Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী দর্শনে নারী শিক্ষার গুরুত্ব

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সুস্থ পারিবারিক, সামাজিক ও নাগরিক জীবন গঠনের জন্য প্রত্যেক মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। উপযুক্ত শিক্ষালাভই এ লক্ষ্য অর্জনে প্রথম পদক্ষেপ। তাই পবিত্র ইসলাম ধর্মে শিক্ষার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ আদি মানব হযরত আদম (দঃ) কে সৃষ্টি করে ধুলির ধরায় তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠানোর পূর্বে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন (আল কোরআন-২ ঃ ৩০, ৩১)। ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কোরআনের সর্ব প্রথম প্রত্যাদেশ পাঠ কর, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে। পাঠ কর। তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি অতি দানশীল। তিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন; শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না (৯৬ ঃ ১, ২, ৩, ৪, ৫ )। এভাবে বিশ্বপ্রভু মানুষকে সর্বাগ্রে লেখাপড়া শেখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও তাঁর অনুসারীদের জ্ঞানার্জনের জন্য কঠোর সাধণায় ব্রতী হতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর। তিনি তাঁর আরও অনেক বাণীতে জ্ঞান সাধনার জন্য মানুষ জাতিকে অনুপ্রাণিত করে গেছেন। যেমন মহানবীর ঘোষণা ঃ ১। যে জ্ঞানান্বেষণ করে সে আল্লাহকে অন্বেষণ করে ২। যে ব্যক্তি জ্ঞানান্বেষণে বহির্গত হয় সে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে ৩। জ্ঞান চর্চা আল্লাহর কাছে নামাজ, রোজা হজ ও জেহাদ অপেক্ষা অধিকতর পূণ্যকর কাজ। জ্ঞানসাধকের যথোপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করতে মহানবীর দীপ্তকন্ঠে ঘোষণা - জ্ঞান সাধকের দোয়াতের কালি শহিদের রক্তের চেয়ে পবিত্র। এভাবে আল্লাহর রসুল উ¤মীনবী মুহাম্মদ (দঃ) জ্ঞান শিক্ষা, চর্চা তথা সাধনার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে গেছেন আজ থেকে ১৪০০ বছরেরও বেশি আগে মরু আরবের বুকে।

ইসলাম শুধুমাত্র একটি আচার সর্বস¦ ধর্ম নয়। এটি বরং এক সুসংহত ও মহান জীবন বিধান। তাই ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেছে ইসলাম। মহানবীর ঘোষণা ছিল, ইহকাল পরকালের শস্যক্ষেত্র। তাই এ শস্য ক্ষেত্রের সদ্ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত জাগতিক জ্ঞান আহরণ অত্যাবশ্যক। আত্মপরিচয় ও অস্তিত্ব রক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি উন্নত ও মর্যাদা সম্পন্ন নাগরিক জীবন গঠনের জন্য সাধারণ শিক্ষাক্ষেত্রেও উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণ অপরিহার্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রসুলের সে মহান বাণী অতিশয় প্রাসঙ্গিক-জ্ঞান অন্বেষণ কর, যদি তার জন্য সুদূর চীন দেশে যেতে হয়। অর্থাৎ জ্ঞান বিজ্ঞানের উচ্চতর পঠন পাঠনের জন্য প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণ করতেও নির্দেশ করে গেছেন বিশ্বনবী (দঃ)।

আর যে শিক্ষায় মানুষের কোনও কল্যাণ সাধিত হয় না, যে শিক্ষায় মানুষ পথভ্রষ্ট হয়, সে শিক্ষা ইসলামের শিক্ষা নয়। তাই মহানবী সাবধান বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, কুলেখক কুকর্মীর তুল্য। শিক্ষিত মানুষের মধ্যে তারা সর্বাপেক্ষা অধম। এভাবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বাণীতে মানব জাতিকে কল্যাণমুখী শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত জীবন গড়ে তুলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইসলামি জীবনদর্শনে নারী জাতিকে কখনও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিতে দেখা হয়নি। বরং সর্বত্র নারী ও পুরুষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা হয়েছে। মহাগ্রন্থ কুরআনে স্বামী-স্ত্রীকে পরষ্পরের সমতুল্য করে ঘোষণা করে বলেছেন- তোমরা একে অপরের ভূষণ স¦রূপ। অধিকন্তু স্ত্রীর সম্মানে মহানবীর বাণী- তোমাদের মধ্যে তারাই সর্বোত্তম যারা তাদের নিজ নিজ স্ত্রীর কাছে সর্বোত্তম। আবার মায়ের মর্যাদা প্রদান করে রসুল ঘোষণা করেছেন- তোমাদের বেহেস্ত তোমাদের নিজ নিজ মায়ের পদতলে। নরনারীর পারপারিক অবস্থান সম্পর্কে ঐশীগ্রন্থ কুরআনে অনেক বাণী রয়েছে। যেমন-

১. তিনি সৃষ্টি করেছেন যুগল পুরুষ ও নারী খলিত শুক্রবিন্দু থেকে (৫৩ ঃ ৪৫, ৪৬ )। ২. বিশ্বাসী হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে আমি তাকে নিশ্চয়ই আনন্দপূর্ণ জীবন দান করব। আর তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব(১৬ ঃ ৯৭ )। ৩. আমি তোমাদের মধ্যে কোনও কর্মনিষ্ঠ পুরুষের বা নারীর কর্ম বিফল করি না। তোমরা পরষ্পর সমান( ৩ ঃ ১৯৫ )। ৪. পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য আর নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য (৪:৩২)। ৫. বিশ্বাসী নর নারী একে অপরের বন্ধু (৯:৭১) ৬. আল্লাহ বিশ্বাসী নর ও নারীকে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন (৯:৭২)। ৭. হে মানবজাতি, আমি তোমাদের এক পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমারা একে অপরকে চিনতে পার (৪৯ঃ১৩)। ৮. ‘নিশ্চিয়ই আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীতপুরুষ ও বিনীতনারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোজাব্রত পালনকারী পুরুষ ও রোজাব্রত পালনকারী নারী, যৌনসংযমী পুরুষ ও যৌন সংযমী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন’ (৩৩ঃ৩৫)।

পবিত্র কুরআনে বার বার মানুষকে পড়াশোনা করতে, জ্ঞানার্জনে ব্রতী হয়ে আল্লাহর সৃষ্টিকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে বলা হয়েছে, কিন্তু কোথাও জ্ঞান শিক্ষার যোগ্যতা এককভাবে পুরুষদের দেওয়া হয়নি। আর সে জন্য বিশ্বনবী দ্বিধাহীনভাবে ঘোষণা করেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ (অবশ্য কর্তব্য)। তাঁর অনুসারীরা মুর্খ হোক এমনটা কামনা করেননি আল্লাহর রসুল। তাই তিনি সাবধান করে বলেছিলেন, মুর্খতা অপেক্ষা বড় দারিদ্র আর নেই। জ্ঞানীর নিদ্রা মুর্খের উপাসনা অপেক্ষা উত্তম।

আমাদের দেশে মাত্র ক’বছর আগে ছয় থেকে চৌদ্দ বছর বয়স পর্যন্ত সকল ছেলে মেয়েদের জন্য সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। অথচ ১৪০০ বছর আগে আরবের মাটিতে উম্মী নবী (স.) নারী পুরুষ নির্বিশেষে শিক্ষা গ্রহণকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীর অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগের বিদূষী নারীরা শিক্ষা ক্ষেত্রে উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। রসুলুল্লাহ (স.) কে শিক্ষানুরাগী মহিলারা একবার বললেন, আপনি জ্ঞানশিক্ষা দেওয়ার জন্য সব সময় পুরুষদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকেন। তাই আমাদের জন্য একদিন নির্দিষ্ট করলে ভাল হয়। মহানবী তদনুসারে তাদের জন্য শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন, এমনকি তিনি প্রতিনিধি পাঠিয়েও নারীদের শিক্ষা দিতেন। ফল স¦রূপ অনেক মহিলা পন্ডিতের উদয় হয়েছিল যারা ইসলামের মহান শিক্ষা প্রচারে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- হযরত আয়েশা, উন্মে সালমা, ফাতিমা বিনতে কায়েস, সাফিয়া, সৈয়িদা নাফিসা, উন্মে আদদারদা, আয়শা বিনতে সাদ, জয়নাব বিনতে সালমা, রসুলের কন্যা ফাতেমা জোহরা, উন্মে আতিয়া, শিমা, সাকিনা, উন্মে সারিক, উন্মে ইউসুফ প্রমুখ। ইসলামী দর্শন ছাড়া অন্যান্য বিষয়েও পারদর্শী ছিলেন তখনকার অনেক মহিলা। এমনকি চিকিৎসা বিজ্ঞানেও মহিলাদের যথেষ্ট অবদান ছিল। খলিফাদের শাসনকালেও নারীরা শিক্ষা দীক্ষা, সাহিত্য ও কাব্যচর্চা এমনকি সমাজ সেবায়ও অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেছেন। হিজরী পঞ্চম শতাব্দীতে শয়খা শুহদা যিনি ফখরুন্নেসা (নারীকূলের গৌরব) উপাধি পেয়েছিলেন, বাগদাদের কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশাল জনসমাবেশে সাহিত্য, অলঙ্কার শাস্ত্র ও কাব্য স¤পর্কে বক্তৃতা করেছিলেন।

অতএব এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, ইসলামী দর্শন নারী শিক্ষার উৎসাহ দাতা ও পথ প্রদর্শক। ইসলামে নারী শিক্ষার সুযোগ সীমিত- এমন বহুল প্রচারিত ধারণা স¤পূর্ণ ভুল। মানব জাতির অর্ধাংশ নারী জাতিকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রেখে কোনও জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। কারণ নারী ও পুরুষ এ মানব সমাজের এক চাকা দুর্বল হলে তার গতি শ্লথ হতে বাধ্য। নিজেদের অজ্ঞানতা হেতু এ উপমহাদেশের মুসলিম সমাজ ইসলামের প্রাথমিক যুগের নারীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অংশ গ্রহণের উজ্জ¦ল ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে যান। তাই এ দেশে নারী শিক্ষা বলতে অর্থ না বুঝে তোতাপাখির মতো কোরআন পাঠই মুসলিম নারীর শিক্ষার মানদন্ড হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষভাবে অযোগ্য সমাজ কর্তাদের দূরদর্শিতার অভাবে এ দেশে নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী আর্দশের যথোপযুক্ত মূল্যায়ন হয়নি। ফল স্বরূপ অগণিত মুসলিম মহিলা অজ্ঞানতার নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে এক করুণ জীবনযাপন করছেন এবং সমগ্র সমাজকে পশ্চাৎ দিকে টেনে ধরে রেখেছেন। এরা সমাজের নিকট এমন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন যে, এদেরকে সঙ্গে নেওয়াও যাচ্ছে না, ফেলে দেওয়াও যাচ্ছে না। আধুনিক যুগে মানুষের মেধা ও কর্মক্ষমতাকে স¤পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অতএব নারীদের উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত রাখা নিঃসন্দেহে মানব স¤পদের অপচয়।

নারী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তার জন্য যথোপযুক্ত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক। অথচ আল্লাহর দাসীদের জ্ঞানশিক্ষা থেকে বঞ্চিত রেখে যুগ যুগ ধরে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রাখা হয়েছে, যা এক ধরনের জাতীয় অপরাধ বললে বোধ হয় ভুল হবে না। উপযুক্ত মানুষ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ নারীর ন্যায্য অধিকার, যা ইসলামী পরিভাষায় হক্কল এবাদত- এর পর্যায়ে বিবেচনা করা সমীচীন বলে মনে হয়। সুস্থ মাতৃত্ব, সন্তান পালন, সন্তানের শিক্ষা, পরিবার পরিচালনার জন্য নারীকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতেও শিক্ষার প্রয়োজন অনস্বীকার্য। মুসলিম সমাজেও মহিলা শিক্ষক, অধ্যাপক, চিকিৎসক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, বাস্তুকার, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, প্রযুক্তিবিদ ইত্যাদির প্রয়োজনীয়তা কি অস্বীকার করা যায়? সুতরাং যতদূর সম্ভব ইসলামী জীবন বিধান প্রদত্ত সীমারেখা ও অনুশাসন মেনে নারীর জন্য উপযুক্ত শিক্ষা তথা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। ধর্মীয় শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য কোরআন তফসীর, হাদিস, ফেক্বাহ ইত্যাদি শাখায় তাদের জন্য পঠন-পাঠনের বিশেষ ব্যবস্থা করা একান্ত প্রয়োজন। এমন কি সুস্থ মাতৃত্বের জন্য মেয়েদের পৃথক শিক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে।

