নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কয়েক মাস আগেই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে যেকোনো খেলার বিশ্ব আসরে পদক জিতে ইতিহাস গড়েছিলেন রোমান সানা। আর্চারির বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে সেমিতে উঠেই তিনি গড়েছিলেন আরেক ইতিহাস- প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে অলিম্পিকে সরাসরি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার যোগ্যতা অর্জন। আর গত শুক্রবার এশীয় র্যাঙ্কিং আর্চারিতে সোনা জিতে দেশকে ফের দিয়েছেন গর্বের উপলক্ষ্য। ১৯৮৬ সালে সিউল এশিয়ান গেমসে বক্সিংয়ে মোশাররফ হোসেনের ব্রোঞ্জ জয় ছাড়া এশীয় পর্যায়ে আর কোনো ব্যক্তিগত পদক নেই বাংলাদেশের। রোমান সেই ব্যর্থতার ইতিহাসকে বদলে জিতলেন সোনার পদক। বাংলাদেশের খেলাধুলার ইতিহাসে সেরা সাফল্য এটিকে তো বলতেই হবে। বলা হচ্ছেও। এত সাফল্য, এত গৌরব যে ক্রীড়াবিদের হাত ধরে তিনি নিজেকে বঞ্চিত ভাবছেন। জানিয়েছেন এশীয় র্যাঙ্কিং আর্চারিতে সোনা জেতার পর একটা অভিনন্দন বার্তাও তিনি পাননি। বড় কোনো প্রতিশ্রæতি তো অনেক দূরের ব্যাপার।
নেদারল্যান্ডসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতে আসার পর যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে একটা অভিনন্দন-বার্তা পেয়েছিলেন। কিন্তু ৫৫টি দেশের ২০৯ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে পদক জিতেও তাঁর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। নিজের ফেডারেশন বা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় একটা পুরস্কারও তাঁকে দেয়নি। তবে আর্চারির পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ‘তীর’ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিল কিছু অর্থ পুরস্কার। দেশকে এত গর্বিত করে, বিশ্ব দরকারে লাল-সবুজ পতাকা গর্বের সঙ্গে উড়িয়েও তাই হতাশ রোমান। বাংলাদেশ আনসারে সাধারণ একটা চাকরি করেন তিনি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রোমান নিজের হতাশাটা গোপন করেননি, ‘আমাদের দেশে ক্রিকেটে একটা সিরিজ জিতলেই ক্রিকেটাররা বাড়ি গাড়ি পেয়ে যান। অথচ ২০৯ জনকে পেছনে ফেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতেও আমরা কিছু পাই না। দেশকে সাফল্য এনে দিলাম। কিছু পাওয়ার আশা তো থাকে। আমরা গাড়ি-বাড়ি চাই না। লাখ টাকা বেতনও চাই না। আমরা একটা নিশ্চিন্ত জীবনের স্বপ্ন দেখি। সেটা কি খুব বেশি কিছু?’ না পাওয়ার হতাশার মধ্যেও নিজের একটি পৃষ্ঠপোষক আছে এতে খুশি রোমান, ‘আমি তীরকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের কল্যাণে পৃষ্ঠপোষক তো অন্তত আমরা পেয়েছি!’
রোমানকে অর্থ পুরস্কার না দেওয়ার ব্যাপারটি স্বীকার করেছেন আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপল। তবে তিনি জানিয়েছেন রোমানের উন্নয়নের জন্য সম্ভব সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন, ‘আমরা কোনো অর্থ পুরস্কার দিই না। রোমানের পরিবারকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। আমাদের মূল লক্ষ্যটা হলো রোমানকে অলিম্পিক উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি।’
রোমান সানা দেশে ফিরেছেন গতকাল দুপুরে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার হাতে ফুলের তোড়া ও মিষ্টি মুখ করিয়ে তাকে বরণ করে নেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। আরচারি দলের অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শন ও বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা আরচারি দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘রোমান সানাসহ আরচারদের এ অর্জনে দেশবাসীর সাথে আমিও আনন্দিত ও গর্বিত। আগামীতেও আমাদের সোনার ছেলেরা সাফল্য অব্যাহত রেখে দেশের জন্য সম্মান ও গৌরব বয়ে আনবে বলে আমি আশা রাখি। আমি তাদের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।’ এ সময় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা, বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং স্পন্সর মধুমতি ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তাসহ আরচারি সংশ্লিষ্ট অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।