Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হজের সময় ইমামের প্রতি হেশামের অবজ্ঞার জবাবে কবি ফারাজদাক

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

হজরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.)-এর হজ পালন, রাজকীয় ঘটনার চেয়ে কম গুরুত্ববহ ছিল না। একই বছর হজ পালন করতে গিয়েছিলেন প্রভাব প্রতিপত্তিশালী ওমাইয়া খলিফা আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ানের পুত্র (যুবরাজ) ‘হেশাম’। তখন তাদেরই জয়জয়াকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। আহলে বায়ত, তথা রসূল (সা.) এর ঘরানার প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতার আগুন তখনো তাদের মগজে, মননে উত্তপ্ত। মজলুম আহলে বায়তের প্রত্যেক ব্যক্তিত্বই তাদের নিকট বিশেষত; হজরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) এর মত বিখ্যাত সাধক ও প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব ওমাইয়া রাজদরবারে কারো কাছে অপরিচিত ছিল না। কেননা সুযোগমত পাওয়া হজরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) তো তাদের হাতেই নিরাপদ ছিলেন না। হেশাম তখন ওমাইয়া যুবরাজ হিসেবে সিংহাসন লাভের প্রতীক্ষায়।

যুবরাজ হিসেবে হেশাম ইবনে আবদুল মালেকও একবার হজে গমনের সংকল্প করেন এবং রাজকীয়ভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। যুবরাজ হজ পালন করতে যাবেন, স্বাভাবিকভাবেই তার নিরাপত্তার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা ও লাও-লস্কর তথা নিরাপত্তা বাহিনীতো থাকবেই। তার সঙ্গে বিশিষ্টজনদের মধ্যে কারা কারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে সে বিবরণ না থাকলেও বিশিষ্ট জনদের একদলও ছিলেন এবং এমন সদস্যও ছিলেন যারা কর্তার প্রত্যেক কথায় ও কাজে ‘হ্যাঁ’ সূচক শব্দ উচ্চারণে পারদর্শী ছিলেন। যুবরাজ হেশাম তার দলবলসহ খানা-ই-কাবায় উপস্থিত হন। এবার তার ‘মানাসেকে’ হজ আদায় করার পালা।

যুবরাজ হেশামের একান্ত ইচ্ছা, তিনি প্রথমে ‘হাজরে আসওয়াদ’ (কালো পাথর) চুম্বন করার সৌভাগ্য লাভ করতে চান। তার ধারণা, তিনি সহসাই পাথরের নিকট চলে যাবেন, তাকে কোন বাঁধার মুখোমুখি হতে হবে না। কিন্তু কালো পাথর পর্যন্ত পৌঁছার কোন সুযোগ তার নেই। লোকের ভীড়ের প্রবল চাপের মধ্যে তিনি দিশেহারা, কিছুতেই অগ্রসর হতে পারছেন না। অবশেষে, এ যুবরাজের জন্য বিশেষ চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয় এবং তিনি তাতে উপবিষ্ট হন।

মজার ঘটনার সূচনা হয় তখনই যখন তিনি দেখলেন, চাঁদের মতো উজ্জ্বল চেহারার এক ব্যক্তি সুসজ্জিত ও সুগন্ধিযুক্ত (আতর মাখা) পোশাক পরিধান করে অগ্রসর হচ্ছেন এবং তাকে স্থান করে দেয়ার জন্য কালো পাথকরকে ঘিরে যে প্রচন্ড ভীড়, তা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে এবং আগত এ মহান ব্যক্তিত্বের সম্মানে লোকজন সরে যাচ্ছে, মুহূর্তের মধ্যেই কালো পাথরের স্থান সম্পূর্ণ জনশূন্য হয়ে যায়। আগত এ মহান পুরুষ হজরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.)।

