পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বামী এইচ এম এরশাদের সঙ্গে স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে বিরোধ ছিল ২০ বছর। এই দীর্ঘ সময় তারা আলাদা বসবাস করেন। তারেক রহমানকে খুশি করতে রওশন এরশাদ ২০০৭ সালে এরশাদকে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কার করে নিজেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। মহাসচিব করেন গোলাম মসিহকে। এক যুগ পর দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে রওশন এরশাদ নিজেই দলের চেয়ারম্যান হলেন।
গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেও স্বামীকে বহিষ্কারের মতো দেবরকে বহিষ্কার করেননি। করেছেন দলের কো-চেয়ারম্যান। সংবাদ সম্মলন করে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় দলের একাধিক নেতা বলছেন, জাতীয় পার্টি রওশন চোরাবালিতে পড়ে যাচ্ছে। এরশাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ২০০৭ ও ২০১৪ সালে রওশন চোরাবালিতে পড়ে দল স্বকীয়তা হারিয়ে গণবিচ্ছিন্ন হয়েছে।
এদিকে গঠনতন্ত্রের ২০/ধারা ক উপধারার উদ্ধৃতি করে জিএম কাদের বলেছেন, এরশাদ তার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে আমাকে নির্বাচিত করেছেন। গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার ক উপধারায় বলা আছে, চেয়ারম্যান জাপার যে কেনো ব্যক্তিকে নিয়োগ ও নিজের স্থলাভিষিক্ত করতে পারবেন। এইচ এম এরশাদ আমাকে তার স্থলাভিষিক্ত করে গেছেন। বিরোধীদলীয় নেতার পদের জন্য স্পিকারকে চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা যা করেছি তা আইনসম্মতভাবে করেছি। গঠনতন্ত্র মোতাবেক করেছি। চিঠি দেয়ার আগে দলের এমপিদের কাছে জানতে চেয়েছি কার প্রতি তাদের আস্থা আছে। ২৫ জন এমপির মধ্যে ১৫ জন আমার পক্ষে রয়েছেন। এর আগে জাতীয় সংসদে দলের নেতা এরশাদ দিয়েছেন, এমপিদের মতামতের ভিত্তিতেই দিয়েছেন।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করে সংসদে চিঠি দেন দলের কয়েকজন এমপি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আদেলুর রহমান, নাজমা আক্তার, শরিফুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম জিন্না সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তরে গিয়ে এই চিঠি দেন। ৪ সেপ্টেম্বর জিএম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা না করার আবেদন জানিয়ে স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দেন রওশন এরশাদ।
রওশন এরশাদ নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণার পর ওই সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আগামী ৬ মাসের মধ্যে দলীয় সম্মেলন করে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হবে। একই সাথে দলীয় কো-চেয়ারম্যান হিসেবে জিএম কাদেরকে তার সম্মান রক্ষারও আহŸান জানানো হয়। এ সময় সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, মজিবুল হক চুন্নু, নাসিম ওসমান, ফখরুল ইমাম, লিয়াকত হোসেন খোকা, নুরুল ইসলাম ওমর উপস্থিত ছিলেন। রওশন এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি কি আবার ভাঙতে যাচ্ছে? অতীতে জাপা ভেঙেছে। আসুন সবাই মিলে পার্টিকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করি।
জিএম কাদের দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এরশাদের বিভিন্ন নির্দেশনা পাঠ করে শোনান। তিনি বলেন, রওশন এরশাদকে সম্মান করি, যতটুকু শুনেছি, তিনি নিজে থেকে নিজের কথা বলেননি। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাপা ভাঙেনি, ভাঙনের মুখে পড়েনি।
উল্লেখ্য, ১৪ জুলাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর ৪ দিন পর ১৮ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। এরপর ২৩ জুলাই জিএম কাদেরকে চেয়ারম্যান হিসেবে অস্বীকার করে বিবৃতি দেন রওশন এরশাদসহ দলের ৭ জন সংসদ সদস্য।
মূলত স্বামী এরশাদ ও স্ত্রী রওশন এরশাদের বিরোধের জের ধরেই বর্তমানের দেবর জিএম কাদের ও ভাবী রওশন এরশাদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে য্দ্ধু। স্বামী এরশাদ ও স্ত্রী রওশনের রাজনীতি নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে ২০০৭ সালে। রওশন এরশাদ ছিলেন বিএনপির অনুগত এবং তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের লোক। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে ইস্যু করে এরশাদ ও রওশনের পারিবারিক বিরোধ রাজনৈতিক বিরোধে রূপ নেয়।
এরশাদ আন্দোলনরত আওয়ামী লীগের পক্ষে মহাজোটে যান আর রওশন বিএনপির ইচ্ছানুযায়ী প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে লাঙ্গলের প্রার্থী দেন। সে সময় জাতীয় পার্টি থেকে স্বামী এরশাদকে বহিষ্কার করে রওশন এরশাদ নিজে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও গোলাম মসিহকে (বর্তমানে সউদী আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত) মহাসচিব করেন। এরশাদও বাধ্য হয়ে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেন।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ ও গাইবান্ধা থেকে ৩টি আসনে প্রার্থী হয়ে রওশন পরাজিত হন। এরশাদের ছেড়ে দেয়া রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে রওশন এমপি হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করে স্বামী এরশাদকে কৌশলে চিকিৎসার নামে সিএমএইচ-এ থাকতে বাধ্য করে নির্বাচনে অংশ নেন।
