পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশে কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগসহ পাঁচটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা। গত রোববার দুবাইয়ের কনরাড হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের (বিএইচটিপিএ) কর্মকর্তারা। সম্মেলনে তিনশজনের বেশি সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা অংশ গ্রহণ করেন। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৫টির মত বিনিয়োগ প্রকল্প বাংলাদেশ ইকোনমিক ফোরামের সামনে উপস্থাপন করা হয়। এ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সালমান এফ রহমান ও সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের গভীর আগ্রহ ও ঘোষণা অত্যন্ত ইতিবাচক। এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সহায়তা করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ দু’দেশের সম্পর্ককে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এ বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সম্মেলনের প্রধান অতিথি সালমান এফ রহমান তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আগ্রহ দেখে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। আমরা সব সময় চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ দেখে আসছি। এখন আমরা বিশ্বাস করি, জিসিসিভুক্ত দেশগুলো বিশেষ করে সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়, অপারেশনস ও উচ্চতর রিটার্নের সুযোগ নেয়া উচিৎ।
সালমান এফ রহমানের এই বক্তব্য অত্যন্ত যৌক্তিক, বাস্তবসম্মত ও প্রনিধানযোগ্য। সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জিসিসিভুক্ত অন্য দেশগুলোতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের অভাব নেই। তারা বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করছে। তারপরও তাদের প্রচুর অর্থ অলস পড়ে আছে। এর এটি অংশ তারা ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশ রয়েছে। এখানে ব্যবসার ব্যয় অত্যন্ত স্বল্প, শ্রমিক-কর্মী সস্তা ও সহজলভ্য এবং লাভের পরিমাণও বেশি। এই সুবিধাহেতু বিনিয়োগকারীরা উৎসাহভরে বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে তারা অন্যান্য দেশে বিনিয়োগ করে যতটা লাভবান হবেন, তার চেয়ে বেশি লাভবান হবেন। আর তারা বিনিয়োগ করলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, তার প্রবৃদ্ধি বাড়বে, অর্থনীতির মেরুদন্ড আরো মজবুত হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি গঠনে এ বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম, একথা বলেছেন সালমান এফ রহমান। একই সঙ্গে তিনি আরো একটি দিকের উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, আগামী বছরগুলোতে আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিশাল কর্পোরেট কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাবো, যেন এখান থেকে বিনিয়োগের সুযোগ বের করা যায় এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানো যায়। এটি একটি এভিনিউ, যা থেকে আশাতীত বিনিয়োগ আসতে পারে। একথা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, বাংলাদেশের কর্পোরেট কমিনউনিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রপথিক হলেন সালমান এফ রহমান। তিনি একই সঙ্গে সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কর্পোরেট কমিউনিটির বিষয়ে তিনি যেমন অন্য অনেকের চেয়ে জ্ঞাত ও অভিজ্ঞ, তেমনি তাদের সঙ্গে তার নিকট সম্পর্ক থাকাও সম্ভব। এমতাবস্থায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্পোরেট কমিউনিটির বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে তিনি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করা যায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। এক্ষেত্রে এযাবৎ যতটা অগ্রগতি ও অর্জন সাধিত হয়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আমরা আলোচ্য ক্ষেত্রেও তার সাফল্য কামনা করি।
দেশের অর্থনীতির পর্যায়ক্রমিক অগ্রগতির যে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশ জ্বালানি, বিদ্যুৎ, বন্দর, যোগাযোগ ও অবকাঠামোখাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে ও বাড়াতে চায়। এক তথ্যে দেখা যায়, ২০১৭ সালে অবকাঠামো নির্মাণ কাজে বিনিয়োগ দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে ৩১ দশমিক বিলিয়ন ডলার হয়েছে যা ২০১৮ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সালে এখাতের জন্য প্রয়োজন হবে ৩২০ বিলিয়ন ডলার। এখাতের মতো অন্যান্য খাতেও বর্ধিত অংকে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। প্রয়োজন হবে সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ। বাংলাদেশ এই সরাসরি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ২৮টি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করছে। জিসিসিভুক্ত দেশগুলোসহ বিশ্বের তাবৎ দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য এই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক গড়ে তুললেই হবে না, এখানে বিনিয়োগ টেনে আনতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও যোগাযোগ। অন্যথায় প্রত্যাশা পূরণ হবে না। দেশকে আমরা ধীরে ধীরে উন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। এলক্ষ্য অর্জনের জন্য যে কোনো মূল্যে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনিয়োগের ওপর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিই নির্ভরশীল নয়, কর্মসংস্থান এবং জনগণের জীবনমানের যথোচিৎ উন্নতিও নির্ভরশীল। অর্থনীতিবিদরা বলেন, সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে বিবরণ দিচ্ছে, সে অনুযায়ী কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এটা একটা অস্বাভাবিক বাস্তবতা। কেন এ পরিস্থিতি, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। কাগজ-কলমে নয়, দেশের মানুষ প্রকৃত উন্নয়ন দেখতে চায় এবং তার সুফল পেতে চায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।