Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গঙ্গা-পদ্মার পাড়ে বন্যার পদধ্বনি

ভারতে অতিবৃষ্টিতে ফের আসছে ঢল : উজান ও ভাটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে পানি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

এবার গঙ্গা-পদ্মার পাড়ে বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে। উজানভাগে ভারতে অতিবৃষ্টির ফলে গঙ্গা নদী হয়ে ভাটির দিকে নেমে আসছে ঢল। গঙ্গার উজান ও ভাটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে পানি। চলতি আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ গঙ্গা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। গঙ্গার ভাটিতে রাজশাহী এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার কাছাকাছি কিংবা স্থানভেদে সাময়িকভাবে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে করে আগস্টের শেষের দিকে কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কতিপয় স্থানে নিম্নাঞ্চলসমূহে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

চলতি আগস্ট মাসের বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে গতকাল বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র একথা জানায়। এই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদনে জানা গেছে, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে গঙ্গা বেসিনের ভারতীয় অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এ অঞ্চলের ভারতীয় অঞ্চলে গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরফলে এ নদীর ভাটিতে বাংলাদেশের গঙ্গা অংশে পানি সমতল বেড়ে যাচ্ছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে চলতি মাসের শেষ অবধি।
পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র বেসিনের বাংলাদেশ ও এর সংলগ্ন ভারতীয় প্রদেশসমূহে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে বর্তমান নদ-নদী প্রবাহের পরিস্থিতি বিবেচনায় চলতি মাসের শেষ নাগাদ ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদীর অববাহিকায় বন্যার ঝুঁকি নেই। তবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে বর্ষার মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তর জনপদে তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি সমতল সাময়িকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। দুই দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, এ মাসের চতুর্থ (চলতি) সপ্তাহে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম ও মেঘালয় অংশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে উক্ত সময়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীসমূহের পানির সমতল সাময়িকভাবে দ্রæত বৃদ্ধি পেতে পারে।

গঙ্গা নদীর বেসিনে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বিহারসহ ভারতের উত্তর-মধ্য, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এবং নেপালের কিছু এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে। এ বর্ষণ আরও বেশ কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া নেটওয়ার্ক সূত্রে জানা যায়।

নদ-নদী প্রবাহের পরিস্থিতি
গতকাল সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে দেশের নদ-নদীসমূহের পানি প্রবাহের সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের অন্যতম প্রধান অববাহিকা গঙ্গা ছাড়া সব নদ-নদীর পানির সমতল কমতির দিকে রয়েছে। গঙ্গা নদীর পানি পাংখা, রাজশাহী ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গত তিন দিনে আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার যথাক্রমে ২৮৩, ২৯৮ ও ২২৯ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানির সমতল আগে হ্রাস পেলেও এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। পদ্মা গোয়ালন্দ, ভাগ্যক‚ল ও সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ১০৮, ১২৪ ও ৯৭ সে.মি. নিচে অবস্থান করছে।

উত্তর জনপদে তিস্তা, ধরলা, ঘাগট, করতোয়া নদ-নদীসমূহের পানি হ্রাসের দিকে রয়েছে। দেশের অন্যতম প্রধান অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদের পানির সমতল সবকটি পয়েন্টে হ্রাস পাচ্ছে।
আপার মেঘনা অববাহিকায় সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারি, ধলাই, সোমেশ্বরী, তিতাস নদ-নদীগুলোতে পানি হ্রাসের দিকে রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব বৃহত্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ি অববাহিকায় ফেনী, মুহুরী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদ-নদীর পানির সমতল কমতির দিকে। তবে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাসে জানা যায়, গঙ্গা নদী ছাড়া দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। আর, গঙ্গার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে।

আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ৯৩টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৭১টি পয়েন্টে পানি হ্রাস এবং ১৯টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পায়। অপরিবর্তিত থাকে ৩টি স্থানে। বর্তমানে কোন নদ-নদী বিপদসীমার ঊর্ধ্বে নেই।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানভাগে বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রদেশগুলোতে এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। এসব অঞ্চলে আগামী ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিপাত ছাড়া ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা নেই বলে ভারতের আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা যায়। গতকাল বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর অঞ্চলে তেমন বৃষ্টি হয়নি।

ইতোপূর্বে পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গত ২৪ জুলাই এক প্রতিবেদনে জানায়, আগস্ট মাসের শেষ ভাগে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি থাকবে। যদিও তা নির্ভর করছে বর্ষার মৌসুমী বায়ুর জোর তথা বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতির উপর। পাউবো উক্ত পূর্বাভাস প্রদান করেছিল, আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আবহাওয়া বিভাগ থেকে প্রাপ্ত পূর্বাভাসের ভিত্তিতে।

উত্তর-পূর্ব ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে গত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, উত্তররাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের ৩০ জেলা বন্যা কবলিত হয়।
‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টি নেই
ভাদ্র মাসের গোড়াতে বলতে গেলে ভরা মেঘ-বাদলের মৌসুমেও ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাত নেই। দেশজুড়ে বিরাজ করছে খরতপ্ত আবহাওয়া। গতকাল (বুধবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত দুয়েক জায়গায় হালকা ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছাড়া দেশের কোথাও তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি।

বরং আগের সপ্তাহের চেয়ে খরতাপ আরও বেড়ে গেছে। গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫ এবং সর্বনিম্ন ২৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহীতে পারদ উঠে ৩৬.৫ ডিগ্রিতে। এ অবস্থায় চৈত্র-বৈশাখের মতো ভ্যাপসা গরমে হাসফাস অবস্থা বিরাজ করছে দেশের অধিকাংশ স্থানে।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস, তবে রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা থাকতে পারে। এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কিছুটা সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।



 

Show all comments
  • Abdus Sobahan ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি বন্যা থেকে আমাদের রক্ষা করো। পানি অন্যদিকে প্রবাহিত কর।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ জামান হোসেন জন ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৮ এএম says : 0
    ভরাতের কারণে আমাদের পানি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। ওরা সুবিধাবাদি মন চাইলে সব সময় ছাড়ে নতুবা না।
    Total Reply(0) Reply
  • তাইজুল ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    মহান আল্লাহ তায়ালা সকলকে হেফাজত করুক- আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহিন আদনান ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
    বন্যা আসার আগেই সরকারকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমবে।
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    ওহ আল্লাহ বন্যা থেকে এই জাতিকে রক্ষা কর।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Hasnat ২২ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৩২ এএম says : 0
    The govt. must have to take immediate action plan to address the flood.
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Hasnat ২২ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৩২ এএম says : 0
    The govt. must have to take immediate action plan to address the flood.
    Total Reply(0) Reply
  • শফর আলী খান ২২ আগস্ট, ২০১৯, ৪:১৩ এএম says : 0
    সরকারের উচিৎ এখনি রাজশাহী বিভাগ এর জনসাধারণকে বন্যার কবল হতে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
    Total Reply(0) Reply
  • Sangita Mala ২২ আগস্ট, ২০১৯, ৪:১৭ এএম says : 0
    গত জুলাই মাসের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পূরণ না হতেই আাবার বন্যা আসছে? কৃষকদের বাঁচার উপায় তো নেই।।
    Total Reply(0) Reply
  • Miah Muhammad Adel ২২ আগস্ট, ২০১৯, ৯:২৭ এএম says : 0
    যাদের প্রতিবাদ করার সাহস থাকে না তাদের ভাগ্যে আর কি জুটবে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