পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ও তুরস্কের সেনাবাহিনীর হামলায় সিরিয়ার বিদ্রোহী ও জেহাদি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ৩১ সদস্য নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে পশ্চিমা জোটের বিমান হামলায় প্রাণ গেছে কিছু জেহাদির, আর কিছুর প্রাণ গেছে তুরস্কের সেনাবাহিনীর আর্টিলারির গোলার আঘাতে। কবে এই হামলা চালানো হয়েছে তা নিশ্চিত বলা না হলেও খবরটি গত শনিবার দিয়েছে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম। ওদিকে, আইএস নিয়ন্ত্রিত সিরিয়ার মানবিজ শহরে আটকা পড়েছে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ। গত শুক্রবার কুর্দি ও আরব যোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স বা এসডিএফ শহরটি ঘেরাও করে। মানবিজ শহর ঘেরাওয়ের পর এসডিএফ যোদ্ধারা অঅইএসের প্রধান সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এটি রাকা ও তুরস্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছিল। তুরস্ক সীমান্তে বিদ্রোহীরা এখনো যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শহর হচ্ছে মানবিজ। এটি হচ্ছে আইএসের জন্য তুরস্ক থেকে রসদ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ রুট। ব্রিটেনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রামি আবদেল রহমান গত শনিবার বলেছেন, হাজার হাজার মানুষ মানবিজ শহরের ভেতরে আটকা পড়েছে যারা বের হতে পারছে না এবং শহরের রুটির দোকানগুলো খোলা হচ্ছে না। খাদ্য এখন ওই শহরে দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে। গত ৩১ মে থেকে এসডিএফ যোদ্ধারা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ১৬০ আইএস সদস্য, ২২ এসডিএফ যোদ্ধা এবং ৩৭ জন বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের আইএসের ৩৩ স্থাপনা লক্ষ্য করে আর্টিলারি গোলা ছুড়েছে তুর্কি সেনাবাহিনী। আর আলেপ্পোর উত্তরাঞ্চলের দু’টি এলাকায় নয়টি হামলা চালিয়েছে পশ্চিমা জোট। তুরস্কের সেনাবাহিনী দাবি করছে, বিদ্রোহীরা তাদের ভ‚খÐে হামলার প্রস্তুতি নিতে থাকলে খবর পেয়ে আর্টিলারির গোলা ছুড়ে তাদের হটিয়ে দেওয়া হয়। আর পশ্চিমা জোট হামলা চালায় তাদের দমনাভিযানের অংশ হিসেবে। চলতি বছরের শুরুতে আইএসের মর্টারের গোলার আঘাতে তুরস্কে ২০ জনের প্রাণহানি হয়। তারপর থেকে সীমান্তে কড়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে আঙ্কারা।
অন্যদিকে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী সৈয়দা জয়নব শহরের একটি মসজিদের কাছে আত্মঘাতী বোমা ও গাড়িবোমা হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। সিরিয়ায় শিয়াদের প্রধান এই মসজিদটির কাছে চালানো হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা অন্তত আটজন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ জন বেসামরিক ও অপর সাতজন সরকারপন্থি বেসামরিক বাহিনীগুলোর সদস্য বলে জানিয়েছে অবজারভেটরি। হামলার এ ঘটনায় আরো ৫৫ জন আহত হওয়ার কথা জানিয়েছে বিবিসি। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে অবজারভেটরি। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ফুটেজে সৈয়দা জয়নব মসজিদের কাছে শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখা গেছে। এর আগে চলতি বছর একই এলাকায় চালানো আরো দুটি বোমা হামলার দায়ও স্বীকার করেছিল আইএস। ওই দুটি হামলায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। আইএস সমর্থিত বার্তা সংস্থা আমাক জানিয়েছে, তিন জঙ্গি হামলাটি চালিয়েছে; দুজন আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছে ও অপরজন গাড়িবোমা হামলা চালিয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সৈয়দা জয়নবে দুটি বোমা হামলা চালানো হয়েছে। একটি হামলা হয়েছে এলাকাটির প্রবেশ পথে এবং আল টিন সড়কে গাড়িবোমা হামলাটি চালানো হয়েছে। দুটি স্থানই মসজিদের কাছে অবস্থিত। হতাহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ও শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এসএএনএ। সোনালি রঙের গুম্বুজে শোভিত সৈয়দা জয়নব মসজিদ প্রাঙ্গণে নবী মোহাম্মদ (সা.)-এর নাতনী জয়নবের মাজার আছে। দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ সত্বেও প্রচুর শিয়া পুণ্যার্থী মসজিদটিতে নামাজ পড়তে ও জয়নবের কবর জিয়ারত করতে আসে। পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, আর প্রায় এক কোটি ১০ লাখ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।