পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য নিয়ে কূটনীতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে অস্ত্র কেনা এবং ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত অমিমাংসিত ইস্যুতে তার বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। গত বুধবার ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. একে মোমেন বলেছেন, ‘ভারতের দেয়া ঋণের টাকায় ওই দেশ থেকেই সামরিক সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কী ধরনের অস্ত্র কেনা হবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’ একইসঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছেন, কী কী অস্ত্র কেনা হবে তার সিদ্ধান্ত নেবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। তার এই বক্তব্যে এক ধরনের বৈপরীত্য রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। একদিকে তিনি বলেছেন, ভারত থেকে অস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, অন্যদিকে বলেছেন এ সিদ্ধান্ত নেবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। এ বক্তব্যের পাশাপাশি গত ২০ আগস্ট ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শংকরের সাথে বৈঠকের পর তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের পানিসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে যেসব অমিমাংসিত বিষয়ে জাতিসংঘে আপত্তি দায়ের রয়েছে, সেগুলোর মিমাংসায় দেশগুলোর সাথে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে উঠিয়ে নেয়া যায় এ ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। তার এ বক্তব্যে কূটনীতিবিদরা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, এটি ভারত ও মিয়ানমারের কাছে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার শামিল এবং তা করা হলে দেশের জন্য চরম ক্ষতি বয়ে আনবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছ থেকে যখন দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার মতো বক্তব্য শোনা যায়, তখন বিস্মিত হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আগ বাড়িয়ে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। ব্যক্তিগতভাবে কোনো দেশের প্রতি তার আবেগ, অনুভূতি তীব্র হতে পারে, তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এই ভাবাগের বহিঃপ্রকাশ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ ধরনের ব্যক্তিগত অনুভূতি দেশের স্বার্থপরিপন্থী এবং ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে। বরং পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় না হয়ে দেশের স্বার্থের পক্ষে হওয়াই শ্রেয়। পরিতাপের বিষয়, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ক্ষেত্রে এ ধরনের রাষ্ট্রীয় আচরণের ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তিনি প্রতিবেশিদের সাথে দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে ভারতের প্রস্তাব এবং তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে সাড়া দেয়া উচিত হবে না বলে মত দিয়েছেন সরকারের শরিক দলের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ২০১৭ সালে ভারতের সঙ্গে ৫০ কোটি মার্কিন ডলারের যে ঋণ চুক্তি বাংলাদেশ করে তাতে ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার কোনো কথা ছিল না। সরকার এ ধরনের কোনো বিষয়ে সাড়া দেবে বলে মনে করি না। শুধু রাশেদ খান মেননই নন, অন্যান্য রাজনীতিবিদরাও এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। সমুদ্রসীমা নিয়ে অমিমাংসিত বিষয়ে আগ বাড়িয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন কূটনীতিবিদরা। তারা মনে করছেন, যেখানে আন্তর্জাতিক আদলতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলায় আমরা ভারতের সাথে লড়ে জিতেছি এবং সরকারসহ দেশের মানুষ এ নিয়ে গর্ববোধ করে, সেক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য খুবই অনাকাক্সিক্ষত এবং দেশের স্বার্থের বিপরীত। এ বিষয়ে তার বক্তব্য দেয়া উচিত হয়নি। এতে তার অতি উৎসাহী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। তারা বলছেন, যেখানে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত অমিমাংসিত বিয়গুলো মিমাংসার জন্য জাতিসংঘে দাখিল অবস্থায় রয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে তার বক্তব্য না দেয়াই দূরদর্শীতার পরিচায়ক হতো। প্রতিবেশি দেশের সাথে পারস্পরিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতেই পারে। তার মানে এই নয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্পর্শকাতর বিষয়ে অনতিবিলম্বে বক্তব্য দিতে হবে। বরং রয়েসয়ে বোধ বিবেচনা করে বক্তব্য দেয়াই শ্রেয়। তাছাড়া এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ রয়েছে। সেখানে বিষয়গুলোর সার্বিক ভাল-মন্দ দিক নিয়ে আলাপ-আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এ ধরনের বক্তব্য দেয়া কোনোভাবেই সমিচীন নয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উল্লেখিত বক্তব্য তার নিজস্ব নাকি সরকারের পলিসি তা স্পষ্ট হওয়া জরুরী। তিনি যদি সরকারের পলিসি অনুযায়ী এসব কথা বলে থাকেন, তাও সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে বক্তব্য দেয়া প্রয়োজন। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের কাছ থেকে অনাকাক্সিক্ষত বক্তব্যের কারণে বিভ্রান্তি ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে তা তার বা তাদের ব্যক্তিগত বক্তব্য হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রীদের সতর্ক করে এ কথাও বলা হয়েছে, তারা যাতে সংযত হয়ে কথা বলেন। দেশের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী সম্প্রতি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, আমরা আশা করব, নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে সরকার তার অবস্থান পরিস্কার করবে। কারো ব্যক্তিগত পছন্দ, আবেগ-অনুভূতির কারণে দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়, এমন বক্তব্যের ক্ষেত্রে সতর্ক ও সংযত হওয়া বাঞ্চনীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।