পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর ক্যাসিনোগুলোতে যারা জুয়া খেলতে আসতো তাদের মধ্যে একটা শ্রেণি ভিআইপি। এদের জন্য প্রতিটি ক্যাসিনোতে রয়েছে পৃথক রুমের ব্যবস্থা। যেখানে বসে খেলার ফাঁকে ফাঁকে ভিআইপি জুয়ারীরা মদ্যপান করতেন। এ তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, রাজউকের প্রকৌশলী,বিদ্যুৎ, গণপূর্ত ও এলজিইডির প্রকৌশলী, ঠিকাদার, পুলিশ, আইনজীবী, নব্যধনী কিছু রাজনীতিক নেতা কাম ব্যবসায়ী, দেশের বিভিন্ন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মতিঝিল ক্লাব পাড়ায় জুয়ার ভয়ঙ্কর নেশায় মেতে উঠতেন সরকারি উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। সন্ধ্যার পর এরা লাখ লাখ টাকা নিয়ে বসে যেতে জুয়া খেলতে। কোনোদিন জিততেন, কোনোদিন খালি হাতে ফেরত যেতেন। এসব কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজন আবার প্রায় প্রতি সপ্তাহে নেপাল বা শ্রীলঙ্কা যেতেন। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার দুপুরে অথবা বিকালে তারা পাড়ি জমাতেন। দুদিন জুয়া খেলে শনিবার রাতে ফিরে রোববার অফিস করতেন। কোনো কোনো কর্মকর্তা আবার জুয়ার নেশায় দুদিনের স্থলে তিন চারদিনও নেপালে অবস্থান করতেন। সে সময় তারা সরকারি সংশ্লিষ্ট অফিসে অসুস্থতার কারণ জানিয়ে মেইল করে দিতেন। সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে থেকেও বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা জুয়ার নেশায় ছুটে আসতেন ঢাকায়। পল্টনের নামকরা হোটেলে উঠতেন তারা। রাতভর জুয়া খেলে অর্ধেক বেলা ঘুমিয়ে বিকালে আবার আসতেন। সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বেশ কয়েকজন প্রকল্প পরিচালক আছেন।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় নেপাল বা শ্রীলঙ্কায় যাতায়াত করা কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের নামে করা বিকল্প পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন। সরকারি পাসপোর্ট ব্যবহার না করায় বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি বিধি-বিধান তাদের মানতে হতো না। সূত্র জানায়, গত দুই বছরে ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে খেলতে নিঃস্ব হয়েছেন বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা। তারপরেও জুয়ার নেশা ছাড়তে পারেন নি। শুধু তাই নয়, পাবনার এক কর্মকর্তা জমিজমা বিক্রি করে জুয়া খেলতেন। শেষ পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজনদের কাছে ধার করেছেন লাখ লাখ টাকা। তারপরেও জুয়া ছাড়তে পারেন নি। গার্মেন্টন ব্যবসায়ী ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তাও জুয়ার নেশায় প্রায়ই মতিঝিল ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোতে আসতেন। এক পর্যায়ে তিনিও নেপাল যাওয়া শুরু করেন। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় এক গাইড বই ব্যবসায়ীও আসতেন ক্যাসিনোতে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, ওই ব্যবসায়ী এক সাথে ২০/৩০ লাখ টাকা নিয়ে জুয়ার আসরে বসতেন। রাতভর খেলে কখনও হাতিয়ে নিতেন দ্বিগুণ টাকা। আবার কখনও মধ্যরাতের আগেই বিদায় নিতেন। বিদ্যুত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসতেন ইয়াংম্যান্স ক্লাবে। তাকে সঙ্গ দিতেন বিদ্যুত বিভাগের ৪/৫জন ঠিকাদার। গুলশানের জনশক্তি রফতানিকারক মোশাররফ ও ইরাজ আসতেন ওয়ান্ডার্স ক্লাবে। এ দুজনও মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জুয়ার আসরে বসতেন। আসতেন সুপ্রীম কোর্টের একজন ব্যারিস্টার,রাজউকের কয়েকজন প্রকৌশলী ও সার্ভেয়ার। এলজিইডির সদ্য প্রমোশন পাওয়া এক নির্বাহী প্রকৌশলীও আসতেন ক্লাবপাড়ায় জুয়ার আসরে। ঢাকার আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলা প্রকৌশলীও আসতেন।