ইমামের প্রতি মানুষের এ অভ‚তপূর্ব সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে যুবরাজ হেশামের মধ্যে হিংসার আগুন দাউ দাউ করে জ¦লছিল, কিন্তু তা অতি সংযমের সাথে হজম করতে সক্ষম হলেও তার একটি বাক্য তার মনের জ¦লন প্রকাশ পেয়ে যায় এবং তা এইভাবে যে, ঘটনা অবলোকন করে হেশাম যখন বিস্মিত, অবাক হয়ে গভীরভাবে বিচলিত, তখন তার ‘শামী’ (সিরীয়) সঙ্গী জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কি ঐ ব্যক্তিকে চিনেন?” জবাবে হেশাম বললেন, “তাকে আমি চিনি না।” অথচ তাকে তিনি ভালোভাবেই চিনেন। এ অসত্য কথা কাবায় হজ্জ্ব করতে গিয়ে তিনি কেন ব্যক্ত করলেন সে কারণ ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সত্যনিষ্ঠ ও সৎ সাহসী লোকের অভাব কখনো থাকে না, “লাওমাতু লায়েম” তথা নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় পায় না এমন লোক সব সমাজেই বিদ্যমান। হেশামের সমাবেশে তখন যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে আরবের ওমাইয়া আমলের বিখ্যাত কবি ফারাজদাকও ছিলেন। “তাকে আমি চিনি না”, হেশামের এ মিথ্যাচারে তাঁর মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিল এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, একজন সুদক্ষ কবি হিসেবে তিনি চিন্তা জগতের ঊর্ধ্বে উঠে হেশামের এ ক্ষুদ্র অসত্য বাক্যের যে কাব্বিক জবাব দেন, তা আরবি ‘কাসীদা’ সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

কবি ফারাজদাক হেশামের মিথ্যাচারের প্রতিবাদে হজরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) এর ব্যক্তিত্ব ও বংশ গৌরব, মর্যাদার এবং ‘আহলে বায়ত’ এর শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈশিষ্ট্যের যে বিবরণ তুলে ধরেছেন, তা কেবল তাঁর মুখেই উচ্চারণ করা সম্ভব হয়েছে। আরবের এ স্বভাবকবি হেশামের মুখের সামনেই যে স্বরচিত ‘কাসীদা’ উপস্থাপন করেন, তাতে ৩০টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা ছিল। প্রত্যেক কবিতার শেষ অক্ষর ‘মীম’ সংযুক্ত।

আমরা যথাস্থানে এ বিখ্যাত ঐতিহাসিক কাসীদার সারমর্ম তুলে ধরার চেষ্টা করব, তবে তার আগে বিখ্যাত কবি ফারাজদাক-এর পরিচিতি পেশ করাও প্রাসঙ্গিক মনে করি।

ফারাজদাক ছিলেন ওমাইয়া যুগের বিখ্যাত কবি। তার জীবনকাল ৬৪১-৭৩২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তার আসল নাম হুমাম ইবনে ছাছা ইবনে মোজাশে’ দারেমী তামিমী। ফারাজদাক তাঁর উপাধি। তাঁর জন্ম বসরায়। ইবনে খাল্লেকানের বর্ণনা অনুযায়ী, ফারাজদাক-এর পূর্ব পুরুষদের মধ্যে মোহাম্মদ ইবনে সুফিয়ান নামক এক ব্যক্তি ছিলেন যাকে তিন ব্যক্তিত্বের একজন মনে করা হতো, যাদের নাম জাহেলী যুগে ‘মোহাম্মদ’ রাখা হয়েছিল। এটি রসূলুল্লাহ (সা.) এর জন্মের পূর্বের কথা। তাই বলা হয়, এ তিন জনের পূর্ব পুরুষদের মধ্যে কোন কোন লোক এমন বাদশাহর দরবারে সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন, যার আসমানি কিতাবগুলোর জ্ঞান ছিল এবং তিনি নবী করিম (সা.) এর আবির্ভাব ও তার পবিত্র নাম সম্পর্কে অবগত ছিলেন। যখন তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ইন্তেকালের পরে তাদের সন্তান সম্ভবা স্ত্রীদের অসিয়ত করেন। তখন মানত করে ছিলেন, তাদের পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করলে তার নাম যেন ‘মোহাম্মদ’ রাখা হয়। তাই তাদের মৃত্যুর পর তাই ঘটে এবং তাদের স্ত্রীগণ তাদের পুত্র শিশুদের নাম ‘মোহাম্মদ’ রাখেন। ফারাজদাক-এর পূর্ব পুরুষদের মধ্যে এভাবেই মোহাম্মদ নামের প্রচলন হয়।

আল্লামা কামাল উদ্দীন দামিরী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে ‘মোহাম্মদ’ নামের সে তিন ব্যক্তির নামও উল্লেখ করেছেন। তারা হচ্ছেন;

১. মোহাম্মদ ইবনে সুফিয়ান ইবনে মোজাশে’ (ফারাজদাক এর দাদা)। ২. মোহাম্মদ ইবনে ওছিহা ইবনে জাল্লাহ (আবদুল মোত্তালেব এর বৈমাত্রিক ভাই) এবং ৩. মোহাম্মদ ইবনে ইমরান ইবনে রাবীআ। এ তিন জনের পূর্বে জাহেলী যুগে আর কারও নাম ‘মোহাম্মদ’ ছিল না।

কবি ফারাজদাক-এর জীবনে তিনি লোকের প্রশস্তিমূলক ও নিন্দাসূচক কবিতা রচনা করতেন। তিনি একজন সৃষ্টি ধর্মী বলিষ্ঠ কবি ছিলেন, বহু অর্থবোধক শব্দ ব্যবহারে ছিলেন পারদর্শী, তার বক্তব্য ছিল ব্যাপক ব্যাখ্যাধর্মী। ‘হিজু’ বা নিন্দাসূচক কবিতা রচনায় কবি জারীর ও তার মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতা চলতে থাকে ৬৮৩ সাল পর্যন্ত। কবি ফারাজদাক-এর কবিতা সংকলন (দীওয়ান) বের করেন মোহাম্মদ ইবনে জারীর নাহভী বাছরী। তিনি দুই কবির পরস্পর বিরোধী রচনাবলী ‘নাকায়েযু জারীর অল ফারাজদাক’ নামে লিপিবদ্ধ করেন।

হজরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.)-এর প্রশস্তিমূলক কাসীদাটি তাকে অমর করে রেখেছে। ‘কাসীদা’ হেশামের সামনে পাঠ করার সময় তিনি নীরবে শ্রবণ করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেছেন বলেও কিছু জানা যায় না। কিন্তু পরবর্তী সময়ে মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থান ‘আসফান’ এ তাকে বন্দি করে রাখার ঘটনা প্রমাণ করে যে, কাসীদা তাকে এমনভাবে আঘাত করেছিল যে, হেশাম প্রতিশোধ গ্রহণ করেন কবিকে কারাবন্দি করার মাধ্যমে। তাকে কতদিন কারায় রাখা হয় তা জানা না গেলেও খবরটি হজরত ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) জানার পর তার নামে বারো হাজার দেরহাম প্রেরণ করেন এবং দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমার কাছে অর্থ থাকলে আরও বেশি প্রদান করতাম।”

ফারাজদাক বললেন, “হে রাসূলের ফারজান্দ! আমি যা কিছু বলেছি কেবলমাত্র আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ও ভক্তি এবং তাদের প্রতি অপরের রাগ ও ক্ষোভের কারণে, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে কিছু পাওয়ার জন্য বলিনি। ইমাম তার শোকরিয়া আদায় করে বললেন, “প্রকৃত পক্ষে আমরা আহলে বায়ত যখন কোন কাজ করি অর্থাৎ অর্থ দান করি তা ফেরত গ্রহণ করি না।” এর পরে ফারাজদাক ইমামের প্রেরিত দান গ্রহণ করেন।

কবি কারাগারে বসেও হেশামের নিন্দায় কবিতা রচনা করেন। অবশেষে হেশাম তাকে মুক্ত করে দেন। ইমামও আহলে বায়তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কাসীদা রচনা ছিল কবির অপরাধ, যার জন্য হেশাম তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন।