অতঃপর স্বামী এরশাদকে ল্যাং মেরে রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হন। স্বামী-স্ত্রীর সবশেষ বিরোধ নতুন রূপ নেয় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ভাই জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান করায়। এই সিদ্ধান্তে স্বামী এরশাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রওশন। ভাঙনের মুখে পড়ে দল। শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে ভাঙন ঠেকানা হয়।
স্বামী-স্ত্রীর এই বিরোধের কারণে রওশন এরশাদ কখনোই অসুস্থ স্বামী এরশাদের খোঁজ নেননি। দীর্ঘ ২০ বছর আলাদা বাসায় বসবাস করেছেন এবং এরশাদ অসুস্থতায় কোনোদিন খোঁজ নেননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অসুস্থ এরশাদ চিকিৎসার জন্য কয়েক বছর ঢাকা-সিঙ্গাপুর দৌড়ঝাঁপ করছেন। মাসের পর মাস বিছানায় পড়ে ছিলেন। প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় একা থাকায় রাতে ভয় পেলে সিএমএইচে চলে গেছেন।
স্ত্রী রওশন এরশাদ কখনো অসুস্থ স্বামীকে দেখতে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় যাননি। ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর ৪ দিন আগে ১০ জুলাই একটি সাদা কাগজে সই নেয়ার জন্য স্বামী এরশাদের কাছে সিএমএইচে যান। অতঃপর গত ৩১ আগস্ট এরশাদের চেহলামে হেলিকপ্টার ভাড়া করে রংপুর যান। সেখানে এরশাদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মৃত স্বামীর জন্য হাউমাউ করে কেঁদে বলেন, ‘ওনাকে (এরশাদ) ওঠাও। উনি মাটিতে শুয়ে আছেন কেন। ওনাকে মাটি থেকে উঠাও। মাটি থেকে তোলো। আমি ওনার পাশে শুয়ে থাকতে চাই, উনি যদি না আসে তাহলে আমাকেও ওনার পায়ে শুয়ে রাখো’।
রওশনের এই কান্না দেখে জাপার অনেক নেতা বিক্ষুব্ধ হন এবং প্রশ্ন ছুড়ে দেন ‘স্বামী এরশাদকে যদি এতই ভালোবাসতেন তাহলে ২০ বছর স্বামী-স্ত্রী আলাদা বাসায় বসবাস করলেন কেন? মূলত জাতীয় পার্টির নিজস্ব কোনো রাজনীতি নেই। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগের মতোই দলটি দীর্ঘ ৬ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দলটির কর্মকৌশল সম্পর্কে নির্দেশনা দেন। জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় দলটির কার্যত কোনো গণভিত্তি নেই।
এ অবস্থায় জিএম কাদের ও রওশন এরশাদ দু’জনই গতকাল বলেছেন, জাতীয় পার্টি ভাঙেনি এবং দলে কেউ ভাঙন ধরাতে পারবে না। এরশাদের মৃত্যুর পর সত্যিই দলটি কি নিজেদের ঐক্য ধরে রাখতে পারবে? কারণ পরমুখাপেক্ষী রাজনীতির কারণে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর দলটি বেশ কয়েকবার ভাঙনের কবলে পড়েছে। দলটি প্রথম ভাঙনের মুখে পড়ে ১৯৯১ সালে মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে বসানোর সময়। শামসুল হুদা চৌধুরী ও ডা. এম এ মতিন জাপাকে দ্বিখÐিত করে পৃথক ‘জাতীয় পার্টি জাতীয়তাবাদ’ গঠন করেন।
অতঃপর এরশাদের সঙ্গে বিরোধের কারণে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও কাজী জাফর আহমদ দল ভেঙে পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন। এর কিছুদিন পর আওয়ামী লীগের সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকা প্রশ্নে বিরোধে মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বের হয়ে আলাদা জাতীয় পার্টি ঘোষণা করেন।
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে আরেক দফা ভাঙেন নাজিউর রহমান মঞ্জু, ডা. এম এ মতিন ও কাজী ফিরোজ রশিদ। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ঝামেলার একপর্যায়ে এম এ মতিন আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করেন। এক-এগারোর সময় ২০০৭ সালে রওশন এরশাদ পৃথক জাতীয় পার্টি গঠন করেন।
সর্বশেষ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে ভাঙন ধরান তার পুরনো রাজনৈতিক সহকর্মী কাজী জাফর আহমদ। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর কাজী জাফর এরশাদকে ছেড়ে আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করে যোগ দেন বিএনপি জোটে। দলের চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ নিয়ে জিএম কাদের ও রওশন এরশাদের এই বিরোধ দলকে আবার ভাঙনের মুখে ফেলে দেয় নাকি সঙ্কটের নিরসন হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, রওশনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। সুবিধাবাদী কিছু নেতাই তাকে নিয়ে খেলছে। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুবিধাবাদী রাজনীতির কারণে জাতীয় পার্টি দল হিসেবে গণধিকৃত এবং জনগণ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে। আর দলটি কার্যত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় পরিচালিত হয়। ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ মহল যে পক্ষ নেবেন সে পক্ষই বিজয়ী হবে। নিজস্ব রাজনীতি না থাকায় ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে রাজনীতির চোরাবালিতে পড়ে গেছে দলটি। তবে দল হিসেবে জাপা আবার ভাঙনের মুখে পড়বে না দেবর-ভাবীর বিরোধ মিটিয়ে দাঁড়াবে সেটাই এখন তাই দেখার বিষয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।