পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তেলসমৃদ্ধ দেশ সউদী আরবের বৃহৎ শ্রমবাজার নিয়ে চরম হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই গামকার মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর সাথে যোগসাজশ করে হাজার হাজার কর্মী পাঠানোর দায়ে প্রায় ২০০ অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভার ব্লক করেছে ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। ফলে এসব এজেন্সির শত শত ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই কর্মী পাঠানোর অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সউদী দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন বলে অভিযুক্ত কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি দাবি করেছে।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেতে সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। এতে দেশটিতে কর্মী গমনের সংখ্যাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ২৪ ঘণ্টায় হাতে পেতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপনের ওপর তাগিদ দিয়েছে। অতিসম্প্রতি বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ ও মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ তাগিদ দেয়া হয়।
গামকা (গালফ অ্যাপ্রুভ মেডিক্যাল সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন) নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশের ১৫টি মেডিক্যাল সেন্টারকে অকার্যকর ঘোষণা করেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। জনশক্তি রফতানির এই সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার ধরে রাখতে না পারলে রেমিট্যান্স খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে গত জুন মাস পর্যন্ত সউদী থেকে প্রবাসী কর্মীরা ৩১১০ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্সে দেশে পাঠিয়েছেন। গত জুলাই মাসেই সউদী প্রবাসীরা ৩৩১ দশমিক ২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছে।
বিএমইটি’র সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ অভিবাসী কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তারা ২০১৮ সালে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে, যা জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম সহায়ক শক্তি। সরকার রেমিট্যান্স ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স যথাসময়ে না পেলে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে কর্মী প্রেরণ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে সরকারের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় রেমিট্যান্স আয় ব্যাহত হবে।
গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সউদী আরবে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪১০ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে দেশটিতে শুধু মহিলা গৃহকর্মী গেছে ৪৪ হাজার ২ জন। ২০১৮ সালে সউদীতে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭ জন কর্মী চাকরি লাভ করে। এর মধ্যে মহিলা গৃহকর্মীই গেছে ৭৩ হাজার ৭১৩ জন। সউদী কর্তৃপক্ষ দেশটিতে মহিলা গৃহকর্মী নিয়োগে নতুন করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাধ্যতামূলক করেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিদেশ গমনেচ্ছুদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লেগে যাচ্ছে। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ দিন লাগায় সউদী নিয়োগকারীরা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এতে সউদীর জনশক্তি রফতানির বাজার হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।
বাংলাদেশে বিদেশ গমনেচ্ছুদের বহির্গমন ছাড়পত্র পক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘসূত্রতার দারুণ সউদী সরকার কর্মী নিয়োগে দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে। দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো বিদেশে কর্মী নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে মাত্র তিন দিন সময় নিচ্ছে।
সউদীর শ্রমবাজারকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টায় বিদেশ গমনেচ্ছুদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইস্যুর জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রবাসী মন্ত্রী ইমরান আহমদ গত ২৫ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। অদ্যাবধি এ বিষয়ে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ চোখে পড়েনি। প্রবাসী মন্ত্রী তার লিখিত প্রস্তাবে বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করা না হলে কর্মীদের পাসপোর্ট ভিসার জন্য জমা নিচ্ছে না সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীরা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহে নানাভাবে হয়রানির শিকার এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগস্ত হচ্ছে। এতে করে বৈদেশিক কর্মসংস্থানে পিছিয়ে পড়ছে দেশ। ফলে মূল্যবান রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স হাতে পেতে দেড় থেকে দুই মাস সময় লেগে যাচ্ছে। সময়মতো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স না পাওয়ায় কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সি যথাসময়ে কর্মী পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় ডিমান্ড লেটার বাতিলসহ আর্থিকভাবে সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে অভিবাসন খাতে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হচ্ছে। প্রবাসী মন্ত্রী তার প্রস্তাবে সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের বিড়ম্বনা কমাতে এবং অভিবাসন খাতকে আরো গতিশীল করতে ২৪ ঘণ্টায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইস্যু করতে পুলিশ হেডকোয়ার্টাস, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অথবা বিএমইটিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপনের জন্য জোর অনুরোধ জানান। কিন্তু এখনো এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এতে বায়রা কর্তৃপক্ষ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জনশক্তি রফতানির বৃদ্ধির স্বার্থে অবিলম্বে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
সম্প্রতি লেবার উইংয়ের শ্রম কল্যাণ সম্মেলনে বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদ বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইস্যুতে দেড়-দুই মাস বিলম্ব হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, সউদী দূতাবাসে ভিসার জন্য কর্মীদের পাসপোর্ট জমা দিলে ২৪ ঘণ্টায় ভিসা দিচ্ছে। কিন্তু কর্মীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় সউদীর শ্রমবাজার হাতছাড়া হচ্ছে। সউদীসহ মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রফতানি হ্রাস পাচ্ছে। বায়রার সভাপতি ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপনের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইস্যুর জোর দাবি জানান।
সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের গামকার মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। কিন্ত ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে উল্লেখিত সুবিধাবাদী রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বিদেশগামী কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করেই অনলাইন সিস্টেমে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ফিট (আপগ্রেড) দেখিয়ে ভিসা করে সউদী পাঠিয়ে আসছিল। এ প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে কোনো অসুস্থ কর্মী সউদী আরবে চলে গেছে কি না তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারছে না। দুই মাস আগে এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ নড়ে চড়ে বসে। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর অনলাইনে আপগ্রেড দেখিয়ে কর্মীদের ভিসা নিয়ে সউদী পাঠানোর দায়ে প্রায় ২০০ রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভার ব্লক করে দেয়। এছাড়া অভিযুক্ত বেশ কিছু রিক্রুটিং এজেন্সিকে সরকারি স্ট্যাম্পে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। সার্ভার ব্লককৃত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোতে প্রতিদিন বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীরা ভিড় জমালেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না। সউদীর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছেন এসব ক্ষতিগ্রস্ত কর্মী। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সার্ভা ব্লক প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, এজন্য অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোই দায়ী। বায়রা মহাসচিব বহির্বিশ্বে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরো সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।