কাসীদার অনুবাদ:
কবি ফারাজদাক এর আলোড়ন সৃষ্টিকারী কাসীদার অনুবাদ:
১. “হাজাল্লাজি তা’রিফুল বাতহাউ অতা’তুহু
অল বায়তু ইয়া’রিফুহু অল হিলু অল হিরমু।”
অর্থাৎ,‘এই সে ব্যক্তি যাকে বাতহার নরম জমি চেনে,
বায়তুল্লাহ, হিল্ল ও হেরমের সমস্তই চেনে।’
২. ‘ইনি জয়নুল আবেদীন ইবনে আলী (রা.) এবং হজরত রসূলুল্লাহ (সা.) তার নানা।
তাদেরই মারফতের নূর দ্বারা সমগ্র জাতি হেদায়েত প্রাপ্ত হচ্ছে।’
৩. ‘ইনি আল্লাহর নেক বান্দাগণের মধ্যে সর্বোাত্তম ব্যক্তির সন্তান,
পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন মোত্তাকী, পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন।
৪. যখন কোরেশ তার সাক্ষাৎ লাভ করে, তখন স্বতস্ফ‚র্ত বলে উঠে,
তাঁর উদার কর্মকান্ডগুলো মহত্বের চূড়ান্ত।
৫. ইনি সম্মান ও মর্যাদার এমন উঁচু আসনে সমাসীন, যা অর্জন করতে আরবি আজমি সকল লোকই অক্ষম।
৬. হয়তো, ‘হাজরে আসওয়াদ’ চুম্বন করার সময় রুকনে হাতীম তাকে বাঁধা দেয়,
কেননা সে তার হাত চিনে।
৭. তাঁর পবিত্র হাতে শাহী ‘আসা’ (লাঠি) যাতে সুন্দর হাতের স্পর্শে সৌরভ (খুশবু) ছড়িয়ে পড়েছে এবং তার নাক চমৎকার সুন্দর ও সমান।
৮. ইনি লজ্জা সম্ভ্রমে নিজের চোখ নিম্নমুখী করে রাখেন এবং তাঁর আতংক-প্রভাব এ লোকেরা দৃষ্টি নিম্ন মুখী করে রাখে। যখন তিনি মুচকি হাসেন তখন লোকদের কথা বলার সাহস হয় না।
৯. তাঁর উজ্জ্বল অবয়বের ঔজ্জ্বল্যে হেদায়েতের আলোক ছড়িয়ে পড়ছে, যেমন সূর্য উদিত হবার সাথে ভোর হয়ে যায় এবং অন্ধকার দূরিভ‚ত হয়ে যায়।
১০. তার শরীফ খান্দান হযরত রসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে মিলে যায়। তাঁর বংশ অভ্যাস, স্বভাব সবই পবিত্র।
১১. তুমি যদি তাকে না চেন, তা হলে শুনো! তিনি হজরত ফাতেমা (রা.)-এর পুত্র এবং তাঁর নানার ওপর নবীগণের নবুয়াতের ধারা সমাপ্ত করে দেয়া হয়েছে।
১২. আল্লাহ তাআলাই তাকে সম্মান, মর্যাদার অধিকারী ও মাহাত্ম্য দান করেছেন, যার সম্পর্কে লৌহ মাহফুজে কলম জারি করেছেন।
১৩. তাঁর হস্তদ্বয় সকলের জন্য প্রসারিত, তাঁর কাছে দান চাওয়া হয় এবং তাকে কখনো অভাব স্পর্শ করে না।
১৪. তিনি কোমল হৃদয়ের, তার কাছ থেকে অন্যায় ক্রোধ-রাগের আশংকা নেই। তাকে উত্তম চরিত্র ও সহনশীল এ দুই গুণে গুণান্বিত করা হয়েছে।
১৫. যখন কোন জাতি (কওম) তাঁর নিকট (কর্জ) ধার চায়, তখন তিনি এ বোঝা বহন করেন। তার সকল অভ্যাসই মধুর। তার ‘না‘আম’ (হ্যাঁ) বাক্যই উত্তম মনে করেন। অর্থাৎ কেউ কিছু চাইলে না বলেন না।
১৬. তিনি তাশাহহুদ ব্যতীত ‘লা’ (না) ব্যবহার করেন না। যদি তাশাহহুদ না হতো তাহলে তার নিকট ‘লা’ বাক্যও ‘না‘আম’ হয়ে যেত।
১৭. এ উপকার ও অনুগ্রহের কারণে সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে তা বিস্তার লাভ করেছে এবং তার কারণে অন্ধকার, অভাব-অনটনের অবসান ঘটেছে।
১৮. তিনি এমন শ্রেণীর সাথে সম্পৃক্ত যাদের প্রতি ভালবাসা, দ্বীন-ধর্ম, শত্রু।
১৯. তাদের প্রতি ভালবাসার মাধ্যমে বিপদাপদ হতে রক্ষা পাওয়ার যায় এবং তাদেরই মাধ্যমে নেয়ামতের দান বৃদ্ধি করা হয়।
২০. তিনি সেই ব্যক্তিত্ব যার নানার মাধ্যমে নবীগণের ফজিলত মর্যাদা স্বীকৃত।
২১. প্রত্যেক ব্যাপারে আল্লাহর জিকিরের পর তাদের জিকির প্রধান্য লাভ করে এবং তাদের জিকিরের পর কালাম (বক্তব্য) শেষ হয়।
২২. যদি মোত্তাকী লোকদের শুমার করা হয় তাহলে এরা হবেন তাদের ইমাম। আর যদি প্রশ্ন করা হয়, দুনিয়াতে সর্বোত্তম কারা? তাহলে জবাব হবে- এঁরাই।
২৩. তাদের মর্যাদায় কেউ পৌঁছতে পারে না এবং কোন ‘কওম’ তাদের সমকক্ষ হতে পারে না, তারা যতই মর্যাদাবান ও সম্মানিত হোক না কেন।
২৪. যখনই দুর্ভীক্ষ দেখা দেয়, তখন তারা বর্ষার বৃষ্টির মতো হয়ে যান এবং ভয়-ভীতির সময় শারিস্থানের সিংহগুলোর মতো হয়ে যান।
২৫. তাঁদের দুই হাতের প্রশস্ততাকে অভাব অনটন সংকীর্ণ করতে পারে না, তাঁদের নিকট স্বচ্ছলতা ও অভাব দু’ই সমান।
২৬. তাদের নিন্দা-সমালোচনা হতে তাদের পবিত্র স্বভাব, চরিত্র এবং তাদের উদার হস্ত বিরত রাখে।
২৭. ‘মাখলুক’ (সৃষ্টি) এর মধ্যে এমন কে আছে যার গরদানে তাদের উপকারের শৃংখল নেই?
২৮. যে ব্যক্তি আল্লাহকে জানে, সে তাদের মাহাত্ম্যকেও জানে। কেননা সমস্ত লোকই তাদের ঘরানা হতে দ্বীন হাসেল করেছে। পরবর্তী দুটি কবিতায় হেশামকে সরাসরি লক্ষ্য করে যা বলা হয়েছে, তাতে কবির সত্য প্রকাশের অসীম সাহস ও নির্ভীকতার পরিচয় পাওয়া যায়। নিন্দুকের নিন্দায় কোন পরোয়া করেননি তিনি। শেষ সে দু’টি কবিতা হচ্ছে:
২৯. ‘ইন্কুন্তা লা তারিফুহু ফাল্লাহু ইয়ারিফুহু,
অল আরশু ইয়ারিফুহু অল লাওহু অল কলমু।’
অর্থাৎ- যদি তুমি তাকে না চেন, আল্লাহ তাকে চিনেন,
আর্শ, লৌহ মাহফুজ ও কলম তাকে চিনে।
অতঃপর কবি বলেন,
৩০. অ লায়সা কাওলুকা হাজা বিযায়েরিহি, আল আরবু তারিফু মান আনকারা, আল আজমু

