পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নারায়ণগঞ্জে এক গৃহবধূকে অচেতন করে ধর্ষণ ও আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে কয়েক লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছে এক পুলিশ সদস্য। রংপুরে ধর্ষণ থেকে রক্ষা পেতে বঁটি দিয়ে দুলাভাইয়ের হাত কেটে দিয়েছে শ্যালিকা। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে বাবার দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বাকপ্রতিবন্ধী এক শিশু। এছাড়া যশোর, পিরোজপুর ও নারায়ণগঞ্জে পৃথক ধর্ষণের ঘটনায় ৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ : গৃহবধূকে অচেতন করে ধর্ষণ ও আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে কয়েক লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত সোমবার সকালে ওই গৃহবধূ নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ সোমবার রাতেই অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য সাব্বির আহমেদ মেহেদীকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার সাব্বির আহমেদ মেহেদী চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানার মালিগাঁও এলাকার মো. আনোয়ার হোসনের ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।
ওই গৃহবধূ বলেন, আমি আমার দুই মেয়ে সন্তানকে নিয়ে মতিঝিল মডেল স্কুলে আসা যাওয়ার সুবাধে সাব্বির আহম্মেদ মেহেদীর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরে মোবাইল ফোনে কথা হতো। এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ৭ আগস্ট সাব্বির আমাকে ফোন করে বলে যে জরুরি কথা আছে। তখন আমি আমার ভাইয়ের বাসা নারায়ণগঞ্জ শহরের উত্তর চাষাঢ়ায় আছি বলে জানাই। আর জরুরি কথা হলে বাসায় আসতে বলি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সাব্বির আমার ভাইয়ের বাসায় আসার সময় সঙ্গে একটি কোকাকোলার বোতল নিয়ে আসে। সে আমাকে কোকাকোলা খাওয়ানোর পর আমি অচেতন হয়ে যাই। তখন বাসায় কোনো লোকজন না থাকার সুযোগে সে আমাকে ধর্ষণসহ আপত্তিকর ছবি তুলে রাখে।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আমার জ্ঞান ফিরলে সাব্বির আমাকে হুমকি দিয়ে বলে ‘তোমার নোংরা ছবি আমার কাছে আছে। বিষয়টি কাউকে জানালে আমি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবো’। এ সুযোগে আরও কয়েকবার সে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে আমাকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে অশ্লীল ছবির ভয় দেখিয়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। পরে মানসম্মানের ভয়ে দুই লাখ টাকা দেই। আর সাব্বির আমার কিছু স্বর্ণের গহনা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে সাব্বির বাকি এক লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং গত ১১ আগস্ট বিকাশের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকা দেই। পরে আমি সাব্বিরকে আর টাকা দিব না বললে তার মোবাইলের অশ্লীল ছবিগুলো আমার মোবাইলে পাঠিয়ে দেয়। এসব ছবি আমার স্বামীর মোবাইলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দেয়। তাই ভয়ে ভাইয়ের বাসায় এসে থাকছি।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জয়নাল আবেদীন জানান, এক নারী বাদী হয়ে ধর্ষণের মামলা করেছেন। মামলাটি ডিবি তদন্ত করছে।
জেলা ডিবির পরিদর্শক এনামুল হক জানান, মেহেদী নামে এক যুবককে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।
অন্যদিকে, এক কিশোরীকে গণধর্ষণ মামলার রায়ে চার যুবককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় দন্ডপ্রাপ্ত একজন আদালতে হাজির ছিল।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলো- নারায়ণগঞ্জ সদরের শহীদনগর এলাকার শান্তি মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম, একই এলাকার নাছির মিয়ার ছেলে শাকিল হোসেন, গিয়াস উদ্দিনের ছেলে চঞ্চল ও ফতুল্লার মুসলিমনগর এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে আরিফ। এদের মধ্যে চঞ্চল আদালতে উপস্থিত ছিল এবং অন্যরা পলাতক। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পলাশ নামে এক ব্যক্তিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর রাকিব উদ্দিন বলেন, ২০১০ সালের ১৫ মার্চ রাত ১০টায় নারায়ণগঞ্জ সদরের তামাকপট্টি এলাকায় কারখানার কাজ শেষে এক কিশোরী বাড়ি ফেরার পথে পথরোধ করে চার যুবক। এরপর কিশোরীকে শহীদনগর এলাকার আনোয়ারের বাড়ির রান্না ঘরে নিয়ে যায় তারা। সেখানে কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে চার যুবক। এ ঘটনায় কিশোরীর মা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। নয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মঙ্গলবার মামলার রায় ঘোষণা করেছেন বিচারক। এ সময় দন্ডপ্রাপ্ত একজন আদালতে উপস্থিত ছিল এবং অন্যরা পলাতক।
রংপুর : রংপুরে শ্যালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে দুলাভাই। এ সময় ধর্ষণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে বঁটি দিয়ে দুলাভাইয়ের হাত কেটে দিয়েছেন শ্যালিকা।এ ঘটনায় থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন শ্যালিকা। পরে শ্যালিকাকে ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্ত দুলাভাই রফিকুল ইসলামকে (২৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার রফিকুল কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকার পশ্চিম পোদ্দারপাড়া বাঁধেরপাড় গ্রামের সামছুল হকের ছেলে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানা পুলিশের এসআই রসিক কুমার কুন্ড বলেন, গত রোববার রাতে দক্ষিণ বানুপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন দুই সন্তানের জননী ওই গৃহবধূ।
ওই সময় তার স্বামী বাড়িতে ছিলেন না। পাশেই বাঁধেরপাড় এলাকায় বাড়িতে থাকেন তার দুলাভাই রফিকুল ইসলাম। স্বামী বাড়ি না থাকার সুযোগে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে দুলাভাই রফিকুল দরজার শিকল খুলে শ্যালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় ধর্ষণের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে বঁটি দিয়ে দুলাভাইয়ের হাতে কোপ মারেন শ্যালিকা। এতে দুলাভাইয়ের ডান হাত কেটে যায়।
এ ঘটনায় সোমবার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে অভিযান চালিয়ে রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল শ্যালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন বলেও জানান এসআই রসিক কুমার কুন্ড।
সুনামগঞ্জ : ধর্মপাশায় প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে বাকপ্রতিবন্ধী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত প্রতিবেশী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ধর্মপাশা গ্রামের বাসিন্দা খোকন চৌধুরীর ছেলে রোম বাদশা ওরফে রুমালী (১৮)।
জানা গেছে, ধর্মপাশা বাজারে শিশুটির বাবার একটি দোকান রয়েছে। শিশুটি তার বাবার সাথে ওইদিন বিকেলে দোকানে গিয়েছিল। শিশুটির বাবা রাত পৌনে আটটার দিকে দোকানের সামনে রুমালীকে পেয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বললে রুমালী শিশুটিকে সাথে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে গিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে রুমালী।
শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে তার মাকে বিষয়টি ঈশারা ইঙ্গিতে বোঝায়। এরপর নির্মাণাধীন একটি ভবনের কাছে নিয়ে যায় মাকে। পরে মেয়েটি তার মাকে ওই প্রতিবেশীর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং অভিযুক্তকে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে রুমালী বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
শিশুটিকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাতেই নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় রোববার রাতেই ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে রুমালীকে আসামি করে ধর্মপাশা থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন।
ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘রাতেই মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে থানায় ধর্ষণ মামলা করেছেন। আসামিকে খুঁজে বের করে গ্রেপ্তারের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
যশোর : যশোরের চৌগাছায় ছয় বছরের শিশু ধর্ষণ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শিব রায় (১৯) গ্রেফতার হয়েছে। যশোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যরা মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শালঘর মধুয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, শিব তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিল। পিবিআই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট দুপুরে চৌগাছার দেবালয় গ্রামে সুকুমার রায়ের ছেলে শিব রায় শিশুটিকে ধর্ষণ করে।
পিরোজপুর: বিধবা ভাবিকে ধর্ষণের দায়ে বাবুল হাওলাদার কালা (২৮) নামের এক যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তার এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মিজানুর রহমান এ আদেশ দেন।
দন্ডপ্রাপ্ত বাবুল হাওলাদার মঠবাড়িয়া উপজেলার কবুতরখালী গ্রামের মৃত প্রেমাংশু হাওলাদারের ছেলে। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী তার স্বামী মারা যাওয়ার পর ছয় বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতেই বসবাস করছিলেন। এ অবস্থায় দেবর বাবুল হাওলাদার প্রায়ই তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। এতে রাজি না হওয়ায় ২০১০ সালের ১৭ আগস্ট রাতে তার ঘরে ঢুকে মুখে গামছা বেঁধে ধর্ষণ করে। পরে তিনি বিষয়টি অপর দেবর ও শ্বাশুড়িকে জানালে তারা বাবুলকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং ঘটনার বিধবা ভাবিকে বিয়ে করতে বলেন। বাবুল এতে রাজি হয়ে ওই নারীকে মন্দিরে নিয়ে মালাবদল করে ২০১১ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রী হিসাবে একই বাড়িতে বসবাস করেন। এক পর্যায়ে ওই নারী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এ সময় বাবুল অন্যত্র বিয়ে করে আগের স্ত্রীকে অস্বীকার করেন। পরে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বাবুল হাওলাদারের বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া থানায় ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী। দীর্ঘ শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত এই রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিশেষ পিপি আব্দুল রাজ্জাক খান বাদশা। তবে আসামি পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।