বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে ছিচকে মাস্তান আর উঠতি মাস্তান যথেষ্ট সংগঠিত হয়ে নিজস্ব গ্রুপ বা গ্যাং তৈরি করে এক ধরনের ভিন্ন সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। যা ক্রমে সুস্থ্য সমাজ ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে নিরীহ, নিরিবিলি জীবন যাপনে আগ্রহী সাধারণ মানুষের জীবন ব্যবস্থা। সমাজের অশিক্ষিত ও নিম্ন আয়ের শ্রেণী পেশার মানুষের সন্তান ছাড়াও শিক্ষিত পরিবারের কিশোর বয়সের ছেলেরাও নানাভাবে প্রভাবিত হয়ে বখাটে থেকে গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়ছে। পড়া মহল্লার নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন পার্ক ও চিত্ত বিনোদনের স্থানগুলোতে আড্ডাবাজি, দিন রাত মোটর বাইক নিয়ে স্ট্যান্টবাজি, মেয়েদের ইভটিজিং থেকে শুরু করে মাদকের ব্যবসা ও এর ব্যবহার সহ সমাজে অশ্বস্তি আর অশান্তি সৃষ্টিকারী কর্মকাণ্ডে এরা জড়িত। সর্বত্র এদের অবাধ বিচরণ।
২০১৪-এর শুরু থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি সমাজের জন্য দুষ্টক্ষত এ ‘গ্যাং কালচার’ নিয়ে মনোনিবেশ না করায় ক্রমশ এদের ডালপালা বিস্তার লাভ করেছে। সব বখাটে ও উঠতি মাস্তান সহ গ্যাং কালচারের পেছনে রাজনৈতিক আশীর্বাদ না থাকলেও দৃশ্যমান কোন কারণ ছাড়াই পুলিশ বাহিনীর এক ধরনের উদাসীনতার অভিযোগ রয়েছে। তবে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার সহ অন্য কয়েকটি জেলার দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাগন এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে যে কোন পরিস্থিতিতে পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণ সক্রিয় রয়েছে বলে দাবী করেছেন।
এসব গ্যাং কালচারে সমাজের অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে প্রায়সই। বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় এধরনের অন্তত ৩০টি গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ও পাশ্ববর্তি এরাকায় একাধীক গ্যাং গড়ে ওঠায় তাদের নিজেদের মধ্যেও গোলযোগের ঘটনা ঘটছে। এ নগরীতে গত কয়েক বছরে জেলা স্কুল, উদয়ন স্কুল ও সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের একাধীক ছাত্র খুন হয়েছে প্রতিপক্ষের হাতে। যার কোনটির বিচারই এখনো শেষ হয়নি।
গ্যাং কালচরের সর্বশেষ শিকার বরগুনার কলেজ ছাত্র রিফাত। সেখানের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, স্ত্রী প্রানপন বাঁধা আর শতাধীক মানুষের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে একটি কর্মচঞ্চল রাস্তায় কলেজ ছাত্রটিকে ধাড়াল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায় জেমস বন্ডের অনুসারী ‘নয়নবন্ড’ গ্রপ। বিপুল সংখ্যক মানুষ নিরবে দাড়িয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে এ পৈশাচিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও কারো সাহস ছিলনা কোন ধরনের প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ গড়ে তোলার। স্ত্রী মিন্নি তার জীবন বাজি রেখে চেষ্টা করেও স্বামীকে রক্ষা করতে পারেননি। কিন্তু মিন্নির শশুরের দায়ের করা মামলায় সে এক নম্বর স্বাক্ষী হবার পরে এখন একই মামলার ৭নম্বর আসামী। ফলে বরগুনার আরো একাধীক গ্যাং এখন উলশিত। আর গ্রেফ্তারকৃত আসামীরা আদালত প্রাঙ্গনে চিৎকার করে ঐ গ্যাং-এর গড ফাদারের নমোলেখ করে ‘তাকে কেন আসামী করা হলনা’ তা জানতে চাইছে।
দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে দাপিয়ে বেড়ান একাধীক কিশোর গ্যাং-এর সাথে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেরাও জড়িয়ে পড়ছে ক্রমশ। গত ৫বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরিক্ষার ফলাফল বিশ্লেষনে অনেকটা হতাশার চিত্র উঠছে। দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে বরিশাল বোর্ডের পরিক্ষার ফলাফল খারপ। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের ফলাফল ক্রমশ খরাপ হচ্ছে। এমনকি ২০১৫সালে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে জুনিয়ার স্কুল সার্টফিকেট পরিক্ষায় পাশের হার ৯৭.২৬% হলেও ঐ ছেলে মেয়েরাই যখন ২০১৯সালে এসএসসিতে অংশ নিল তখন তাদের পাশের হার নেমে গেছে ৭৭.৪১%-এ। অর্থাৎ একই ছাত্র-ছাত্রীদের পাশের হার দুবছর পরে প্রায় ২০% কমে গেছে। আর এরমধ্যে ছেলেদের পাশের হার ছিল ৭৪.৪১%। এমনকি ২০১৫সালে এএসসি’তে পাশের হার ৮৪.৩৭%হলেও একই ছাত্র-ছাত্রীরা ২০১৭ সালে যখন এইচএসসি’তে অংশ নেয়, তখন তা ৭০.২৮%-এ নেমে গেছে। যারমধ্যে ছেলেদের পাশের হার ছিল ৬৭.৩৬%।
এখনো ঝালকাঠী জেলায় এসএসসি ও এইচএসসি’র পাশের হার যথাক্রমে ৬৭.১৪% ও ৬৬.৮২%। এমনকি চলতি বছর প্রকাশিত এইচএসসি’র ফলাফলে পটুয়াখালীর অবস্থান ছিল ৬টি জেলার মধ্যে সষ্ঠ, ৬৫.০৯%। বিগত এসএসসি’র ফলাফলে বরিশাল জেলার অবস্থান ছিল ৩য়। অথচ এ জেলায় শতভাগ জিপিএ-৫ পাওয়া ক্যাডেট কলজ ছাড়াও নামিদামি জেলা স্কুল, সরকারী মডেল স্কুল ও কলেজ এবং উদয়ন স্কুলের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
খোদ বরিশাল মহানগরীর রাস্তাঘাট ছাড়াও বিভিন্ন পার্ক, রেস্ট্রুরেন্ট আর ফাস্ট ফুড সপগুলোতে দিনরাত স্কুল কলেজগামী ছেলেরা আড্ডা দিয়ে বেড়াচ্ছে। স¤প্রতিককালে পড়–য়া বন্ধুদের সাথে মেয়েদের আড্ডাও ক্রমশ বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মূক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধিনতা পার্ক ও হাতেম আলী কলেজÑচৌমহনীর লেক-এর পাড়ে বিকেল থেকে অনেক রাত অবধী এদের বিচরন। এসব স্থানে সন্ধার পরে ইয়াবা বেচাকেনারও অভিযোগ আছে। ‘ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর’ শ্লোগানটি যত যোরদার হচ্ছে, দক্ষিনাঞ্চলের স্কুল-কলেজগামী ছেলেদের মধ্যে ক্রমশ তার বি¯তার লাভ করছে। কোচিং বানিজ্যের সুবাদে ঘরে পড়াশোনর প্রয়োজনীয়তা যত সংকুচিত হচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রীদের আড্ডাবাজিও তত ব্যপ্তিলাভ করছে। অনেক ছাত্রÑছাত্রীই কোচিং শেষ করে সন্ধার পরে পার্ক আর কথিত মিনি চাইনজ রেস্ট্রুরেন্টগুলোর আরো আধারীতে হারিয়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয় নিয়ে বেশীরভাগ অভিভাববক উদ্বিগ্ন হলেও অনেক বিলম্বে তাদের বোধদয় ঘটেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদের অনেকের সন্তানেরাই এখন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। আর মফস্বলের যেসব ছেলেমেয়ে বরিশাল মহানগরী বিভিন্ন হোস্টেল বা মেস-এ থেকে পড়াশোনা করছে তাদের নিয়ন্ত্রন নিজেদের হাতে। নিজস্ব নৈতিক স্খলনের আগে বোধদয় না হলে সমাজের অন্ধকার চোরাবালি তাদের অনিবার্য ঠিকানা হয়ে উঠছে।
এসব বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অসীম কুমার নন্দী ‘পরিবার থেকে উপযুক্ত শিক্ষা না পাবার বিষয়েটিকে প্রাথমিক কারন বলে মনে করছেন। এমনকি এরই প্রভাবে সমাজে মাদকের প্রভাব সহ বখাটে শ্রেণী তৈরী হচ্ছে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রাজনৈতিক কারনেও কিশোর সন্ত্রাসী ও বখাটে গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। বখাটে ও কিশোর গ্যাং-এর বেশীরভাগই প্রাপ্ত বয়স্ক না হলেও সহজলভ্য মাদক ব্যবসা এবং সেবনের জড়িয়ে পড়ছে বলে জানান এ জেষ্ঠ শিক্ষক। তার মতে, এসব কারনে সামান্য ঘটনায়ও এরা বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে সমাজ থেকে মাদকের প্রভাব নির্মুল করা সহ পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা এবং সামাজিক মুল্যবোধকে ফিরিয়ে আনারও তাগিদ দিয়েছেন এ শিক্ষাবীদ। তিনি রাজনীতিক নেতৃবৃন্দকে সুস্থ্য সমাজের জন্য ভয়াবহ বিপদ সৃষ্টিকারী কিশোর গ্যাং-এর ব্যপারে অধিকতর সতর্ক হয়ে তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করারও তাগিদ দিয়েছেন।
বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন খান এ ব্যাপারে ইনকিলাবকে জানান, কিশোর অপরাধ ও বখাটেপনা কমাতে মহানগর পুলিশ শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামুলক সভা করছে। অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথেও মতবিনিময় করে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, কিশোররা যেন অপরাধ কর্মকান্ডে যুক্ত না হয় সে লক্ষ্যে বিএমপি’র প্রচষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিএমপি কমিশনার এসব ব্যাপারে অভিভাবক সহ সমাজের সকলকে সক্রিয় ভুমিকা পালনেরও তাগিদ দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।