পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
খালেদের বিরুদ্ধে ৪ মামলা : ৭ দিনের রিমান্ড
ফকিরাপুল ইয়ং মেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালানো ও বাসায় অস্ত্র-মাদক-বিদেশি মুদ্রা রাখার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাদক, অস্ত্র এবং মুদ্রা পাচার আইনে তিন মামলা দায়ের করা হয়েছে র্যাবের পক্ষ থেকে। গত রাতে গুলশান থানার দু’টি মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। পরে ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম মাহমুদার আদালতে শুনানি শেষে আদালত অস্ত্র মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে মাদকের মামলায় ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র ও মাদকের পৃথক দুই মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ড চেয়ে আমরা আদালতে আবেদন করেছিলাম, পরে আদালত পৃথকভাবে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে ফকিরাপুল ইয়ং মেনস ক্লাবে অভিযানের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায়ও তাকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল বিকেলে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। বুধবার বিকাল থেকে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে খালেদের বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ং মেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান শুরু করে র্যাব সদস্যরা। খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি। কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই ক্লাবে মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। আর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তারের সময় বাসায় ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায় র্যাব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, শুধু ক্যাসিনো নয়, সব অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। যারা এ ব্যবসা করছে তারা সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নেয়নি। তারা অবৈধভাবে এ কাজটি চালাচ্ছিল। সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে।
অন্যদিকে ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা বা কোনও ধরনের ক্যাসিনো পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। এসবের নেপথ্যে যত প্রভাবশালীই জড়িত থাকুক না কেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। র্যাব অভিযান শুরু করেছে, পুলিশও অভিযান শুরু করবে।
থমথমে ক্লাব পাড়া, দুটি ক্লাব সিলগালা
গত বুধবার বিকেলে ফকিরাপুলের ইয়ং মেনস ক্লাব ও পরে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে র্যাবের অবৈধ ক্যাসিনো উচ্ছেদ অভিযানের পর ওই এলাকায় গতকাল সকাল থেকে উৎসুক মানুষ ভিড় করলেও পুরো পরিবেশটা থমথমে। বেশিরভাগ ক্লাবেই দায়িত্বশীল কেউ নেই। স্টাফরা দায়িত্ব পালন করলেও তাদের মধ্যে আতঙ্ক। কখন আবার নতুন করে অভিযান শুরু হয়। সকাল ১০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ফকিরাপুল, আরামবাগ ও মতিঝিলের ক্লাব পাড়ায় ঘুরে দেখা গেছে শুধু উৎসুক মানুষ। যাদের বেশিরভাগেরই অভিযোগ ক্লাবগুলোর এ জুয়ার আসরের কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে হাজার মানুষ। বিভিন্ন ক্লাবের সামনে মানুষ জড়ো হয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম দেখছেন।
সকাল ১১টার দিকে দেখা গেছে ইয়ং মেনস ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সামনে র্যাবের কয়েকটি গাড়ী। দুই ক্লাবের মধ্যেই র্যাব সদস্যরা অবস্থান করছেন। ইয়ং মেনস ক্লাবে ঢুকতে গেলে র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, ভেতরে সিলগালার কাজ চলছে। এখন ঢোকা যাবে না। একই ধরনের উত্তর পাওয়া গেছে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ঢুকতে চাইলেও। র্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, ফকিরাপুলের ইয়ং মেনস ক্লাব ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে র্যাবের অবৈধ ক্যাসিনো উচ্ছেদ অভিযানের পর সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় সিলগালা করার কার্যক্রম শেষ হয়। দু’টি ক্লাবের ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
৪টি ক্যাসিনো সিলগালা, ১৮২ জনকে কারাদÐ
বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চারটি ক্যাসিনোতে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে র্যাব। অভিযানে মোট ১৮২ জনকে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদÐ দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া জব্দ করা হয়েছে বিপুল অংকের টাকা, মদ ও বিয়ারসহ জুয়া খেলার বিভিন্ন সরঞ্জাম। অভিযানে সিলগালা করে দেয়া ক্যাসিনোগুলো হলোÑ ফকিরাপুলের ‘ইয়ং মেনস ক্লাব’ ক্যাসিনো, বনানীর ‘গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ’ ক্যাসিনো, গুলিস্তানের ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র’ ক্যাসিনো এবং মতিঝিলের আরামবাগে ‘ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব’ ক্যাসিনো। র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ইয়ং মেনস ক্লাবে আটক করা ১৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদÐ দিয়েছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ইয়ং