমত এই যে, সকল ক্ষেত্রে, তা সে রাজনৈতিক সংগঠন হোক, প্রশাসন হোক, পুলিশ হোক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভাগ হোক কঠোর অভিযান পরিচালিনা করার এখনই উপযুক্ত সময়। এই সময়টাকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। আশা করা যায়, তাতে দুর্নীতি অনেকাংশে নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর হবে।

দেশ ও সমাজের প্রায় সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি, দুষ্কৃতি ও দুর্বৃত্তাচার শিকড় গেড়ে বসেছে। এসবের উৎসাদন ছাড়া শান্তি, স্থিতি, উন্নয়ন ও বিকাশ নিশ্চিত হতে পারে না। সরকারের পক্ষ থেকে উন্নয়নের চেষ্টা কম হচ্ছে না; কিন্তু এর সুফল জনগণ পাচ্ছে না। জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চহারের কথা বলা হয়, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা বলা হয় এবং এসব বলে অর্থনীতির দ্রুত অগ্রসরতার সাক্ষ্য দেয়া হয়। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ওঠে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের যে নিশ্চয়তা দেয় তা কি হচ্ছে? এর কোনো সদুত্তর নেই। দেশে একটা লুটপাটতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার থেকে নির্বিচারে অর্থ লোপাট হয়েছে। সরকারি নির্মাণ কাজে লুণ্ঠন চলছে অবাধে, ঘুষ, চাঁদা ও কমিশন ছাড়া তো কোনো কাজই হয় না। এ অবস্থা চলতে পারে না। দুর্নীতি, দুষ্কৃতি ও দুর্বৃত্তাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ও লাগাতার অভিযান চালানো ছাড়া এ অবস্থা উত্তরণের কোনো পথ নেই। দলমত নির্বিশেষে, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, কমিশনবাজ, অস্ত্রবাজ, জুয়াড়ী ও কুকর্মশীল ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। তাদের গ্রেফতার ও উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যারাই অভিযান চালক, তা র‌্যাব, পুলিশ, দুদক যেই হোক, তাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন অভিযানের সময় নির্দোষ, নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানি, ক্ষতি, সম্মানহানি ও জুলুমের শিকার না হয়। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ নিয়েই কারো বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চালাতে হবে। অভিযান অগোছালো, বিশৃংখল ও প্রশ্নবিদ্ধ হলে অভিযানের সুফল যেমন ব্যহত হবে তেমনি, জনমনে বিক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়াও সঞ্চারিত হবে। যে কোনো মূল্যে জনজীবন নির্বিঘ্ন রাখতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন