Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নারীর মুক্তি কোন পথে?

মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

এক

আজ যে সময় আমরা অতিবাহিত করছি তা সাংস্কৃতকি ও আদর্শিক দিক থেকে খুব একটা ভালো নয়। নীতি আর নৈতিকতার বাণী নিরবে নির্ভূতে কাঁদছে। মানুষের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সব জায়গা একই দৃশ্য- তিন দিনের কাজ তিন মিনিটে করতে চায়। কোন কিছু বুঝার আগেই ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায়। আচরণে বুঝা যায় না তিনি ভালো না খারাপ। চিত্ত বিত্ত থাকার পরও মনে শান্তি নেই। বিশেষত: মানব সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ নারী সমাজের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে চরম দুর্যোগ।
মহানসৃষ্টি কর্তা নারী আর পুরুষ দুটি শ্রেণিতে সৃষ্টি করে তাদের কর্মপদ্ধতিও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সেই কর্মপদ্ধতি সঠিকভাবে পালন করতে পারছি না। আমার মনে হচ্ছে আমরা কোথায় যেন একটা ভুল করে ফেলেছি। আর ভুল পথে হাটছি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৮ সালে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ সংখ্যা ছিল ৪৩৯ জন। ২০০৯ তে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৩৯ জন। ২০১০ সালে আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৭০০ জন, ২০১১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০০তে। ২০১২ সালে কিছুটা কমে হয় ৬৬৫ জন। কিন্তু ২০১৩ সালে এ সংখ্যার ব্যাপকতা লক্ষ্য করা গেছে। ওই বছরে ৮৮১ জন, ২০১৪ সালে ৮৪০ জন, ২০১৫ সালে ১ হাজার ৭ জন, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৬ জন এবং ২০১৭ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৯৩ জনে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৭৫৫ জনকে ও হত্যা করা হয়েছে ৩ হাজার ৯০০ জনকে। উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেছে ১২৯ জন, শ্লীলতাহানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার জন নারীকে। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৭১ জন।
২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক হাজার ৩৪৫ জন নারী ও শিশু। যার মধ্যে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩১০ জন, হত্যাকান্ডের শিকার ১৮০ জন। শ্লীলতাহানির কারণে আত্মহত্যা করেছে ১০৭ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১৬ জনকে। অপহরণ ও যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হন ৯২ জন।
উপরোক্ত তথ্যগুলো পড়ে আমাদের গা শিউরে উঠার তথা। এগুলো বাড়ছে কেন? আইন আছে। প্রয়োগও হচ্ছে। তবুও থামছে না কেন? ঘটনাগুলো ঘটেছে একটি মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট দেশে। এ সমস্ত ঘটনা বন্ধে যা করণীয় তা করতে আমরা চেষ্টা করছি কি? চেষ্টা করলেও তা সঠিক উপায়ে হচ্ছে কি?
“জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নারী অধিকার কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাহফুজা খানম একটি সংবাদ মাধ্যকে বলেন, আগের চেয়ে নারী নির্যাতনের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। দেশের নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছেন, তা যেমন সত্য; তেমনি নির্যাতন পিছু ছাড়ছে না, তা-ও সত্য। আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, ডিজিটাল সংস্কৃতি, আইনের কঠোর প্রয়োগ না হওয়া, ধনতান্ত্রিক সমাজের অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে নির্যাতন বাড়ছে।”
আমি তার সাথে একমত। তবে বিভিন্ন কারণটি ব্যাখ্যা করেননি। সব কারণের আগে যদি ধর্মীয় কারণটার গুরুত্ব দেয়া হত তাহলে আমি হলফ করে বলতি পারি নারী নির্যাতন কমবে ছাড়া বাড়তো না।
নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া হোক এটা আমাদের দাবী। আজকে নির্যাতনের কারণগুলো নিয়ে যদি গবেষণা করা হয় তা হলে দেখা যাবে, নারী-পুরুষের ধর্মীয় আদর্শকে পিছনে পেলে পশ্চিমাদের পচা বাসি আদর্শকে আকঁড়িয়ে ধরার কারণ আজ এ সব হচ্ছে। যদিও তথাকতিত নারীবাদীরা এটাকে মানতে নারাজ।
হাট বাজারসহ সর্বত্র নারীদের উদ্ভট চলাফেরা। কথাবার্তা, পোষাক পরিচ্ছেদ, আচার আচরণে রুচীশিলতা অনুপস্থিত। বোরকা পরিধানের মাধ্যমে ইসলামের নির্দেশ পর্দা রক্ষা করবে। কিন্তু বিধি বাম। বোরকা টিকই পড়েছে। কিন্তু বোরকার মধ্যে আসল বোরকার কোন অস্থিত্ব খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বরং টাইট ও মশারির জাল মার্কা বোরকা অশ্লিলতাকে হার মানিয়েছে। এটা কেন করা হচ্ছে? আমার বুঝে আসছে না। চরিত্রে চরম অধ:পতন হওয়ার কারণে এসব হচ্ছে। এ ধরণের বোরকা পর পুরুষের মনোরঞ্জ যোগাচ্ছে। এ সমস্ত বিষয়টা কে কাকে বলবে! কে নিবে এ সমস্ত নোংরামী পোষাক বন্ধের দায়িত্ব? যৌন আবেদনময়ী পোষাক পরিহার করে রুচিশীল পোষাক ব্যবহার করতে আলেম সমাজরা বিষয়টি নজরে আনার চেষ্টা করলেও তা গ্রাহ্য করা হচ্ছে না। দুর্ভাগ্য আমাদের। যার কারণে অশ্লিলতা বেহায়াপনা বন্ধ হচ্ছে না। নারী নির্যাতন দিন দিন বেড়ে মহামারীর রূপ ধারণ করেছে। মেয়েরা মা-বাবাকে ধোকা দিয়ে মোবাইলে অপব্যবহার করে ধ্বংসের পথে পা বাড়াচ্ছে। এর ব্যাখ্যা এখন আর না-ই করলাম।
এ জন্য কি নারীরা দায়ি? না, পুরুষরা সর্বাগ্রে এ জন্য দায়ি। এ পোষাকের কোম্পানী কারা চালায়? এ ধরণের যৌন আবেদনময়ী পোষাক ও বোরকা কিনে কারা দেয়? ঐ পোষাকধারী নারীর আত্মীয় বা অভিভাবক পুরুষ কি কোন দিন সততর্ক কিংবা বাধা দিয়েছেন? দিলে কেন শুনছে না? আমরা বাধা দেই না! যার ফলে আজ আপনার আমার সবার সামনে নারী নির্যাতনের মর্মান্তিক সংবাদ প্রতিদিন ভেসে আসছে। আইন দিয়ে শুধু হবে না। সিগারেটের গায়ে-‘ ধুমপানে মৃত্যু হয়, ক্যান্সার হয়, স্বস্থ্যের ক্ষতি করে’ ইত্যাদি লেখা থাকে। ধুমপান কি বন্ধ হয়েছে? না আগের চেয়ে আরো বেড়েছে? অবশ্যই আগের ছেয়ে ধুমপান বেড়েছে। চোর শুনেনা ধর্মের কাহিনী। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করবেন-
এক শ্রেণির নারীবাদীরা নারীদের মন ভুলানো শ্লোগান দিয়ে প্রভাবিত করে ঘর থেকে বের করে রাণীকে দাসীর মার্যাদার আসনে বসাচ্ছে। তাকে অফিসে কেরাণীগীরি, অপরিচিত পুরুষের প্রাইভেট সেক্রেটারীর পদ দান করা হচ্ছে। নারীকে ব্যবসা চমকিত করার জন্য ‘সেলস গার্ল’ এবং ‘মডেল গার্ল’ এর কাজ দেয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারীর মুক্তি

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