Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিদেশি ঋণে সতর্ক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

চীনসহ বিদেশি যে কোনো ঋণ গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। দেশকে যাতে বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়তে না হয় সে জন্য ঋণ গ্রহণের আগে দর-কষাকষির ওপর জোর দেন তারা। গতকাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড : তুলনামূলক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সংলাপে বক্তারা এসব পরামর্শ দেন। রাজধানীর এক হোটেলে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সংলাপে অংশ নেয়া দেশের মন্ত্রী এবং বিশেষজ্ঞ বক্তারা বলেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ (বিআরআই) সম্প্রসারিত হলে বাণিজ্য সুবিধাসহ বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে প্রকল্প বাছাই ও বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ, ঋণের শর্ত- এসব বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন চীনা ঋণের ফাঁদে না পড়ে। বেল্টের সুযোগ-সুবিধার সবক্ষেত্রেই আরও বেশি দর-কষাকষি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চীনের অবস্থান মেনে নিতে হবে।

প্রথম অধিবেশনে সিপিডির চেয়ারম্যান বরেণ্য অর্থনীতিবিদ প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেন, বিআরআই বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে এবং ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। বিআরআইয়ের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা দরকার। তবে বিআরআইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যদেশের সঙ্গে যেন দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। প্রকল্পে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ যেন সমানভাবে উপকৃত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে বিচার-বিবেচনা ছাড়া প্রকল্প নিলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। একই সঙ্গে প্রকল্প হতে হবে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনায়।
ড. রেহমান সোবহান আরো বলেন, মার্কিনীরা যতই প্রচারণায় নামুক না কেন বাস্তবতা চীন বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যের নেতৃত্বে আছে। এর সঙ্গে অন্য দেশের সমন্বয় করে চলতে হবে। এটি এখন বিশ্ব অর্থনীতির নতুন ব্যবস্থা। তবে এটা যেন উপ-নিবেশবাদের মতো না হয়। এটা যেন অংশীদারত্বের ভিত্তিতে হয়। এতে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার সুযোগ আরও বাড়বে।

উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন বলেছেন, চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতার একটি প্লাটফর্ম। এটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ এ প্লাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে লাভবান হবে বলে আশা করছি। তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের প্রয়োজনেই এ দেশের অবকাঠামো, জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন। বিআরআই এই সুযোগ নেয়ার ফোরাম হতে পারে। তাই আমরা বিআরআই-এ যোগ দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা লাভবান হব। এ উদ্যোগে যোগ দেয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, যোগাযোগসহ নানা বিষয়ে সহযোগিতা বাড়বে।

পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, বাংলাদেশ যে কোনো ধরণের সামরিক জোটে যোগদান এড়িয়ে চলছে। তবে নিজেদের স্বার্থরক্ষা করেই অন্য জোটে যোগদান করছি। একই সঙ্গে বর্তমানে বিশ্ববাণিজ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক, ইউরো-এশিয়া ও বিআরআই উদ্যোগ আছে। আমরা সব উদ্যোগের সঙ্গে যাব। কোনো ক্ষতিকর কিছুর সঙ্গে থাকব না। যখন আমরা এসব নিয়ে দর-কষাকষি করব, তখন জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেব।
সংলাপে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমরা বাজার চাই, এটা সত্য। কিন্তু সবকিছু যাচাই-বাছাই করে নেয়া উচিত।

ওই সেশনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি তার বক্তব্যে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) শুরু থেকে নানা লক্ষ্য উদ্দেশ্য বিষয়ে আলোকপাত করেন। চীনের প্রেসিডেন্টের এই উদ্যোগের সুলফসহ অন্যান্য আলোচনা তুলে ধরেন মূল প্রবন্ধে। তিনি বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর মাধ্যমে আমাদের যে প্রস্তাবগুলো দেয়া আছে আমরা তা নেব। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে এই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের শর্তগুলোর দিকে। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে টেন্ডার থেকে শুরু করে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে, বিআরআই যে ঋণ দিচ্ছে সেই ঋণে সুদের হার যাতে কম হয়। আমরা কেন ৩ শতাংশ দেব? ঋণ যেন এক শতাংশের নিচে হয়। আমরা যাতে ঋণের ফাঁদে না পড়ি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হতে হবে রাজনীতির বাইরে গিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা।

সংলাপে আরো অংশগ্রহণ করেন সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, চীনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান, চীনের ইউনান অ্যাকাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রফেসর চেং মিন, ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রির মহাপরিচালক ড. শচীন চতুর্বেদী প্রমুখ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঋণ

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৫ জানুয়ারি, ২০২৩
২৯ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