পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বুড়িগঙ্গা তীরে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের গণদাবী বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট সক্রিয় দেখা গেলেও উচ্ছেদের পর তার যথাযথ উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও নজরদারি না থাকায় এসব জমি আবারো বেদখল হয়ে যায়। এটি কোনো নতুন চিত্র নয়। দীর্ঘদিন ধরেই নগরীতে এই অবস্থা চলে আসছে। ব্যাপক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদী থেকে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ, ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদের পর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো তা বেদখল হয়ে যাওয়ার দৃশ্য এখন নগরবাসির কাছে পরিচিত হয়ে গেছে। উচ্চ আদালতও এ বিষয়টিকে ইঁদুর বিড়াল খেলা বলে অভিহিত করেছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বুড়িগঙ্গা থেকে গতমাসে উচ্ছেদ হওয়া স্থানগুলোর মধ্যে অন্তত ২৩টি ঘাটে পুনরায় দখল করে বালু ব্যবসা করছে পুরনো দখলবাজ সিন্ডিকেট। গত ১১ জুলাই বুড়িগঙ্গায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে বিআইডাব্লিউটিএ কর্মকর্তাসহ কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের উপর হামলা চালায় দখলদারের সন্ত্রাসীরা। নদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ একটি গণদাবী এবং জাতীয় কর্মসূচির অংশ। এই কর্মসূচিতে শুধু বাঁধাই দেয়া হয়নি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটসহ সরকারী কর্মকর্তাদের আহত করা হয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় অবৈধ দখলদাররা কতটা বেপরোয়া। এরপর উচ্ছেদকৃত জমিতে আবারো দখলবাজি করে দিব্যি ব্যবসায় চালিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকায় পানি সঙ্কট, পরিবেশ দূষণ, যানজটসহ নাগরিক দুর্ভোগের জন্য নদী ও ফুটপাথের অবৈধ দখলদাররা অনেকাংশে দায়ী। জনদুর্ভোগ ও দূষণ রোধে সরকারের নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করতে এমনিতেই অনেক বেশি সময় ক্ষেপণ হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার চারপাশের সবগুলো নদী দখলে ও দূষনে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। বুড়িগঙ্গার দূষণ রোধ করতে হাজারিবাগ থেকে টেনারিশিল্প সরিয়ে নিতে প্রায় দুই দশক সময় লেগেছে। তবে নদী দূষণের জন্য দায়ী অন্য সব শিল্প কারখানা এবং আবাসিক বর্জ্য ফেলা রোধে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে অবৈধ দখলমুক্ত করার পাশাপাশি নদীতে শিল্পকারখানা ও নাগরিক বর্জ্য ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণই বড় চ্যালেঞ্জ। পানি, বায়ু, মাটি ও শব্দদূষণের মত বিষয়গুলো অগ্রাহ্য করে বাসযোগ্য আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিশেষত: বুড়িগঙ্গাসহ চারটি নদী থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও দূষণ রোধের পাশাপাশি নদীপাড়ে সার্কুলার ওয়াকওয়ে, রাস্তা ও ওয়াটার বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেয়া হলেও যথাযথভাবে তা বাস্তবায়িত না হওয়ার কারণ এখনো অজ্ঞাত। শহরের তীব্র যানজট এড়িয়ে সদরঘাট থেকে নৌপথে উত্তরাংশে যাতায়াতের দ্রুতগামি আধুনিক বিকল্প ব্যবস্থার সুৃযোগ থাকা সত্বেও এক দশকের বেশি সময়েও তা বাস্তবায়ন না হওয়া বিষ্ময়কর।
নদীর সুপেয় পানি এবং বাণিজ্যিক পরিবহণ ও যাতায়াতের সুযোগসুবিধার উপর ভিত্তি করেই প্রাচীনকালে একেকটি সভ্যতা ও আধুনিক নগরীর গোড়াপত্তন ঘটেছিল। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালুনদী ঢাকার প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রতিরক্ষা ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের অংশ। অবৈধ দখলবাজি, যথেচ্ছ দূষণের মাধ্যমে এই অমূল্য সম্পদ ও নাগরিক সভ্যতার লাইফ লাইন এভাবে বিনষ্ট হওয়ার নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই। সরকারের সংস্থাগুলো কোটি কোটি টাকা খরচ করে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আইনগত জটিলতা অতিক্রম করে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার পর দু-একমাসের মধ্যেই তা পুনরায় বেদখল হয়ে যাওয়ার বাস্তবতা মেনে নেয়া যায় না। উচ্ছেদের পর উদ্ধারকৃত জমি কিভাবে উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করা হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা ও গাইডলাইন না থাকা এবং দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তি ও জরিমানার তেমন কোনো দৃষ্টান্ত না থাকায় উচ্ছেদের পরও দখলবাজরা পুনরায় তা দখল করে নিতে কুণ্ঠিত হয় না। শুধু অবৈধ দখল উচ্ছেদের প্রশ্নেই নয়, নদী সংরক্ষণ, দূষণরোধ এবং নদী সন্নিহিত এলাকায় মনোরম নাগরিক পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো শিল্প কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য যেন সরাসরি নদীতে ফেলতে না পারে তার উপর কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ, পরিবেশ অধিদফতর, শিল্পমন্ত্রনালয়, সিটি কর্পোরেশনসহ সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রয়োজনে সকলের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক কমিশন গঠন করা যেতে পারে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের নামে ইঁদুর বিড়াল খেলা ও কোটি কোটি টাকার অপচয় নগরবাসি আর দেখতে চায় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।