আমাদের দেশে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে নারীর উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। মুসলিম নারীর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় শিক্ষার তেমন কোনও উদ্যোগ নেই বললেও চলে। শুধুমাত্র শৈশব তথা বাল্যাবস্থায় মসজিদ মক্তবে সামান্য প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত ও অসংগঠিত। কিন্তু মুসলিম পুরুষদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে রয়েছে। তাই ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত নারী সমাজ গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা মাদ্রাসা স্থাপন একান্ত আবশ্যক। এসব মাদ্রাসায় কারিগরী ও ইংরেজি শিক্ষার ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে। এমনকি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মহিলাদের জন্য ইসলামী শিক্ষার সুযোগ করে দিতে বিশেষ পাঠ্যক্রম চালু করা যেতে পারে।

নারী শিক্ষার প্রধান অন্তরায় হল উপযুক্ত পরিবেশের অভাব। নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে কোনও ধরনের শিক্ষা গ্রহণকে ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্তু পরিবেশের দোহাই দিয়ে জাতির অর্ধাংশকে অজ্ঞানতার অন্ধকারে রাখা আত্মঘাতী বলা যায়। পরিবেশ তো আর আপনা থেকে সৃষ্টি হয় না, পরিবেশ গড়তে হয়। পবিত্র কোরআনের ঘোষণা-যদি কোনও সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন তা পরিবর্তন করবেন (৮:৫৩)।

অনেকে ভাবেন, পর্দাপ্রথা নারী শিক্ষা, নারী প্রগতির অন্তরায়। কিন্তু ইসলামের পর্দা নারীর মান, স¤মান সম্ভ্রম ও ব্যক্তিত্বর পরিচায়ক। কিন্তু যখন থেকে পর্দার নামে অবরোধ প্রথা চালু করে নারীদের গৃহবন্দী করে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করা হল তখন থেকে মুসলিম জাতির অগ্রগতি ব্যাহত হল এবং কালক্রমে তারা পশ্চাদপদ জাতিতে পরিণত হতে লাগলো। গণমানুষের কবি কাজী নজরুলের ভাষায়-আধাঁর হেরেমে বন্দিনী হলো সহসা আলোর মেয়ে সেই দিন হতে ইসলাম গেল গ্লানির কালিতে ছেয়ে।

পর্দা প্রথার দোহাই দিয়ে মুসলিম নারী সমাজকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করা ইসলামের অনিন্দ্যসুন্দর জীবন বিধানের অবজ্ঞা বৈ কিছুই নয়। নারীদের মুর্খ রেখে মুসলমান সম্প্রদায়কে দরিদ্র, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অনগ্রসর তথা অনুন্নত শ্রেণীতে পরিণত করার অধিকার সমাজকর্তাদের দেয়নি মানবধর্ম ইসলাম। মুসলিম নারী সমাজে কোরআন নির্দেশিত পর্দা প্রথার প্রচলন অত্যাবশ্যক। আধুনিকতার নামে উলঙ্গপনা নয়, পবিত্র কুরআনের শিক্ষার আলোকে শালীনতাপূর্ণ পোশাক পরিধান করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে যথাযোগ্য অংশগ্রহণ করার মধ্যে রয়েছে মুসলিম নারীর প্রকৃত মুক্তি। দ্রুত পরিবর্তনশীল আধুনিক সমাজে মুসলিম নারীদেরও চিন্তা চেতনায় পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে। তাই সামাজিক কুসংস্কারকে ঝেড়ে ফেলে মুসলিম নারীরাও আজ স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও পর্দাপণ করছে। পুরুষরাও প্রয়োজনানুসারে সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শিক্ষার অভাব হেতু আরেক নতুন সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে। কারণ আদর্শহীন ও নৈতিকতাবর্জিত শিক্ষিত পুরুষদের মতো শিক্ষিত নারীও সমাজের কাম্য নয়। জনৈক শিক্ষা বিশেষজ্ঞের পষ্ট বক্তব্য, কুশিক্ষিত হওয়ার চেয়ে অশিক্ষিত থাকাই ভাল। তাই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধ শিক্ষায় মুসলিম নারীদের উদ্বুদ্ধ করা ও এর জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া আজ সময়ের আহ্বান বলা যায়।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন