মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত গ্রীষ্মে মোদির মন্ত্রিসভার একজন মন্ত্রী এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ৮ ব্যক্তিকে মাল্য ভূষিত করেন। এ মহাবিশ্বে কাশ্মীর কখনোই স্বায়ত্তশাসন লাভ করে টিকে থাকতে পারবে না যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা না চায়। এ বছর মোদির পুন:নির্বাচন তার সমর্থকদের শক্তিশালী করেছে। মোদি তাদের ক্রোধকে দক্ষতার সাথে প্রণোদিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী খুব কমই সংখ্যালঘুদের হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি মুসলিম হত্যাকারীদের নিন্দা করেছেন, এ রকম ঘটনা আরো বিরল। কখনো একবারের জন্যও তিনি হিন্দু মৌলবাদীদের হাতে নিহত কোনো মুসলিমের নাম স্মরণ করেননি। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়। এ হচ্ছে গো রক্ষকদের মুসলিমদের কাছে ছোট না করা। রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবহার করে গোরক্ষকদের কাছে মুসলিমরা যাতে বাধ্য হয়ে থাকে সে জন্য গোরক্ষকদের উৎসাহিত করা। কাশ্মীরেও তিনি এটাই করেছেন।
মোদি রাজনীতির দীক্ষা নেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে। আর এসএস হচ্ছে একটি ডানপন্থী আধা সামরিক গ্রুপ যারা হিন্দু জাতীয়তাবাদের আধুনিক রাজনীতির উদ্গাতা। আরএসএস তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদেরকে সন্দেহভাজন ধর্মীয় দুর্বৃত্তদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। যারা শত শত বছর ধরে ভারতকে লুন্ঠন ও শক্তিহীন করেছে। যেমন মধ্যযুগীয় মুসলিম হানাদাররা। তাদের বলা হয়, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও তার নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস দলের কথা। মুসলিম জাতীয়তাবাদীদের কথা যারা পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে ও কাশ্মীরকে গ্রাস করতে চেয়েছে। মোদির তরুণ মনে এই মগজ ধোলাইয়ের প্রভাব এত শক্তিশালী ছিল যে তিনি আরএসএসকে তার পরিবার হিসেবে গণ্য করেন। নিজ স্ত্রীকে পরিত্যাগ করেন এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী স্বার্থের পতাকা বহন করে সারা ভারত ঘুরতে থাকেন।
কাশ্মীর দখল করে মোদি হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভোটারদের সন্তুষ্ট করেছেন। তিনি নিজেকে অনুসারীদের যেমন আখ্যা দিয়েছে সেই নতুন ভারতের পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কাশ্মীর সব সময়ই তার লক্ষ্যবস্তু ছিল। তার আরো ইচ্ছা হচ্ছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ। মুসলিমদের সংখ্যালঘু হিসেবে যে সামান্য সুবিধা দেয়া হয় (যেমন হজ ভর্তুকি বন্ধ) তা বিলুপ্ত করা। হিন্দুদের ধর্মান্তর আইন করে বন্ধ করা। আন্তধর্ম প্রেম ও বিবাহ বাতিল বিশেষ করে কনে হিন্দু ও বর মুসলিম হলে এবং সর্বশেষ ভারতকে আনুষ্ঠানিক ভাবে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার জন্য সংবিধান পুনর্লিখন।
কিন্তু বিশ্বের সর্বাধিক ভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত সমাজের দেশ ভারত কি সংখ্যাগরিষ্ঠের এই সাম্প্রতিক উর্ধগামিতার জোয়ার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে? ১৯৫১ সালে কাশ্মীরে নির্বাচিত আইন পরিষদের প্রথম উদ্বোধনী অধিবেশনে কাশীরের ভারতভুক্তির নেতৃত্বদাতা বিপুল জনপ্রিয় সমাজবাদী নেতা শেখ আবদুল্লাহ কাশ্মীরীদের সামনে আর কোনো পথ রাখেননি। তিনি বলেছিলেন, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা ও সমতার ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের অঙ্গীকার এ যুক্তি বাতিল করে যে ভারতে কাশ্মীরের মুসলমানদের নিরাপত্তা থাকবে না। আবদুল্লহ বলেছিলেন, ভারতের সংবিধান সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত ভাবে ধর্মীয় রাষ্ট্রের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে যা মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তন ছাড়া কিছু নয়। আবদুল্লাহ আপাত ধর্মীয় রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের নিন্দা করেন। তার মতে, দেশটি একটি সামন্ত রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৪৮ সালে কাশ্মীর দখলের জন্য যুদ্ধ করে। পাকিস্তান এমন এক দেশ যেখানে ধর্মীয় আবেদন মানুষকে স্পর্শকাতরতা ও ভুল পদক্ষেপের দিকে নিয়ে যায়। তবে তার পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান করা ভারতকেও স্মরণ করিয়ে দেয় যে কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা অনালোচনাযোগ্য। আবদুল্লাহ বলেছিলেন, কাশ্মীরীরা সেই নীতি কখনোই মেনে নেবে না যা কোনো ধর্ম বা সমাজ গ্রুপকে একজনের বিরুদ্ধে অন্যকে লেলিয়ে দেয়। সেদিন তার এ বক্তব্যের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান। আজ তা ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
কাশ্মীরী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এক সময় ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বলত। এখন দেশপ্রেমিকদের তা নাকচ করার সময় এসেছে। এখন ভারত জোরালো ভাবে কাশ্মীরকে তারা বহুবাহুর ভাঁজের মধ্যে ফেলার যুক্তি দিতে পারে। ভারতের পূর্ণ নাগরিকত্বের সাথে কাশ্মীরীদের ধর্ম অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু এক সময় আবদুল্লাহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে দাবি তুলতেন এখন ভারতের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবির মধ্যে সেই একই সারবত্তা ও ওজন রয়েছে। মোদির পূর্বসূরিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য কাশ্মীরী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রাজি করাতে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয়তাবাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন, তার মত ধর্মীয় জাতীয়তাবাদীর কাছে তা সহজলভ্য নয়। ধর্মনিরপেক্ষ ভারত কাশ্মীরের কাছে চিরকালের মত তার যুক্তি হারিয়েছে। বর্তমানে যে শান্তি কাশ্মীরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে গভীর ক্রোধ যে কোনো সময় যার উদ্গীরণ হতে পারে। কাশ্মীর দখলকে মোদি ভারতের একীভূতকরণ বলে যুক্তি দিতে পারেন যদি তার বিরোধিতা না হয়। অন্যদিকে এটাই হতে পারে ভারতের ঐক্য অবসানের শুরু। (শেষ)
*কপিল কমিরেড্ডি ‘মেলভোলেন্ট রিপাবলিকঃ এ শর্ট হিস্টরি অব নিউ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থের লেখক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।