মেনস ক্লাবের পাশে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবেও অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। ক্লাবটি ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ পরিচালনা করেন। তার সহযোগী ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ সভাপতি মোল্লা কাউসার। এখানে জুয়ার বোর্ড রয়েছে ১২টি। এখান থেকে মদ, বিয়ার ও বিপুল অংকের টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-৩ এর এএসপি বেলায়েত হোসেন বলেন, জুয়া খেলার নগদ টাকা ১০ লাখ, মদের বোতল, তাস উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে রাজধানীর গুলিস্তানের বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রে অভিযান চালায় র্যাব। এ সময় জুয়ার বোর্ডসহ মাদক দ্রব্য পাওয়া গেছে। ক্লাবটি থেকে ৩৯ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদÐ দেওয়া হয়েছে। একই দিনে বনানীর আহম্মেদ টাওয়ারের ‘গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ’ নামক ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে র্যাব-১। অভিযানের খবর পেয়ে ক্যাসিনোর লোকজন পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. সারোয়ার বিন কাশেম। তিনি বলেন, অভিযানের সময় ক্যাসিনোর ভেতর থেকে বিপুল পরিমাণ জুয়া খেলার সামগ্রী পাওয়া গেছে। ক্যাসিনোটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এই ক্যাসিনোটির মালিককে খোঁজা হচ্ছে বলে র্যাব কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
খালেদসহ ৫ জন পালাতে চেয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে
একাধিক পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে’ দাপট তৈরি করে চলা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সিঙ্গাপুরে গিয়ে গা ঢাকা দেয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আটক হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি বিমানবন্দর থেকে ফিরে এসেছিলেন।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, খালেদ মাহমুদ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ নেতাসহ ৫ জন সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের বুধবার সকালের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন। ভোরে তারা সে উদ্দেশ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও যান। তবে বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে তাদের সন্দেহ হয়, তারা বিমানবন্দরেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে পারেন। এ আতঙ্ক থেকে তারা বিমানবন্দর থেকে ফিরে আসেন। তিনি আরও জানান, বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে খালেদসহ ৫ জন একসঙ্গেই ছিলেন। পরে দুপুরের দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় গিয়ে যে যার মতো আলাদা হয়ে যান।
আন্ডারওয়ার্ল্ড যোগাযোগ
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতে পলাতক পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী জাফর আহমেদ মানিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার। সেই সম্পর্কে ভাঙন ধরার পর তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে দুবাইয়ে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে। তার সহযোগিতা নিয়ে টেন্ডারবাজিতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেন খালেদ। সেই টাকার ভাগ নিয়মিত পৌঁছে যেত জিসানের কাছে। ‘আন্ডারওয়ার্ল্ডে’ খালেদের অবস্থান প্রমাণে সিঙ্গাপুরের অভিজাত হোটেল মেরিনা বে’র সুইমিংপুলে জিসান ও খালেদের সাঁতার কাটার ছবি দিয়ে ছাপানো পোস্টারে ছেয়ে যায় নগরী।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, একসময় টেন্ডারবাজির টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে জিসানের সঙ্গেও সম্পর্কের অবনতি হয় তার। এসময় সম্রাটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার শুরু খালেদের। জিসানের কাছ থেকেও তিনি দূরে সরে আসেন। একপর্যায়ে বড় অঙ্কের টাকা খরচ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জিসানের বেশকিছু ক্যাডার ধরিয়ে দেন তিনি। কয়েকজন ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। এরপর মুখোমুখি হয়ে পড়েন জিসান ও খালেদ। তখন থেকেই ‘নিরাপত্তা’র খাতিরে অস্ত্র উঁচিয়ে চলতে থাকেন খালেদ ও তার ক্যাডাররা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, স¤প্রতি আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসীর সঙ্গে খালেদের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে দু’জনের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। থাইল্যান্ডে পলাতক আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী উল্লাহ নবীর সঙ্গেও রয়েছে খালেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।
আন্ডারওয়ার্ল্ড ও খালেদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, থাইল্যান্ডে পলাতক মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী উল্লাহ নবী খালেদের ব্যবসায়িক অংশীদার। ব্যাংককে একটি টু-স্টার মানের হোটেল ও পাতায়াতে ফ্ল্যাট ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে খালেদের। এসব দেখভাল করেন নবী। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অভিজাত সুপারমল প্যাভেলিয়নের উপরে ১১কোটি টাকায় সম্পতি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন খালেদ। সেখানে গড়েছেন সেকেন্ড হোম। স্কটল্যান্ডেও কিনেছেন বাড়ি। সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য পরিবার নিয়ে ঘনঘন যাতায়াত করেন। সেখানে বিনিয়োগ ভিসায় স্থায়ীভাবে পরিবার নিয়ে থাকার প্রস্তুতিও চলছে তার।
ক্যাসিনোর টাকার ভাগ পেতেন যারা
বেশ কয়েক বছর ধরেই রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, এলিফ্যান্ট রোড ও বনানীসহ শতাধিক পয়েন্টে ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা চলে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) র্যাবের অভিযানে এগুলোর আসল চিত্র জনসম্মুখে আসে। এ ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শীর্ষ এক নেতা ও সাংগাঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার হাতে। তবে এখানকার টাকার ভাগ পেত পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, ডিসি, রাজনৈতিক নেতা, ওয়ার্ড কমিশনার, সাংবাদিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা। গত বুধবার গ্রেফতারের পর র্যাব ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন খালেদ মাহমুদ।
র্যাবের একাধিক সূত্র জানায়, প্রত্যেকটি ক্যাসিনো থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা লেনদেন হতো। লাভের অংশের ভাগ সবার কাছে পৌঁছে দেয়া হতো। সংশ্লিষ্ট্র থানার ওসি কাছে মাসিক হারে কয়েক লাখ টাকা দিতে হতো। সংশ্লিষ্ট জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার ও উপ-কমিশনারের কাছেও মাসিক হারে টাকা পৌঁছে যেত। এমনকি যারা উপ-পরিদর্শক বা পরিদর্শক লেভেলের তাদেরকেও টাকা দিতে হতো। তবে তাদের পরিমাণটা ছিল কম। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ক্যাসিনো এলাকার পুলিশের বিট অফিসারও পেত টাকার ভাগ।
সূত্র আরও জানায়, টাকার ভাগ রাজনৈতিক নেতার পকেটেও যেতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে মোটা অংকের টাকা দিতে হতো। এমনকি কাউকে কাউকে গাড়ি উপহার দিতে হয়েছে। অনেককে দিতে হয়েছে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা দামের মোবাইল ফোন। এ সব নেতাদের তালিকাও করা হচ্ছে। টাকার ভাগ যেত অনেক সাংবাদিকের পকেটেও। এরই মধ্যে খালেদ সবার তালিকা র্যাবের কাছে দিয়েছে। ক্যাসিনোর এই টাকার ভাগ দেশের গÐি পেরিয়ে বিদেশেও চলে যেত। যেসব সন্ত্রাসী দেশের বাইরে থাকেন তারাই মূলত এই ভাগ পেত। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে মতিঝিলের ক্যাসিনো পরিচালনার বিষয়টি মতিঝিল থানা পুলিশ, মতিঝিল জোন, পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি সদর দফতরের দুনীতিবাজ বেশ কিছু কর্মকর্তারা জানতেন বলে দাবি করেন খালেদ। তবে পুলিশের সঙ্গে ক্যাসিনো পরিচালনার জন্য কোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি। তাদের ‘ম্যানেজ করে’ ক্যাসিনো চালাতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, তাকে আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে সেগুলো এখনই প্রকাশ করা যাবে না। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে। ঢাকায় অবৈধভাবে কোনো ক্যাসিনো থাকতে দেবে না র্যাব বলে তিনি মন্তব্য করেন। র্যাবের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ জানিয়েছে, মগবাজার টিএনটি কলোনির সন্ত্রাসী নাজির আরমান নাদিম ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের হয়ে ঢাকায় কাজ করেন খালেদ। চাঁদাবাজি ও ক্যাসিনোর টাকা ওমানের মাসকটে থাকা সন্ত্রাসী নাদিমের কাছে পাঠায় খালেদ। সেখান থেকে জিসানও ভাগ পায় টাকার। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান বর্তমানে ভারতের পাসপোর্ট দিয়ে জার্মানিতে স্থায়ী হয়েছে। জিসানের দুবাইয়ের দেরাতে চারটি গোল্ডের দোকান আর আল ফজিরা সিটি জায়েদ শেখ মার্কেটে রয়েছে নাইট ক্লাব।
টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন চালাতেন খালেদ
খালেদ মাহমুদকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতারের পর এবার তার পরিচালিত টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র্যাব। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনের উল্টো দিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ারের চতুর্থ তলায় ওই টর্চার সেলের সন্ধান পায় র্যাব-৩ এর একটি দল।
র্যাবের একটি সূত্র জানায়, চাঁদা দাবির পর কেউ চাঁদার টাকা দিতে রাজি না হলে এই টর্চার সেলে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হতো। র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, খালেদ অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতারের পর আমরা গোয়েন্দা তথ্য ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন ভুক্তভোগীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টর্চার সেলের সন্ধান পাই ও অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানকালে টর্চার সেল থেকে ইলেকট্রিক শক দেয়ার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, গায়ের চামড়া জ্বলে-জ্বালাপোড়া করে এমন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, বিপুল পরিমাণ লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক পাওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।