এখন ফসল সংগ্রহের সময়। অথচ উত্তর কাশ্মিরি শহর সোপোরের বাজার জনশূন্য। সাধারণত এই সময় বাজারটি লোকে লোকারণ্য থাকে।
উৎপাদিত আপেল বিক্রি হয়। কেনা আপেল নেয়ার জন্য ট্রাকের ভিড় লেগে থাকে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মির উপত্যকাজুড়ে বাগানগুলো আপেলে ভরপুর। কিন্তু এবার আপেলগুলো বিক্রির সুযোগ না থাকায় পচে যাচ্ছে।
বিশ্বের বৃহত্তম আপেল চাষকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম কাশ্মির। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাটকীয়ভাবে রাজ্যের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বিলুপ্ত করার পরে কয়েক সপ্তাহব্যাপী অবরোধ আরোপ করেছিল। এতে কাশ্মিরের সাথে ভারত ও বিদেশের ক্রেতাদের পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ফল চাষকারী ও ফল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এসব অস্থিতিশীলতা ফলচাষ শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
মোদি এই পদক্ষেপটি ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সাথে একীভূত করাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর একটি উপায় হিসেবে নিয়েছিলেন। তবে আপাতত তার সরকারের এই পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটিতে বিরক্তি আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
যেখানে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলমান রয়েছে। উদ্যান, বড় বড় বাড়ি ও বসবাসকারীদের সমৃদ্ধির কারণে স্থানীয়ভাবে ‘ছোট্ট লন্ডন’ নামে পরিচিত সোপোরের বাজার। অথচ এর ফটকগুলো গত সপ্তাহের শেষ দিকে তালাবদ্ধ ছিল। দোকানগুলো ছিল নির্জন।
ভোরবেলা একজন ব্যবসায়ী ফজরের নামাজের জন্য সোপোরের বাজারসংলগ্ন একটি মসজিদে ছুটে এসেছিলেন। তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, ‘প্রত্যেকে ভয়ের মধ্যে আছে। কেউ আসবে না।’
আপেল হলো কাশ্মিরের অর্থনীতির প্রাণ। উপত্যকার প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা আপেল উৎপাদন ও বিক্রি কেন্দ্রিক অর্থনীতির সাথে জড়িত। কৃষকরা ও ফল ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তাদের ফসলগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাদের পণ্য বাজারে আনতে বা ভারতের অন্যান্য অংশে পাঠানো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে জঙ্গি সংগঠনগুলো কাশ্মিরিদের কাজ বন্ধ করার হুমকিও দিয়েছে।
সোপোরের চারপাশে বাগানের পর বাগানে আপেল গাছের নিচে আপেল পচে পড়ে আছে, ঝুলে আছে। সোপোরের এক বড় দোতলা বাড়ির ভেতরে বসে হাজী নামের একজন ব্যবসায়ী বলেছিলেন, ‘আমরা দুই দিক থেকে আটকে আছি। আমরা এখানে বা সেখানে যেতে পারি না।’
বরফে আচ্ছাদিত পাহাড় দ্বারা সজ্জিত শ্রীনগরের মিরর-শান্ত ডাল হ্রদে পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট হাউজ বোটের চালক মনজুর কলু বলেছেন, অশান্তির ভয়ে তাকে পর্যটকদের এখান থেকে সরিয়ে নিতে বলছে পুলিশ। পুলিশ আমাকে বলেছিল যে যদি কোনো অঘটন ঘটে তবে আমি দায়ী থাকব।
আমার চার অতিথি যারা ছিলেন ভারতীয় পর্যটক, এরপরেই চলে গেলেন। সেই থেকে কোনো অতিথি আর আসেনি। এখন আমাদের আগামী এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এটি হতাশার।
আমার নৌকাটি ৩৫ বছরের পুরনো। ভেতরে রয়েছে খোদাই করা কাঠের আসবাব এবং যেটি ঐতিহ্যবাহী কাশ্মিরি কার্পেট দিয়ে মোড়ানো। অনেকবার আমি এটি বিক্রি করে দেয়ার কথা ভেবেছি, তবে এটিই আমার বাবার পুরো জীবনের অর্জন।’ সূত্র: রয়টার্স