এসব ভিআইপি ছাড়াও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভিজাত এলাকার ধনীর দুলাল, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীপুত্র, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও আসতেন। মতিঝিলের ওয়ান্ডার্স ক্লাবের ক্যাসিনোতে নিয়মিত যেতেন এমন একজন জানান, শুরুর দিকে ক্যাসিনোগুলোর ‘বাকারা’ বোর্ডের টেবিল লিমিট ছিল ১০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। কিছুদিন এই বোর্ডে বিত্তশালীরা খেলতে খেলতে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যায়। তখন খেলোয়ার সঙ্কট দেখে কয়েকটি ক্লাবে নতুন করে লোয়েস্ট লিমিট দিয়ে নতুন বোর্ড চালু করে। এই বোর্ডের টেবিল লিমিট দেয়া হয় দুশ’ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা। এই বোর্ডের নাম দেয়া হয় ‘রোহিঙ্গা বোর্ড’। টাকার অঙ্ক কমানোয় রোহিঙ্গা বোর্ডে দিন দিন বাড়তে থাকে জুয়ারীর সংখ্যা। সিএনজি অটোরিকশা চালক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়য়ারাও তখন ক্যাসিনোর দিকে ঝুঁকে পড়ে। দিনে রাতে ভিড় লেগে থাকে রোহিঙ্গা বোর্ডে। এর বাইরে ভিআইপি বোর্ডের টেবিল লিমিট ছিল ৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা। পরে এই বোর্ডের শেষাংশ বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করা হয়।
সূত্র জানায়, বিদেশের ক্যাসিনোগুলোতে কমপক্ষে ২০ ধরনের খেলা থাকে। ঢাকার ক্যাসিনোগুলোতে তা না থাকলেও ওয়ান্ডার্স ক্লাব প্রথম ক্যাসিনোর আইটেম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। বাকারা আইটেমটি প্রথম চালু হয় কলাবাগান ক্লাবে। এরপর মৌচাকে সৈনিক ক্লাব হয়ে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে। এর আগে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে শুধু ওয়ানটেন খেলা হতো। ৪/৫ বছর আগে তছলিম ও সেন্টু ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো ভাড়া নিয়ে জাপান ও নেপাল থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আনে। এক পর্যায়ে এই ক্লাবের ম্যানেজার পদ পায় কামরুল। বাকারা জুয়ার আসর বসিয়ে কামরুল এখন শত কোটি টাকার মালিক। কামরুলরা ৭ ভাই জুয়ার বোর্ডের সাথে জড়িত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালু করেন স্বেচ্ছাসেবকলীগের একজন শীর্ষ নেতা। এখনও তিনি ওই ক্লাবের সভাপতি।
নেপালের বাবা নামে এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনোর উত্থান। কয়েক বছর যাবত ওই ক্যাসিনো ভাড়া নিয়েছে বাবার ছোট ভাই কৃষ্ণা ওরফে আশীস। বেশ কয়েকজন নেপালী এই ক্যাসিনোতে কাজ করতো। অন্যদিকে, ওয়ান্ডারার্সের দেখাদেখি ভিক্টোরিয়া ক্লাবও চলে যায় নেপালীদের হাতে। সেখানেও চালু করা হয় বাকারা বোর্ড। সূত্র জানায়, যুবলীগ নেতা খালেদ ইয়াংম্যান্স ক্লাবের সভাপতি হওয়ার পর রাতারাতি পাল্টে যায় ক্লাবটি। নেপাল ও শ্রীলঙ্কা থেকে এক্সপার্ট এনে বাকারা বোর্ড পরিচালনা করতে থাকেন খালেদ। খালিদের কারণে ইয়াংম্যান্সে বিগ বিগ পার্টির আর্বিভাব ঘটতো। দিনে রাতে শত শত জুয়ারী ভিড় করতো জুয়া খেলার জন্য। সূত্র জানায়, খালেদ মাহমুদ ক্যাসিনোর বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রায়ই নেপাল ও শ্রীলঙ্কা যেতেন। এভাবে সেখানকার হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। ঢাকার মতিঝিলেই সেই হুন্ডি সিন্ডিকেটের অবস্থান। এক পর্যায়ে নেপালের জুয়ারীরাও ওই সিন্ডিকেটর মাধ্যমে টাকা পাচার করতে থাকে। সূত্র জানায়, শুধু ক্যাসিনো থেকে গত ৫ বছরে নেপালে পাচার হয়েছে কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাতেও বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করেছে জুয়ারীরা।
এর বাইরে নেপালী পার্টনার নিয়ে আরামবাগ ক্লাবের ক্যাসিনো চালাচ্ছে প্রদীপ, নাগিন নামে এক নেপালী চালাচ্ছে পাশ্ববর্তী আরেকটি বড় ক্লাব। আগে এই ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতো কাসেম ও ইমরান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।