Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্বরতা অর্জন দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় অনেক বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে শিল্পায়ণ, নগরায়ণ ও অবকাঠামো খাতে প্রতি বছর হাজার হাজার হেক্টর ভ’মি দখল হয়ে পড়ার কারণে সীমিত ও ক্রমহ্রাসমান জমির উপর নির্ভর করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের যোগান নিশ্চিত রাখা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে আমাদের কৃষক ও কৃষি গবেষকরা আপাতত সফল হলেও আগামী দিনে তা বজায় রাখা নিশ্চিতভাবেই অসম্ভব হয়ে পড়বে। আবাদযোগ্য ভূমির পরিমান, জমির উর্বরতা ও ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তার ইস্যুটি বিশ্বজুড়েই একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ইস্যু হিসেবে ধরা হচ্ছে। মানুষ বাড়ছে, আবাদযোগ্য জমির পরিমান কমছে, সেই সাথে কমছে জমির উর্বরতাও। এ বাস্তবতা বাংলাদেশের জন্য বাড়তি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত: ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে আশঙ্কা যখন আরো তীব্র হয়ে উঠেছে, তখন দেশের সমুদ্রোপকুলে এবং দক্ষিনাঞ্চলের নদী অববাহিকায় জেগে উঠা নতুন নতুন চর জাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের বুকে আরেক বাংলাদেশ জেগে ওঠার গল্প দীর্ঘদিন ধরেই প্রচারিত হচ্ছে। সেটা আদতেই দীর্ঘ মেয়াদি বিষয়। তবে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে মেঘনায় জেগে ওঠা চরগুলোতে ইতিমধ্যেই অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার হাতছানি দেখা যাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনায় এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন অনেকটাই বাস্তবের নাগালে চলে আসতে পারে।

গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে এক সময়ের প্রমত্তা মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চর নিঝুম দ্বীপ, ভাষানচর, স্বর্ণদ্বীপের অপরূপ প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য এবং কৃষি, শিল্পায়ণ ও শিক্ষার সম্ভাবনাময় চিত্র ফুটে উঠেছে। এসব চর ও দ্বীপাঞ্চলে ইতিমধ্যেই সরকার নানাবিধ অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড শুরু করেছে। একই অঞ্চলের সোনাগাজীতে মুহুরি প্রজেক্ট, দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র, আঞ্চলিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, হাঁস প্রজণন খামার, পরশুরামের রাবার বাগান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম মৎস্য প্রজণনকেন্দ্র ইত্যাদি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কারণে এ অঞ্চল এরই মধ্যে একটি সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। এখন প্রতি বছর ৪-৫ লাখ দেশি-বিদেশে পর্যটক এ অঞ্চলে বেড়াতে আসেন বলে জানা যায়। পরিকল্পিত উন্নয়ন হলে এ সংখ্যা আরো বহুগুণ বেড়ে দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে পারে। একদিকে নানাভাবে আমাদের সুন্দরবন হুমকির মধ্যে পড়েছে, অন্যদিকে নোয়াখালীর চরগুলোতে নতুন বনায়ণ ও বণ্য প্রাণীদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলার উদ্যোগ চলছে। নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চল ও সবুজ তৃণভ’মিতে হাজার হাজার হরিণের বিচরণশীল সৌন্দর্য এ অঞ্চলে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনায় যোগাযোগসহ সামগ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে।

এসব সম্ভাবনা হঠাৎ করেই আমাদের সামনে দেখা দেয়নি। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠা চরের পরিকল্পিত উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উদ্যোগের কথাও দীর্ঘদিন ধরেই বলা হচ্ছে। তবে সরকারের প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতির সাথে বাস্তবের অমিল ধরা পড়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোয়াখালী সফরের সময় দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত হলেও অনাকাংখিত মামলাবাজি ও সরকারের যথাযথ উদ্যোগের কারনে তা বাস্তবায়িত হয়নি। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সুবর্ণচরে প্রস্তাবিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে এ অঞ্চলের জেগে ওঠা হাজার হাজার হেক্টর নতুন জমিতে কৃষিজ, বনজ, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনে বিশাল অবদান রাখতে পারবে। কৃষি গবেষণার পাশাপাশি মৎস্য, ফলমূল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণে পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ হলে তা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে যুগান্তকারি ভ’মিকা রাখতে পারে। ইতিমধ্যে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীর বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হলে এ অঞ্চলে লাখ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি নোয়াখালীতে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল, প্রস্তাবিত বিমানবন্দর এবং সড়ক ও রেলযোগাযোগ নেটওয়ার্ক বাস্তবায়িত হলে পুরো এলাকার চেহারাই বদলে যাবে বলে আশা করা যায়। আজ না হোক কাল এ সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবেই। তবে এরই মধ্যে যে সম্ভাবনা জেগে উঠেছে তা কাজে লাগাতে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে কি? বিশেষত নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল, শিল্পনগরী এবং রফতানীমুখী প্রকল্পগুলোতে প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক ও টেকনিশিয়ানের পদ পুরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত জনবল গড়ে তোলার তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সেই সাথে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।  



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন