পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি ‘জিরো টলারেন্স’ পদক্ষেপ নিয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে সবক্ষেত্রেই তাঁর এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। বিশেষ করে নিজ দলের অঙ্গ সংগঠনের মধ্য দিয়ে তিনি এই দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, কারো কোনো নালিশ শুনতে চাই না। ছাত্রলীগকে ধরেছি। যুবলীগকে ধরেছি। একে একে সব ধরব। তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, সমাজের অসঙ্গতি এখন দূর করব। জানি, এগুলো কঠিন কাজ। এ কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা আসবে। তারপরও আমি করবই। দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতির যে আগ্রাসন চলছে, তা প্রতিরোধে রাষ্ট্রের প্রকৃত অভিভাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ়তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বলতেই হবে, বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে এবং একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নেত্রী হিসেবে তিনিই পারেন দুর্নীতিকে সমূলে উৎপাটন করতে। আশা করা যায়, তার কঠোর অবস্থান সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা, নৈতিক মূল্যবোধ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এতে যে তিনি দেশের ১৭ কোটি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পাবেন, তা অনস্বীকার্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, বঙ্গবন্ধু কন্যর এই মহৎ কাজ করার ক্ষেত্রে মূল সহায়ক শক্তি দেশের জনগণ। জনগণের সমর্থনে তাঁর এই উদ্যোগ সফল হবেই। কোনো অপশক্তিই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
এক ক্যাসিনো কেলেংকারির মাধ্যমে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সমাজের নামিদামি ব্যক্তিসহ প্রায় সবশ্রেণীর মানুষের নাম যেভাবে উঠে এসেছে, তাতে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। বিশেষ করে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যর কথা যেভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, তা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তারা কীভাবে দেশের ক্ষতি করে চলেছেন। তাদের কেউ কেউ জুয়ার নেশায় এতটাই বিভোর যে নানা অজুহাত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় কাজ ফেলে জুয়া খেলতে বিদেশেও চলে যাচ্ছেন। ক্যাসিনোতে লাখ লাখ টাকা উড়াচ্ছেন। অন্যদিকে এই নেশায় পড়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে গাফিলতি করছেন। এর প্রভাবে সরকারের যেসব উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে, সেগুলোর গতি যেমন ধীর হয়ে পড়ছে, তেমনি দফায় দফায় সময় বাড়ানোর ফলে অর্থের দেদার অপচয়ও হচ্ছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী সততা ও আন্তরিকতার সাথে দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা দ্রুত এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন, জুয়ার নেশায় আসক্ত অনেক প্রকল্প পরিচালকের কারণে তা শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। বলা বাহুল্য, এ ধরনের কর্মকর্তাদের দিয়ে উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নেয়া দিল্লী দূরস্ত’র মতোই। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ দুর্নীতিসহ অন্যান্য অপরাধ দমন করা হলেও, তাদেরও অনেকে এসব অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। থানার পাশে অপকর্ম চললেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অবশ্য সর্ষের ভেতর ভূত বসবাস করলে, সেই ভূত তাড়ানোর কোনো উপায় থাকে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জানার মধ্যেই যে ক্যাসিনোর মতো অনৈতিক কর্মকান্ড দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে, তা গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা তার বক্তব্যেই বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুর্নীতির সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। তাঁর এ বার্তা সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দের দুর্নীতি, যুবলীগের কিছু নেতার দুর্নীতি ও অপকর্ম এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মধ্যদিয়ে তিনি প্রকারন্তরে দেশের প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বস্তরে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন যে, দুর্নীতি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতার সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী যে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন, তা দুর্নীতিবাজদের ভেতর কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতির সাথে জড়িতরা মনে করতে পারেন, এখন এ নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছে, সময়ের সাথে সাথে তা থিতিয়ে যাবে। তারা আগের মতো দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডবিরোধী দৃঢ় অবস্থানের কারণে তাদের সে আশা পূরণ হবে না। তাদের মনে রাখতে হবে, বঙ্গবন্ধু কন্যা একবার যে সিদ্ধান্ত নেন, তা তিনি বাস্তবায়ন করে দেখান।
আমরা এ কথা বলতে চাই না, সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠনগুলো দুর্নীতির সাথে জড়িত। বরং এর কিছু নেতা-কর্মীর বেপরোয়া আচরণ ও দুর্নীতির কারণেই পুরো সংগঠনের বদনাম এবং তার দায় নিতে হয়। সংগঠন এবং পদ-পদবীর নাম ব্যবহার করে তাদের অপকর্ম শুধু সংঠনের বদনাম নয়, সরকারকেও বদনামের ভাগিদার করছে। এর সাথে পুলিশ প্রশাসনের একশ্রেণীর সদস্যরও সহায়তা রয়েছে। যদি না থাকতো তবে এসব দুর্নীতিবাজ দুর্নীতি করতে সাহস পেত না। এখন যেসব দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ড প্রকাশিত হচ্ছে, একটি শ্রেণী হয়তো বিভিন্নভাবে তা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করবে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন, তা যেমন প্রতিকার হবে, তেমনি প্রশাসনসহ সবক্ষেত্রের দুর্নীতিবাজরা কোনোভাবেই রেহাই পাবে না। তাদেরকেও আইনের আওতায় আসতে হবে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী দিন-রাত পরিশ্রম করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে নিতে এবং ভাবমর্যাদা বৃদ্ধিতে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজের কারণে অভাবনীয় অর্জনে কালিমালিপ্ত হবে, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা আশা করি, দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ পূর্ণ সাফল্য লাভ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।