পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দখল, দূষণ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং চরম অব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানী বসবাসের উপযোগিতা অনেক আগেই হারিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইকোনোমিস্ট পত্রিকার ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) জরিপে বরাবরই বসবাসের অনুপযোগী হিসেবে ঢাকা চিহ্নিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি এ তালিকার তিন নম্বরে ঠাঁই পেয়েছে। এই যে বছরের পর বছর ধরে রাজধানী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে এবং দিন দিন তা অবনতির দিকে যাচ্ছে, তাতে রাজধানীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো টনক নড়ছে না। দেখে বুঝে মনে হচ্ছে, রাজধানীর কোনো অভিভাবক নেই। ঢাকার ফুটপাত দখল, চারপাশের নদী দখল, সড়কে বেপরোয়া যানবাহন-এসব নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে লোক দেখানো উদ্যোগ নিলেও, কিছু দিন না যেতেই যেইসেই অবস্থায় ফিরে যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে দায়িত্ব তার ছিঁটেফোটাও পরিলক্ষিত হয় না। যে যেভাবে পারছে, রাজধানীকে ব্যবহার করে চলেছে। রাজধানীর সীমাহীন সমস্যার মধ্যে নতুন উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাপসভিত্তিক মোটর সাইকেলের বেপরোয়া চলাচল। যানজট থেকে সময় বাাঁচিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছার জন্য শুরুর দিকে এই বাহনটি জনপ্রিয় হলেও এখন একশ্রেণীর বাইকারের বেপরোয়া মনোভাব ভয়াবহ বিপদের কারণ হয়ে উঠেছে। এসব বাইকার না মানে কোনো আইন কানুন, না মানে কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা। যে যেভাবে পারছে ছুটে চলেছে। ফলে যানজট সৃষ্টিসহ মারাত্মক দুর্ঘটনায় অহরহ প্রাণহানিও ঘটছে। অন্যদিকে ফুটপাত দখলের কারণে, কারোরই এ পথে চলার কোনো উপায় নেই। এ পরিস্থিতির প্রতিকার যাদের করার কথা, তাদেরও কোনো বিচলন নেই।
রাজধানীকে বসবাস এবং চলাচলের উপযুক্ত করা নিয়ে বহু পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। আইন-কানুনও পাস করা হয়। দুঃখের বিষয়, এসব পরিকল্পনা বাস্তবে দেখা যায় না। এক সড়কের কথাই যদি ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে অলি-গলি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ এমন কোনো সড়ক নেই যা অবৈধ দখলের কবলে নেই। ফুটপাত দখল তো আছেই, মূল সড়কও দখল হয়ে রয়েছে। ফুটপাতে হকার, আর সড়কে অবৈধ গাড়ি পার্কিং, স্থাপনা নির্মাণের উপকরণ, সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিন রেখে দখল করে রাখা হয়েছে। এই সময়ে রাজধানীর দিকে দৃষ্টি দিলে মনে হবে এটি কোনো দুর্গম এলাকা যেখানে গাড়ি দূরে থাক, পায়ে হেঁটেও চলাচলের উপায় নেই। এক মেট্রোরেল নির্মাণযজ্ঞের কারণেই রাজপথ সরু গলিতে পরিণত হয়েছে। এই সরু গলিতে আবার সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও অন্যান্য সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কেটেচিরে একাকার করে ফেলেছে। তাহলে যান চলাচল করবে কিভাবে? সরকারের মনোভাব এমন যে, উন্নয়ন চাইলে এমন কষ্ট সইতে হবে। উন্নয়ন সকলেই চায়, তবে তা করতে গিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ যাতে কিছুটা হলেও সহনীয় রাখা যায়, এই ব্যবস্থাও তো থাকা জরুরি। অল্প জায়গায় কীভাবে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করা যায়, তার উদ্যোগ আগে থেকে নিলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ফুটপাত দখলমুক্ত এবং হাঁটাচলার উপযুক্ত করা, ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা সুদৃঢ় করার মাধ্যমে যানবাহনকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা এবং সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর রাস্তা
খোঁড়াখুঁড়ি সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে করা গেলে এই জটিলতা সৃষ্টি হতো না। আমরা লক্ষ্য করছি, রাজধানীতে এসব শৃঙ্খলার কোনো বালাই নেই। চলাচলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সড়ক ব্যবস্থাপনা তা নেই বললেই চলে। যে ট্র্যাফিক পুলিশের এ দায়িত্ব পালন করা দরকার তাদের বেশিরভাগই গাড়ি চেকিংয়ের নামে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। এমনিতেই সরু রাস্তা তার উপর গাড়ি থামিয়ে তাদের চেকিং যানজটকে যেমন তীব্র করে তুলছে, তেমনি এ সুযোগে বেপরোয়া চালকরা যেভাবে খুশি সেভাবে গাড়ি চালিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। মটর সাইকেল ফুটপাতে উঠে যাচ্ছে, যাত্রীবাহী যানবাহন যেখানে সেখানে থামাচ্ছে, পথচারিরা তাদের ইচ্ছামতো রাস্তা পার হচ্ছে। এমন অরাজকতা বিশ্বের আর কোনো রাজধানীতে আছে কিনা, আমরা জানি না। ঢাকার ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত করার কত যে উদ্যোগ আমরা দেখেছি, তার কোনো হিসাব নেই। সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে বেশ হম্বিতম্বি করে ফুটপাত দখলমুক্ত করে। দেখা যায়, চব্বিশ ঘন্টা পার না হতেই তা আবার দখলে চলে যাচ্ছে। বিষয়টি অনেকটা ইঁদুর-বেড়াল খেলার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। দখলদাররা যে সিটি করপোরেশনের চেয়ে শক্তিশালী তা ফুটপাত দখল করে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ফুটপাত দখলকারীদের মধ্যে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি নিয়ে এক ধরনের অলিখিত চুক্তি রয়েছে। অর্থাৎ ফুটপাত দখল, যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল থেকে শুরু করে সড়কের যত অনিয়ম রয়েছে, তা যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যর দুর্নীতি এবং কর্তব্যে অবহেলার জন্য সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সীমিত জায়গা ও সড়কের মধ্যেও যদি সঠিক পরিকল্পনা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন থাকে তবে রাজধানীকে গতিশীল করা যে অসম্ভব নয়, তা নগরবিদরা বহুভাবে বলেছেন। শুধু ফুটপাত দখলমুক্ত এবং সড়কে যানবাহন চলাচল সুশৃঙ্খল করা গেলে সমস্যার অনেকখানি সমাধান সম্ভব। দুঃখের বিষয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে এমন মনোভাব, যেভাবে চলছে চলতে থাকুক, আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। আমাদের দায়িত্ব কিভাবে জনগণের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যায়। রাজধানীর বর্তমান চিত্র দেখলে যে কেউ তাদের এই মনোভাব বুঝতে পারবে। আমাদের কথা হচ্ছে, রাজধানীর এই বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা আর চলতে দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনসহ আইনশঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সক্রিয় হতে হবে। কারণ জনগণের ট্যাক্সের অর্থে তাদের গড়ে তোলা হয়েছে জনগণের সেবার জন্য। সমস্যার সমাধান না করে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করার জন্য নয়। আমরা আশা করব, সিটি করপোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে। রাজধানীর চলমান সংকট নিরসনে সীমাবদ্ধ পরিস্থিতিতেও যাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে কিছুটা হলেও স্বস্তির পরিবেশ
নিশ্চিত করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।