Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সম্প্রীতির কবি নজরুল

মোঃ কায়ছার আলী | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান, মুসলিম তার নয়নমনি হিন্দু তার প্রাণ’ সাম্য, মৈত্রী, বিদ্রোহী, ঐক্য, সর্বহারা, স্বাধীনতা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী,বিপ্লবী, প্রেম,মানবতা ও আমাদের জাতীয় কবি সকল সীমানা কাল ভৌগলিক রেখা অতিক্রম করে বাংলা সাহিত্যের ভাগ্যাকাশে এক উজ্জল নক্ষত্র হিসেবে উদয় হয়েছিলেন। তিনি হলেন অগ্নিবীণার সুরঝংকার চির যৌবনের জয়ধ্বনি মৃত্যুঞ্জয়ী অসাম্প্রদায়িক নজরুল। বাংলা সাহিত্যের কোলকে আলোকিত করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার অন্তর্গত হিরন্ময় গ্রাম চুরুলিয়ায় ১৮৯৯ সালের ২৫শে মে(১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ) মঙ্গলবার এক দরিদ্র পরিবারে কাজী ফকির আহম্মেদ এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী জাহেদা খাতুন এর চারটি পুত্রের অকাল মৃত্যুর পরে দুঃখু মিয়া জন্মগ্রহন করেন। পিতা ও পিতামহ সারা জীবন ধরে মাজার শরীফ ও মসজিদের সেবা করে পরিবারের ভরনপোষণ করতেন। নিজ ধর্মের প্রতি অসাধারণ নিষ্ঠা থাকা সত্তে¡ও তাঁর পিতা অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ছিলেন না, তাই তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে এই উদারতা পেয়েছিলেন। তা ছাড়া ফারসি ও বাংলা কাব্যের প্রতি গভীর অনুরাগও তিনি লাভ করেছিলেন, তাঁর পিতার কাছ থেকে। বাল্যকালে অত্যন্ত দুরন্ত ও চঞ্চল নজরুল কোন শাসন নিষেধের বিন্দুমাত্র পরোয়া করতেন না। একদিকে প্রখর বুদ্ধি ও মেধা অন্যদিকে বাল্যকালে তাঁকে চরম দারিদ্রতার সম্মুখীন হতে হয়। এরপরেও যেখানে কীর্তন, কথকতা, যাত্রাগান, মৌলভির পবিত্র কোরান পাঠ ও ব্যাখ্যা হত, দুরন্ত বালক গভীর আগ্রহ ও মনোযোগ সহকারে সেখানে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতেন এবং বাউল, সুফী, দরবেশ ও সাধু-সন্নাসীর সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিশতেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধর্ম ও মতের মানুষের সাহচর্যে থাকার কারণে তিনি সাম্প্রদায়িক ঐক্য গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তিনি বাল্যকালের ব্যাঙাচির সেই নীরব স্বভাব পরিবর্তন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাপের মত ফণা তুলে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন। সাম্প্রদায়িকতা মানবিকতার বিপক্ষে উপ্ত এক বিষবৃক্ষ। সাম্প্রদায়িকতা বলতে ধর্মীয় ও মতবাদ চিন্তা চেতনা ও মানসিকতা যা অন্য ধর্মের বা মতালম্বী মানুষের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ ঘৃনা ও অমানবিক আচরণ করার জন্য উৎসাহিত করে তাকে বুঝানো হয়। কিন্তু নজরুলের মনোভাব ও মানসিকতা বাণীরূপ পেয়েছে সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতির কবিতাগুলোতে। পৃথিবীতে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান, শিখ, জৈন প্রভৃতি মানুষ এক সাথে বসবাস করে। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের স¤প্রীতিবোধ জেগে উঠে। তাই নজরুল সম্প্রদায়গত বিভেদকে পিছনে ফেলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষকেই বড় করে দেখেছেন। তাই কবি বলেছেন, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন্ জন? কান্ডারী! বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র।’ নজরুল ধার্মিক কিন্তু পুরোপরি অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তিনি প্রমিলা নামে এক হিন্দু রমনীকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি হিন্দু এবং মুসলিম জীবন পদ্ধতি সম্বন্ধে গভীরভাবে জানতেন। ফলে অন্যান্য সমসাময়িকদের চেয়ে তিনি অনেক বেশি সুযোগ পান। কারণ একটি নয় দুটি ধর্মীয় উৎস থেকেই তিনি সমানে পুরাকাহিনী এবং ঐতিহাসিক উপাদান আহরণ করেছিলেন। অন্যরা এমনকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পর্যন্ত মাত্র একটি উৎস ব্যবহার করেছিলেন অন্যটি বাদ দিয়ে। সাম্প্রদায়িক ঐক্যের পিছনে নজরুলের অবদান কম নয়। সাহিত্যেও এর গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এর ফলে নজরুলের সাহিত্য পেয়েছে ব্যতিক্রমী বিস্তৃতি আর বৈচিত্র্য। নজরুলের গানের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। তাঁর মধ্যে সবচেয়ে চাহিদা ছিল ঈদ, রোজা, মুহররম, আল্লাহ, নবীর উপর লেখা গানগুলির। এ্যাঙলো স্যাকসন কবিতায় যেমন যীশু তেমনি ইসলামের বীরেরা পরির্বতন ভাবে রূপায়িত। তারা হয়ে উঠেছিলেন স্থানীয় একই সাথে জনপ্রিয় এবং আবেদন সৃষ্টিকারী। মুসলমানদের এসব গানের প্রয়োজন ছিল। কাজেই নজরুল তাঁর স্বধর্মীদের কাছ থেকে সবচেয়ে সহানুভূতিশীল ভালোবাসা পেয়েছিলেন। তিনি সমান যোগ্যতার সাথে হিন্দু বিষয়ের উপরেও গান লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এটা একটা শ্রেষ্ঠ ঘটনা। যেগুলো সা¤প্রদায়িক সংগীতেও প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু তিনি কৌশলী ছিলেন। তাঁর গানের একজন মুসলিম গায়কের নাম প্রকাশ হলে হিন্দু ক্রেতারা কেউ কিনবে না ভেবে নাম চেপে গিয়েছিলেন। নজরুলের ইসলামী গানের একজন হিন্দু গায়ক সম্ভাবনাময় মুসলমান ক্রেতাদের মাঝে আর্কষণ রাখবার জণ্য মুসলমান নাম নিয়েছিলেন। নজরুল ছিলেন অসা¤প্রদায়িক কবি। রবীন্দ্রনাথের প্রতি শতভাগ আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখেই লিখছি, তিনি ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পে কাবুলিওয়ালা রহমতকে জেলে পাঠিয়েছেন আবার অন্যদিকে কথাসাহিত্যিক শরৎ বাবু ‘মহেশ’ গল্পে গফুরকে গরু হত্যার অভিযোগে গ্রাম ছাড়া করেছেন। ফলে নজরুল ছাড়া এতবড় অসাম্প্রদায়িক ও সাংস্কৃতিক মিলনের কবি বাংলা সাহিত্যে আর কেউ আছেন কিনা সন্দেহ? তাঁর কবিতা ও গান হিন্দু মুসলমান সংস্কৃতির মিলনাত্মক ঐক্যবদ্ধ ভারতের নিবিড় এক উপলব্ধি সঞ্চার করে দেয়, যার তুল্য ভিন্নতর দৃষ্টিতে বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ। সমালোচক আজহার উদ্দীন যর্থাথই বলেছেন, ‘একদিকে হিন্দু সংস্কৃতির মনীষা, ত্যাগ ও তপস্যা, অপরদিকে মুসলিম সংস্কৃতির দুর্বার তেজ ও দুরন্ত সাহসের অর্পূব মিশ্রনে যে দিব্য মানবত্বের সৃষ্টি হয়, কবি নজরুলের সাহিত্য সেই রসাদর্শের সাহিত্য। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে আহরিত জ্ঞান ও বাংলা ভাষার পাশাপাশি আরবি-ফারসি-হিন্দি, উর্দু-সংস্কৃতি শব্দাবলি নজরুলের সাহিত্যকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্যে চির ভাস্কর করেছে। জীবনের বেলায়-অবেলায় কবি সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতিকে অনুভব করেছিলেন হৃদয় দিয়ে। নজরুলের কারাজীবনে অন্তরঙ্গ সুহৃদ নরেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী নজরুলের বাঙালীত্ব সম্বন্ধে যে বক্তব্য করেছেন তার অংশবিশেষ হচ্ছে, ‘হিন্দু ও মুসলমানের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন ছিল বাঙালী ও বাঙালীত্ব নিয়ে। বাংলার সবই ছিল কাজীর আপন, প্রিয় পুরাণ, রামায়ণ, বা মহাভারত বাঙালীর কাব্য। কাজী বাঙালী। তাই কাজীর কাছে প্রাচীন কাব্য ও সাহিত্য তার রূপ ও বৈভব নিয়ে ধরা দিয়েছে। বিদ্্েরাহ আর প্রেমের সমন্বয়ে কাজী বাঙালী কবি, কাজী বাঙালী মরমী প্রেমিক, কাজী বিদ্রোহী বাঙ্গালীর মুখর বন্দনা।’ নজরুলের সাহিত্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, নজরুল হিন্দু দেব দেবীকে নিয়ে যেমন কবিতা, গান ইত্যাদি রচনা করেছেন তেমনি মুসলিম আদর্শ ও ঐতিহ্যকে অপূর্ব সুন্দরভাবে অসামান্যভাবে তুলে ধরেছেন। অসাম্প্রদায়িকতা কবির মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। নজরুলের চেহারার মধ্যেই ধরা পড়ে তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর, তাঁর বলিষ্ঠ সুগঠিত দেহে উছলে পড়া তেজদীপ্ত প্রাণ, মাথার বড় বড় ঝাঁকড়া চুল যেন উজ্জীবিত সরস প্রাণ, চোখ দুটি যেন পেয়ালা যা প্রাণের অরুণ রসে সর্বদাই ভরপুর, গলার সুর যেন ঝড়ের ঝাপটা হাওয়া, আর হৃদয়ে যেন সকল মানুষের বসতি। সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতিকেই যিনি বড় করে দেখেছেন সেই বিদ্রোহী নজরুল ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনে তেমন বিদ্রোহী ছিলেন না। স্ত্রী এবং শাশুড়ী ছিলেন। এটা তার জীবনে মানসিক দুর্বলতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। এই পরিবেশই একদিকে যেমন লিখেছেন শ্যামাসংগীত, অপরদিকে হৃদয় উজাড় করে রচনা করেছেন ইসলামী সংগীত, হাম্দ, নাত, গজল আর কবিতা। নজরুলের বহুমুখী জীবন ও বিচিত্র প্রকৃতির বিষয়ে তাঁর পরমবন্ধু নলিনী কান্ত সরকার রচনাংশ উদ্বৃত হল- ‘সাহিত্যে নজরুল, সংগীতে নজরুল, সভা সমিতিতে নজরুল, আড্ডা-মজলিসে নজরুল, দেশব্যাপী বন্দনায় নজরুল, দ্বেষদুষ্ট লাঞ্চনায় নজরুল, দাবা খেলায় আত্মভোলা নজরুল, ফুটবল মাঠে আত্মসচেতন নজরুল, রঙ্গরসে নজরুল, ব্যঙ্গবিদ্রুপে নজরুল, যোগী নজরুল, ভোগী নজরুল, হস্তরেখা-পাঠে অধ্যবসায়ী নজরুল, কলগীতি পাঠে অধ্যবসায়ী নজরুল।’ কোথায় কিসে নাই নজরুল? কিন্তু এই ছোট ছোট টুকরোগুলো জোড়া দিলে যে সম্পূর্ন আকার রূপ পরিগ্রহ করে, সেই নজরুল এসবের সমষ্টির চেয়ে আরও বড়। যাঁর তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছেন, তাঁরাই এ সত্য উপলব্ধি করেছেন। বিংশ শতাব্দীর কোলে নজরুল যেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বিদায়কালীন প্রীতিউপহার।’ তাই নজরুল মিশে আছেন জীবনের প্রতিটি ছন্দে, সাহিত্যের ভাঁজে ভাঁজে, স¤প্রীতির গভীরতায়। প্রতিটি মানুষ একটি হৃদপিন্ড, শ্বাসনালী, সুগঠিত মস্তিষ্ক, প্রবহমান ধারার রক্তকণিকা এবং শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে গঠিত। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যের এই মানুষের মাঝেই রয়েছে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য। যার কালো থাবায় ঘটেছে নিষ্ঠুরতম অমানবিক নির্যাতন। সাম্প্রদায়িক চেতনাই বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ধারণাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। অথচ সব ধর্মেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক স¤প্রীতি বজায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। এ সাম্প্রদায়িকতার ফলেই হিটলার তার গ্যাস চেম্বারে লক্ষ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করেছে। ধর্মের ভিত্তিতেই সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান ও ভারত। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের জাতীগত বিরোধ লেগেই আছে। ইসরাইল ফিলিস্তিনের গাজা শহরকে উত্তর স্পেনের ছোট শান্ত শহর গুয়ের নিকার মত ধ্বংস করছে। বিশ্বের অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করা সাম্প্রদায়িকতা নির্মূল করার অন্যতম উপাদান হচ্ছে জাতিগত ভ্রাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা। কাজী নজরুলের সেই উদ্দীপ্ত কন্ঠের জয়ধ্বনির আলোকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা সৃষ্টি করা একান্ত অপরিহার্য কর্তব্য। সূর্যের আলো তার অপার শক্তি থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে না, চাঁদের আলো পারে না তার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য থেকে মানুষকে বঞ্চিত করতে, ফুলের সৌরভ পারে না তার ঘ্রাণ থেকে বঞ্চিত করতে, সাগর পারে না তার উত্তাল ঢেউকে বন্ধ করতে, মমতাময়ী মা পারে না এক সন্তান কে কোলে রেখে আরেক সন্তানকে ফেলে দিতে। তেমনিভাবে স্বর্গরূপী এই পৃথিবীর বুকে জন্ম নেওয়া মানব সন্তানদের পৃথক করতে পারে না কোন অশুভ শক্তি। বৃক্ষের আঁকড়ে ধরা মাটির মত মানব সন্তানেরা আঁকড়ে ধরে আছে এই পৃথিবীকে। তারা চায় না বিভক্ত হতে, ভেঙ্গে যেতে, বৈষম্যের স্বীকার হতে। সাম্য, মৈত্রী, মানবতা, ভালোবাসা, উদারতা , সহমর্মিতা ও সহযোগিতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এক অসাম্প্রদায়িক পল্লীতে বসবাস করতে চায় পৃথিবীর মানুষ। যেটা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ধর্মের বন্ধনে মানুষের বৈশিষ্ট্য, মানবতার বন্ধনে ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতার বন্ধন মানুষের প্রাপ্য, সহযোগিতার বন্ধনে মানুষের শক্তি, উদারতার বন্ধন মানুষের কাম্য আর ভালোবাসার বন্ধন দুর্ভেদ্য। আর এই বন্ধনের সমষ্টিতেই বিস্তৃতি লাভ করে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি। হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনের পরতে পরতে জেগে উঠেছে ভ্রাতৃত্ববোধ, বিস্তৃতি লাভ করে সৌহার্দ্য ও স¤প্রীতির। কবি এই সত্য উপলব্ধিকেই ছন্দবোধ চরণে ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘নানান বরন গাভীরে ভাই একই বরন দুধ, জগৎ ভরমিয়া দেখি সবই একই মায়ের পুত।’ বর্তমানকে নিয়েই তার জীবন। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি ছিলেন শতভাগ উদাসীন। এজন্য বহু অর্থায়ন সত্তে¡ও জীবনের শেষ দিকে তিনি অভাবের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন। ১৯৪২ সালে দুরারোগ্য মানসিক ব্যাধির আক্রমণে কবির স্মৃতিশক্তি লুপ্ত প্রায় হয়ে গেল। আচ্ছা, একশত ভাগ সার্থক কবির কি স্মৃতিশক্তি লুপ্ত হতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা। পরবর্তীতে সুদীর্ঘ ৩৫ বছর কাল জীবন্মৃত অবস্থায় কাটিয়ে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ই ভাদ্র) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। একজন কবি কি কখনো মরে যেতে পারেন? না, এটা শুধুই তার দৈহিক জীবনের অবসান। যাঁর কাব্যের অমর সৃষ্টিমালা আমাদের হৃদয়ে আজও ধ্বনিত হয় তিনি বেঁচে আছেন সাহিত্যের অলি-গলিতে, কাব্যের মাধুর্যতায়, প্রবন্ধের স্বকীয়তায়, ছোট গল্পের বর্ণনার ছোটায়, উপন্যাসের গভীরতায়, নাটকের প্রাণচঞ্চলতায় এবং গানের মূর্ছনায়। সাম্প্রদায়িক ঐক্যের সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার কিছু লাইন লিখে শেষ করছি, ‘গাহি সাম্যের গান- যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।’

লেখকঃ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন