পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। অর্থনীতিতে দ্রুত উন্নতি ঘটছে। নির্দিষ্ট কিছু বড় বড় মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। অর্থনৈতিক এই বিশাল কর্মযজ্ঞ যেমন ইতিবাচক তেমনি এর নেতিবাচক দিকও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এর কারণ যে হারে অর্থনীতির উন্নতি ঘটছে, সে হারে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ড কর্মসংস্থানে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ স্বাভাবিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি হওয়ার কথা। কর্মসংস্থানের এই সুযোগ যে বৃদ্ধি হচ্ছে না বরং দিন দিন কমছে তা সরকারের কর্মসংস্থান, উৎপাদনশীলতা এবং খাতওয়ারি বিনিয়োগ বিষয়ক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে গেছে। যেখানে ২০০৫-০৬ এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরের মধ্যে কর্মসংস্থানের সূচক ০.৫৫ ছিল, তা ২০১০-১১ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ০.২৫। অথচ এ সময়ে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অত্যন্ত ভাল অবস্থার মধ্যে থেকে গড়ে ৬.৬ হারে এগিয়েছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কৃষি, নির্মাণশিল্প এবং বিভিন্ন চাকরির খাতে কর্মসংস্থানের সূচক কমেছে।
সাধারণত দেশে অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ গতিশীল বা বৃদ্ধি হতে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং বৃদ্ধি পায়। কেউ একটি দোকান খুললেও তাতে এক-দুইজন কর্মচারি লাগে। আর সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্প, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক খাত বৃদ্ধি পেলে তাতে ব্যাপকসংখ্যক লোকজনের কর্মসংস্থান হওয়া সাধারণ বিষয়। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড দুর্দান্তভাবে এগিয়ে চললেও কর্মসংস্থানের হার বেশি হওয়ার চেয়ে কমে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা এর অন্যতম কারণ হিসেবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অটোমেশন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বা যন্ত্রের মাধ্যমে কর্মসম্পাদনকে চিহ্নিত করেছেন। দেশের শিল্পখাতে গত আট বছরে ব্যাপক উন্নতি হলেও কর্মসংস্থান ১২ লাখ থেকে বেড়ে ১৩ লাখ হয়েছে। মাত্র এক লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ এই উন্নতির ফলে কর্মসংস্থানের হার আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। এর কারণ কর্মসম্পাদনে এখন মানুষের চেয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি। গার্মেন্টস শিল্পের কথা যদি ধরা হয় তবে দেখা যায়, এ খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অদক্ষ জনবল নিয়োগ পেয়ে থাকে। এই গার্মেন্ট খাতেও এখন ধীরে ধীরে অটোমেশন বা প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। সেলাই, কাটিং, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, প্যাকেজিং, লোডিং থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ অটোমেটিক্যালি হয়ে যাচ্ছে। কেবল মেশিনে তুলে দিলেই তা সহজে এবং দ্রুত সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে এসব কাজে কর্মীর প্রয়োজন পড়ছে না। শুধু যারা প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং মেশিন ব্যবহার করতে পারে তারাই টিকে থাকছে। বাকিরা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ায় বেকার হয়ে পড়ছে। কৃষিখাতেও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় কর্মসংস্থানের হার কমে যাচ্ছে। জমি চাষ, ফসল বোনা, পরিচর্যা থেকে শুরু করে ফসল তোলা, মাড়াই এবং প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, এ খাতের একাধিক কাজে যে সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ত তা প্রযুক্তির কারণে এক-দুইজনে এসে দাঁড়িয়েছে। যন্ত্র চালানোতে দক্ষ একজনই তা করে ফেলছে। ফলে কৃষিখাতেও দিন দিন অনেক শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা কমে আসছে। নির্মাণ শিল্প বা বিভিন্ন প্রকল্পে কায়িক পরিশ্রমের শ্রমিকের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণও প্রযুক্তির ব্যবহার। আগে যেখানে ইট-বালু বহনের এবং খোদাই করার জন্য অসংখ্য শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ত, এখন এসব কাজ যন্ত্রের মাধ্যমেই করা হচ্ছে। শুধু যন্ত্র চালানোতে দক্ষ লোকজনই কর্মে নিয়োজিত হচ্ছে। আমাদের দেশে এই প্রযুক্তি নির্ভর শ্রমিকের সংখ্যা অত্যন্ত কম। প্রথাগত কায়িক শ্রমিকের গুরুত্বও দিন দিন কমে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব অদক্ষ লোকজন কর্মহীন হয়ে পড়ছে। তাদের জায়গা দখল করছে বিদেশি দক্ষ শ্রমিক। দেশের বিভিন্ন বড় বড় মেগা প্রজেক্টের দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানে অসংখ্য বিদেশি শ্রমিক কাজ করছে। এ তুলনায় দেশিয় শ্রমিক নেই বললেই চলে। অন্যদিকে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকাল ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে দেশে শুধু স্নাতক বেকারের সংখ্যাই ৪৭ শতাংশ। অথচ কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্তে¡ও অদক্ষতার কারণে তারা বেকারত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটিও দায়ী। কারণ দেশের কোন খাতে কি সুযোগ রয়েছে তার সাথে তাল না মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা চালানো হচ্ছে। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, কর্মক্ষেত্রে সুযোগ পাওয়ার জন্য নয়, শুধু শিক্ষিত হওয়ার জন্যই শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এটাই শিক্ষিত বেকার বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানহীনতার নেপথ্য কারণ হয়ে রয়েছে। এছাড়া কায়িক শ্রমিকের অটোমেশন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন চলা সত্তে¡ও কর্মসংস্থানের হার নিম্নমুখী।
দেশের যে বিপুল অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং উন্নয়ন চলছে তা টেকসই করতে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের বিকল্প নেই। সেটা কৃষি, শিল্প কিংবা নির্মাণ-যে খাতই হোক, টিকিয়ে রাখতে স্থায়ীভাবে প্রশিক্ষিত লোকজন নিয়োগ দিতে হবে। সবক্ষেত্রেই নিত্য-নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হবে এবং কাজ করা হবে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এসব প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে দেশের শিক্ষিত বেকার এবং কায়িক শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত করে তুলতে না পারলে দেশের কর্মসংস্থান করা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। দেখা যাবে, প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়ে যাবে ঠিকই তবে বিপুল সংখ্যক কর্মপোযোগী মানুষ বেকার হয়ে পেছনে পড়ে থাকবে। তখন তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা এবং বিশাল সমস্যায় পরিণত হবে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে এখন থেকেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মী ও শ্রমিক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নতিতে দেশের মানুষকেই কাজে লাগাতে হবে। বিদেশ থেকে ধার করে শ্রমিক-কর্মচারী এনে উন্নয়ন টেকসই করা যাবে না। এতে লাভের গুড় পিঁপড়ার পেটেই যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।