পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ও চর্চাকারী দল হিসেবে দাবি করা বিএনপি নিজের দলের মধ্যেই গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রাখতে চায়। এলক্ষ্যে দল ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সকল পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চান ভোটের মাধ্যমে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ইতোমধ্যে জাতীয়তাবাদী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছেন ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে। এবার তিনি বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত ছাত্রদলের নেতৃত্বও চান নির্বাচনের মাধ্যমে। এজন্য আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ষষ্ঠ কাউন্সিল। দীর্ঘ ২৮ বছর পর রাজপথের বিরোধীদলের ছাত্র সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্ধারিত হতে যাচ্ছে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে। কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুটি পদে সারাদেশের ৫৩৩জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত করবেন আগামী দিনের নেতৃত্ব। শীর্ষ এই দুটি পদের মধ্যে সভাপতি পদে ৮ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন বৈধ প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। যাদের বেশিরভাগই ছাত্ররাজনীতির তীর্থস্থান খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক নেতা। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন।
ছাত্রদলের কাউন্সিলের বৈধ প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা ছুটছেন এক জেলা থেকে আরেক জেলার ভোটারদের কাছে। তাদের কাছে তুলে ধরছেন ছাত্রদলের জন্য নিজের ত্যাগ, রাজপথে ভূমিকা, সংগঠন পরিচালনায় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন জোরদার করার। অনুরোধ জানাচ্ছেন প্রত্যেক প্রার্থীর বিষয়ে (ব্যক্তিগত ও পারিবারিক) খোঁজ-খবর নিয়ে, সৎ, যোগ্য, রাজপথে থেকে আন্দোলনকারীকে ভোট দেয়ার জন্য।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রার্থী নিজে এবং তার কর্মীরা চালাচ্ছেন প্রচারণা। অতীতে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের অংশগ্রহণ, প্রতিপক্ষের মাধ্যমে হামলা, মামলার শিকার হওয়া ছবিও ছড়িয়ে দিচ্ছেন ডিজিটাল দুনিয়ায়। যেখানে দলটির নেতাকর্মী, ভোটার সকলেই জানাচ্ছেন শুভকামনা। এছাড়া মুঠোফোনে এসএমএস, কল দিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতেও দেখা যাচ্ছে প্রার্থীদের।
সভাপতি পদে বৈধ ৮ জন প্রার্থী হলেন- মোঃ ফজলুর রহমান খোকন, হাফিজুর রহমান, এসএম সাজিদ হাসান বাবু, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, রিয়াদ মোঃ তানভীর রেজা রুবেল, মোঃ এরশাদ খান, এবিএম মাহমুদ আলম সরদার ও কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনে বরাবরই অবহেলিত হিসেবে পরিচিত এবং বিএনপির দূর্গখ্যাত বগুড়ার সন্তান ফজলুর রহমান খোকন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের ছাত্র এবং সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খোকন উত্তরবঙ্গের (রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ) একমাত্র প্রার্থী। দীর্ঘ দিনের ছাত্র রাজনীতিতে খোকন ২২টি মামলা, ২বার হামলার শিকার ও ৪ বার কারাবরণ করেছেন। ১/১১’র তত্ত¡াবধায়ক সরকারি বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ ছিল সক্রিয়। তিনি কাউন্সিলের জন্য তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের কাছে ছুটছি। তাদের কাছে আমার ইশতেহার তুলে ধরছি। নির্বাচিত হলে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ছাত্রদলের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হবে। এছাড়া তিনি সকল প্রার্থীর সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে যোগ্য, সৎ প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য কাউন্সিলরদেরকে জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাগেরহাটের সন্তান হাফিজুর রহমান ছাত্ররাজনীতির কারণে বারবার হামলার শিকার হয়েছেন। ১/১১’র সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। বিগত সব আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থেকেছেন। সভাপতি পদে প্রার্থী হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের কাছে। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন করে পথচলার সূচনা করে দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কাউন্সিলদের প্রত্যক্ষ ভোটে, সুন্দর প্রতিযোগিতা, উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে যে নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসবে সেই নেতারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলন আরো বেগবান করবে। তিনি নির্বাচিত হলে সংগঠনকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী করে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে চান। এছাড়া প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে চান।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন এসএম সাজিদ হাসান বাবু।
জামালপুরের সন্তান সভাপতি প্রার্থী কাউন্সিলদের মনে নিজের ব্যক্তিত্ব, আচরণ ও কথাবার্তার মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন। উত্তরবঙ্গে সফরকালে কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতারা এবার সিন্ডিকেট ও নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চান। একইসাথে কাউন্সিলের মাধ্যমে তৃণমূলের সাথে কেন্দ্রের যে যোগাযোগ, আন্তরিকতা, বন্ধন তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত যেন থাকে সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রার্থীদের অতীত কর্মকাÐ এবং যোগ্যতা বিবেচনা করে ভোটাররা তাদের ভোট দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
যশোরের সন্তান কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বর্তমান ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। তবে তার পারিবারিক কারণে তিনি প্রতিপক্ষসহ দলের বিভিন্ন জায়গায় সমালোচিত হচ্ছেন। তার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম, বড় ভাই কাজী মুস্তাফিজুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, মেঝো ভাই কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহŸায়ক, সেঝো ভাই কাজী আজাহারুল ইসলাম মানিক উপজেলা ছাত্রলীগের আহŸায়ক। কেউ কেউ তার অবদানের কথা তুলে ধরলেও অনেকে পারিবারিক কারণে তার প্রার্থিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। শ্রাবণ বলেন, তিনি ছাত্রদল করার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। বাবার সাথে যোগাযোগ নেই। বার বার হামলা, মামলা, কারাবরণের শিকার হয়েছেন। তিনি আশা করছেন দলের কাউন্সিলররা তার ত্যাগের বিষয়টি বিবেচনা করে তাকে ভোট দিবেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে বৈধ ১৯ জন প্রার্থী হলেন- মোঃ আমিনুর রহমান আমিন, শাহনাওয়াজ, মোঃ তানজিল হাসান, মোঃ জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম), মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, শেখ আবু তাহের, সাদিকুর রহমান, কেএম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মোঃ ইকবাল হোসেন শ্যামল, মোঃ জুয়েল হাওলাদার, মুন্সি আনিসুর রহমান, মোঃ মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মোঃ মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা, কাজী মাজহারুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি সাতক্ষীরার সন্তান আমিনুর রহমান আমিন। প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন সাধারণ সম্পাদক পদে। বৃহত্তর খুলনার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ১/১১’র গণতান্ত্রিক আন্দোলন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিএনপি এবং ছাত্রদলের সকল কর্মসূচি ও কর্মকাÐেই তার ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। এই পদে যে কয়জন প্রার্থী আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আমিন সারাদেশে ছুটে বেড়াচ্ছেন। কাউন্সিলরদের কাছে তার কর্মকাÐ তুলে ধরে নিজের জন্য ভোট চাইছেন। ভোটারদের কাছ থেকেও তিনি ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান। আমিন বলেন, ভোটাররা রাজপথে নেতৃত্ব দেয়া নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চায়। যারা আগামী দিনে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে।
বিএনপির অন্যতম ঘাটি হিসেবে পরিচিত নোয়াখালী জেলার ছেলে শাহ নাওয়াজ। সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী শাহ নাওয়াজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অতীতে আন্দোলন সংগ্রামের কারণে ৩টি মামলা, ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৫ বার হামলার শিকার হয়েছেন। ১/১১’ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনেই ছিলেন সামনের সারিতে। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলে তারেক রহমানকে গ্রেফতারের পর তারাই প্রথম ৩৬ জন মিলে ঢাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট পেতে ভোটারদের কাছে ছুটছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, কাউন্সিলররা দীর্ঘদিন রাজনীতির মাঠে পরীক্ষা দিয়ে নেতা হয়েছেন। তারা জানেন রাজপথে কাদের ভূমিকা রয়েছে, কাদেরকে নেতৃত্বে আনলে খালেদা জিয়ার ও গণতন্ত্রের মুক্তি আন্দোলন জোরদার হবে। তারা তাদেরকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহŸায়ক ও বরিশাল (পটুয়াখালী) অঞ্চলের প্রার্থী তানজিল হাসান। তিনিও ১/১১’র স্বৈরাচার সরকার হটাও আন্দোলন থেকে শুরু করে বিএনপি ও ছাত্রদল ঘোষিত সকল আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য তিনি কতোয়ালী ও শাহবাগ থানায় দুটি, ঢাকা মহানগরে গায়েবি মামলাসহ মোট ৮টি মামলার আসামী হয়েছেন। ৭বার কারাবরণ করেছেন। রাজপথে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন অসংখ্যবার। তিনি ভোটের প্রচারণায় গিয়ে জানান, কাউন্সিলরদের কাছে তিনি দলের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার তুলে ধরছেন এবং অনুরোধ করছেন যোগ্য, ত্যাগী ও রাজপথে পরীক্ষিত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য।
এছাড়া বরিশালের আরেক প্রার্থী সাইফ মাহমুদ জুয়েলও বেশ আলোচনায় রয়েছেন। তার প্রার্থীতা বাতিলসহ নানা নাটকীয়তার পর তিনি প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। তিনিও রাজনীতির কারণে হামলা, মামলা ও কারাবরণের শিকার হয়েছেন একাধিকবার। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোঃ জাকিরুল ইসলাম জাকিরও ছুটছেন ভোটারদের কাছে।
এদিকে সভাপতি পদে বাছাই প্রক্রিয়ায় মামুন খান ও আমিরুল ইসলাম খান সাগরের নাম বাদ পড়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবশ্য মামুন খান কে যে কারণে বাদ দেয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্যসহ প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তার প্রার্থীতা আদৌ ফিরে পাবে কি না তা নিশ্চিত নয়।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।