পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান চলছে। নিজ দলের অঙ্গ সংগঠনের দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারের মাধ্যমে এই অভিযান শুরু হয়েছে। ক্যাসিনো পরিচালনা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদককে গ্রেফতার এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত শুক্রবার যুবলীগ দক্ষিণের কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক নেতা জি কে শামীমকে বিপুল অংকের অর্থ, মাদক ও অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এই নেতা মাফিয়া ডন, গণপূর্তের রাজা, বন্দুক শামীম নামে পরিচিত। তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী ঠিকাদার। তার সাথে গ্রেফতারকৃত যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খলেদসহ অন্যান্য প্রভাবশালী নেতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। খালেদ ও শামীমকে গ্রেফতারের পর তাদের অপকর্মের নানা ফিরিস্তি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে, যা দেশের মানুষকে বিস্মিত করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এত বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার বিষয়টি ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সরকারি দলসহ প্রশাসনের দুর্নীতিবাজদের অনেকে এখন আতঙ্কে আছেন। অনেকে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছেন এবং করছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের কারণে এ যাত্রায় তারা রক্ষা পবেন বলে মনে হয় না। গ্রেফতারকৃত শামীমকে ঠিকাদারী ক্ষেত্রে ‘টেন্ডার মুঘল’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এ ক্ষেত্রে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। তার বাইরে অন্য কারো টেন্ডার পাওয়ার উপায় ছিল না। এতটাই ক্ষমতাবান ছিলেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না, শামীম শুধু একা নন, তার মতো এমন ক্ষমতাবান টেন্ডারবাজ আরও রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে হঠাৎ করেই যেন মহাদুর্নীতির ক্ষেত্রটি উন্মোচিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণাও ছিল না একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কতটা বেপরোয়া ও শত শত কোটি টাকার মালিক হতে পারে। খালেদ ও শামীম ধরা পড়ার পর তার নমুনা দেখা গেল। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন এ ধারণা জন্মেছে, একটি শ্রেণী যেন দেশে জুয়াড়ি, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ ও মাদকের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। খালেদ ও শামীমের গ্রেফতারের মাধ্যমে এই রাজত্বের কিছুটা উন্মোচিত হয়েছে। দেশের আনাচে-কানাচে এমন আরও অনেক খালেদ-শামীম রয়েছে। তারা শুধু ‘টিপ অফ আইসবার্গ’ বা বিশাল হিমশৈলীর সামান্য চূড়া মাত্র। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা যেন অব্যাহত থাকে। অন্য অপরাধী তারা যত ক্ষমতাবান হোক না কেন যেন পার না পায়। এ অভিযান এদের নির্মূল না করা পর্যন্ত চালাতে হবে। কনস্ট্রাকশন খাতে একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক হয়ে থাকা শামীম ধরা পড়ায় এ খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলছেন, এক শামীমই নন, এ খাতে এমন আরও অনেক শামীম রয়েছেন যারা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের কারণেই সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে ও মানসম্পন্নভাবে তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। এক প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে এবং একই সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সড়ক নির্মাণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় বাংলাদেশে। পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় প্রায় তিন গুণ খরচ হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে, এ খাতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তার যোগসাজসে সীমাহীন দুর্নীতি। এভাবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পের নির্মাণ কাজও এই ঠিকাদার সিন্ডিকেটের কারণে দুই-তিন গুণ বেড়ে যাচ্ছে এবং নিম্নমানের কারণে টেকসই হচ্ছে না। সরকার উন্নয়ন খরচ জোগাতে যেখানে নানা খাত সৃষ্টি করে জনগণের কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে অর্থের সংস্থান করছে, সেখানে এই অর্থ লুটেপুটে খাচ্ছে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার ও তাদের সহযোগীরা। এতে সরকারের যেমন বদনাম হচ্ছে, তেমনি প্রকল্পের কাজও যথাযথভাবে শেষ হচ্ছে না। যদি সরকারের প্রতিটি উন্নয়নমূলক প্রকল্প ও নির্মাণ কাজ যথাযথভাবে তদারকি করা হয়, দেখা যাবে, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই উল্লেখিতদের মতো প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের আধিপত্য রয়েছে। সরকারের উন্নয়নের সুফল তারাই খেয়ে ফেলছে। জনগণের অর্থ লুটপাট এবং সরকারের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে একেকজন হয়ে উঠছে সংশ্লিষ্ট খাতের ‘ডন’।
আমরা মনে করি, সরকারের উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রকল্পে অবৈধ প্রভাব বিস্তারকারী ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কতিপয় কর্মকর্তার সিন্ডিকেট নির্মূল করতে পারলে সরকারের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন দ্রুত এগিয়ে যাবে। এতে প্রকল্পগুলোর নির্মাণ ব্যয় ও সময় অনেক কমে আসবে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রকল্পের নির্মাণ কাজকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সিন্ডিকেট অত্যন্ত প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর। তাদের অর্থ ও প্রতিপত্তের অভাব নেই। এর মাধ্যমেই তারা সবকিছু ম্যানেজ করে পার পেয়ে যায় এবং যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে যারা ধরা পড়েছে তাদের অর্থবিত্তের প্রাচুর্য থেকে বোঝা যায়, তাদের শেকড় অনেক গভীরে। কাজেই গ্রেফতারকৃতরা যাতে প্রভাব বিস্তার করে পুনরায় ফিরে আসতে না পারে, এ বিষয়টি আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। যেসব দুর্নীতিবাজ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে, তাদেরকেও ধরতে হবে। তা নাহলে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রশ্নের মুখোমুখি হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।