অর্থাৎ এবং তোমার এই কথা বলা যে, তিনি কে? এটা তার জন্য কোন ক্ষতিকর নয়,
কেননা তুমি যাকে অস্বীকার করছো, তাকে আরবি, আজমি সকলেই জানে। ফারাজদাক এর এ ‘কাসীদা’ শ্রবণ করা মাত্রই হেশাম রাগে, ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাই তিনি মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী ‘আসফান’ নামক স্থানে ফারাজদাককে বন্দি করে রাখেন।
যুবরাজ হেশাম ইবনে আবদুল মালেক হজ্জ্ব করতে গিয়ে মনে করে ছিলেন, হজ্জ্ব যাত্রীগণ তাকে বিপুলভাবে সম্মান প্রদর্শন করবে এবং চরম ভীড়ের মধ্যে তিনি খুব সহজে কালো পাথর চুম্বন করতে পারবেন। কিন্তু তা পারলেন না। পক্ষান্তরে ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা.) এর প্রতি মুসলমানদের ভক্তি, ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের দৃশ্য হেশামকে এমনভাবে বিচলিত করে যে, তিনি কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং সুপরিচিত ইমাম জয়নুল আবেদীন এর মতো ব্যক্তিত্বকে চেনেন না বলে মিথ্যা উক্তি করেন। এ পটভ‚মিকায় কবি ফারাজদাক তার বিখ্যাত ‘কাসীদা’ হেশামের সামনেই তাৎক্ষণিক রচনা করে শুনান।



 

Show all comments
  • Md. Jasim Uddin ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৫ পিএম says : 0
    সুবহানআল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন