Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছাঁটাইকৃতরা ফিরে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করছে দুর্বল গ্রামীণ অর্থনীতিতে

বিক্রি হ্রাসের ফলে ভারতের গাড়ি নির্মাণ শিল্পে মন্দা

রয়টার্স | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ভারতের নয়াদিল্লির দক্ষিণ উপকন্ঠে মানসিয়ারের আলিয়ার ও কাসান গ্রামের সঙ্কীর্ণ গলিগুলো রোববারে সচরাচর অভিবাসী শ্রমিকদের ভিড়ে পূর্ণ থাকত। এটি গাড়ি তৈরির এলাকা। তাই আশপাশের কারখানাগুলোর সব শ্রমিক আসত এখানে। কিন্তু এখন আর তা হয় না। অবস্থা পাল্টে গেছে।

ভারতে বৃহত্তম বাজার-শেয়ার সম্পন্ন গাড়ি নির্মাতা মারুতি সুজুকি এবং মোটর বাইক নির্মাতা হোন্ডা মোটর কোম্পানির রমরমা অবস্থার উপর নির্ভরশীল এলাকাটি এখন কঠিন সময় পার করছে। মানসিয়ার ও আশপাশের অটো ও যন্ত্রাংশ নির্মাতারা হাজার হাজার মানুষকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছেন। এ সব চাকরিচ্যুতরা নিজ নিজ গ্রামে ফিরে গিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছেন গ্রামীণ অর্থনীতির উপর।

শিল্প সূত্রের হিসাব মতে, দেশব্যাপী যন্ত্রাংশ নির্মাতা ও ডিলাররা গাড়ি বিক্রি হ্রাস পাওয়ার পরিণতিতে বছরের শুরু থেকে সাড়ে তিন লাখ কর্মী ছাঁটাই করেছেন। জুলাই মাসের মত আগস্টেও বিক্রির পরিমাণ ৩০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। এ নিয়ে একটানা দশম মাস বিক্রি হ্রাস চলছে।

গাড়ি নির্মাণ খাতে এই সঙ্কট মানসিয়ার ও তার আশপাশের গ্রামগুলোতে ক্ষুদ্র ব্যবসার উপর কঠিন কামড় বসাচ্ছে। মানসিয়ার হচ্ছে মারুতি সুজুকি গাড়ি নির্মাণের তিনটি কারখানার অন্যতম যে ব্যবসায় চলছে অব্যাহত মন্দা।

মুদি ব্যবসায়ী রাহুল জৈন বলেন, গ্রামগুলোতে অল্পসংখ্যক কর্মী বাস করছেন। যারা চাকরিতে আছেন তারাও ওভারটাইমের মজুরি পাচ্ছেন না। তারা শঙ্কায় রয়েছেন যে তাদের চাকরি যে কোনো সময় চলে যেতে পারে। তখন তাদের টাকা দরকার হবে বলে এখন খরচ একদম কমিয়ে ফেলেছেন। তার দোকানের তাকগুলো ভারতের হিন্দুস্থান ইউনিলিভারস, কোলগেট, পাম অলিভ ও ডাবুরের মত সুবিখ্যাত ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর টুথপেস্ট ও সাবান প্রভৃতি পণ্যে ঠাসা।

শুধু বিলাস পণ্যই নয়- রান্নার তেল ও আটার মত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বিক্রিও কমে গেছে। এর নেতিবাচক প্রভাবে নিম্ন পর্যায়ের সেবামূলক খাত যেমন নাপিতের খদ্দের বা চা দোকানের মালিকদেরও খদ্দেরের সংখ্যা কমেছে।

মানসিয়ারের আলিভার গ্রামের জুতা বিক্রেতা সুভে সিং বলেন, এমনও দিন যাচ্ছে যে একজোড়া জুতাও বিক্রি হচ্ছে না। আমার মাসিক আয় অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এক বছর আগেও আমার দোকানে দৈনিক বিক্রির পরিমাণ ছিল আট হাজার রুপি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কী ঘটছে বুঝতে পারছি না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি পুরনো প্রবাদ আছে, জেনারেল মোটরস যদি হাঁচি দেয় ওয়াল স্ট্রিটের সর্দি লাগে। ভারতেও সে ভাবে শেয়ার বাজারের বাইরে প্রভাব পড়ে। ভারতের মোটরগাড়ি শিল্প বিশ্বে চতুর্থ। এতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কর্মরত সাড়ে তিন কোটি মানুষ। তাদের উৎপাদনের পরিমাণ ভারতের নির্মাণ শিল্পের প্রায় অর্ধেক।
ভারতের মোটরগাড়ি শিল্পের প্রধান কেন্দ্র তিনটি : উত্তরে গুরুগ্রাম, দক্ষিণে চেন্নাই যেখানে রয়েছে ফোর্ড মোটরস ও হুনদাই মোটর এবং পশ্চিমে পুনে যেখানে রয়েছে টাটা মোটরস ও ফিয়াট। তাদের সবাই ক্ষতির শিকার। আর সে বেদনা ছড়িয়ে পড়ছে সীমানার বাইরেও।

গাড়ি বিক্রিতে মন্দার কারণে ক্ষতির শিকার হওয়ার আগে অটো ইন্ডাস্ট্রি গাড়ি নির্মাণের ব্যাপারে কিছু ভালো বিষয়ের একটি চালু করেছিল। কিন্তু তাদের সমস্যা শুরু হয় আংশিক ভাবে যখন ব্যাংকিং ও নন ব্যাংকিং অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তাদের ঋণ দিতে অনীহা প্রদর্শন এবং পাশাপাশি বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় চাহিদা সঙ্কুচিত করে ফেলে যেখানে ভারতের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের বসবাস।

ছাঁটাইকৃত শ্রমিকরা গ্রামে ফিরে এসে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা ইতোমধ্যেই ফসলের কম মূল্য পেয়ে ধুঁকছে। যার পরিণতিতে ভোক্তা মনোভাব ও দেশব্যাপী প্রবৃদ্ধি উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। (পরের সংখ্যায় শেষ হবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