Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাসের যাত্রাবিরতিতে গৃহবধূকে গণধর্ষণ

বিভিন্ন স্থানে স্কুলছাত্রীসহ শিকার ২

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

হোটেলে বাসের যাত্রা বিরতিতে গৃহবধূকে (১৮) ছয়জন মিলে ধর্ষণ করেছে। বাড়ি পৌঁছার আগেই এমন ঘটনার শিকার হওয়ায় ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে ওই গৃহবধূর। গতকাল শনিবার ভোররাতে নেত্রকোনার চল্লিশা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ধর্ষণের ঘটনায় আটকের ১৪ ঘন্টা পর ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে ধর্ষিতার ভাইয়ের কলার টেনে এবং মুঠোফোন হাতিয়ে নিয়ে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কোটালীপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রী।

নেত্রকোনা : হোটেলে ঈদের বাসের যাত্রাবিরতিতে গৃহবধূকে (১৮) ছয়জন মিলে ধর্ষণ করেছে। গতকাল শনিবার ভোররাতে নেত্রকোনার চল্লিশা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, শনিবার ভোররাতে ঢাকা থেকে স্বামীর সঙ্গে নিজ বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় যাচ্ছিলেন ওই গৃহবধূ। গৃহবধূর স্বামী ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কমর্রত। ঈদের ছুটিতে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। নেত্রকোনার চল্লিশা এলাকার সারিন্দা হোটেলে যাত্রা বিরতিতে থামে তাদের বাস। এ সময় হোটেলের বাথরুমে যান গৃহবধূ। তখন কয়েকজন যুবক কৌশলে গৃহবধূর স্বামীকে সারিন্দা হোটেলে আটকে রাখে। পাশাপাশি আরও কয়েকজন যুবক গৃহবধূর বাথরুমের সামনে অবস্থান নেয়।

কিছুক্ষণ পর গৃহবধূ বাথরুম থেকে বের হলে সারিন্দা হোটেলের ম্যানেজার রাজেন্দ্রপুর গ্রামের ফিরোজ আলী মেম্বারের ছেলে এনামুল হক সম্রাটটের (২৭) নেতৃত্বে গৃহবধূকে তুলে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যায় পাঁচ যুবক। সেখানে গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে ছয়জন।

গৃহবধূকে গণধর্ষণকারী ছয় ব্যক্তি হলো, ফিরোজ আলী মেম্বারের ছেলে এনামুল হক সম্রাট, একই এলাকার কালা মিয়ার ছেলে জিহান (২৭), শামছুল হকের ছেলে রাসেল (৩০), মজলিস উদ্দিনের ছেলে বাশার (২৭), জামাল উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম পাভেল (২৮) ও শামছুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম (৩০)।

খবর পেয়ে এরই মধ্যে শামছুল ইসলামের ছেলে সাইদুল ইসলাম, জামাল উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম পাভেল, মজলিস উদ্দিনের ছেলে বাশার ও ফিরোজ আলী মেম্বারের ছেলে এনামুল হক সম্রাটকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ গৃহবধূকে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে তারা।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে গৃহবধূকে গণধর্ষণে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ গৃহবধূকে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে তারা। গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠনো হয়েছে।

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুল ছাত্রী (৯) ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় গত শুক্রবার স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে কোটালীপাড়া থানায় ধর্ষণের একটি অভিযোগ করেছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে লম্পট ধর্ষক ইজাবুল মোল্লা (৪২) কে গ্রেফতার করেছে। সে উপজেলার জটিয়ারবাড়ী গ্রামের ইউসুফ মোল্লার ছেলে।

জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে ঐ স্কুল ছাত্রীকে পাশ^বর্তী ফরিদ আহম্মেদ সিকদারের ঘেরের উপর পরিত্যাক্ত একটি ঘরের ভিতর ডেকে নিয়ে জোরপ‚র্বক ধর্ষণ করে। এ সময় স্কুল ছাত্রী চিৎকার করলে ধর্ষক পালিয়ে যায়। ঘটনাটি একই গ্রামের হোসেন লস্করের ছেলে জাহাঙ্গির লস্কর (৩০) ও হানিফ খন্দকারের ছেলে জাহিদ খন্দকার (৩২) দেখে নিরবতা পালন করে ধর্ষকের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ধর্ষক টাকা দিতে গরিমসি করায় বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হওয়ার পর ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করেন। কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. লুৎফর রহমান জানান, ওই শিশু ছাত্রীর বাবা অভিযোগ দায়ের করেছেন শিশুটিকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শষ্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে ধর্ষক ইজাবুল মোল্লাকে গ্রেফতার করেছে বাকী আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা হাজতে ধর্ষণের ঘটনায় আটকের ১৪ ঘন্টা পর আজিম মিয়া ওরফে শিমুল (২৮) নামে এক ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই ১৪ ঘন্টা থানা হাজতে আটকে রেখে অভিযুক্তের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থানা এস আই বিজয় দেবনাথ ও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোশারফ হোসেনে আলোচনা চালিয়েছেন বিষয়টি মিমাংসার জন্য।

জানা গেছে, উপজেলা সদরের পাহাড়পুর গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে শিমুলের সঙ্গে একই গ্রামের কলেজ পড়–য়া এক শিক্ষার্থীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ের প্রলোভনে শিমুল তাকে মাঝে মধ্যেই ধর্ষণ করতেন। কিন্তু এক সপ্তাহে আগে ধর্ষিতার অজান্তে শিমুল অন্যত্র বিয়ের চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে কৌশলে শিমুল ধর্ষিতাদের ঘরে ঢুকেন। সেখানে তিনি তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এ সময় কলেজ ছাত্রীর আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ শুক্রবার ভোরে দিকে শিমুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে এ ঘটনায় ধর্ষিতার পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে পরিদর্শক মোশারফ হোসেন ও এস আই বিজয় দেবনাথ নানাভাবে তালবাহানা করেন।

বিষয়টি নিয়ে ঐদিন সন্ধ্যায় ধর্ষিতা, তার ভাই ও বাবা মির্জাপুর প্রেসক্লাবে এসে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান। ধর্ষিতা মেয়েটি তাঁকে বিয়ের মিথ্যা প্রলোভনে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে বারবার কেঁদে ফেলেন। পুলিশের কাছে গিয়েও তাঁদের লাভ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।

গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর তারা পুনরায় থানায় যান। সেখানে পুলিশের কাছে ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুনরায় মামলা করতে মৌখিকভাবে অনুরোধ করেন। বাবা ও ভাইসহ থানার ওয়ারলেস অপারেটর মাহামুদুল হাসানের কাছে গিয়ে মামলা লেখাতে চান। তখন পরিদর্শক মোশারফ হোসেন ধর্ষিতার ভাইয়ের শার্টের কলার ধরে টেনে তার কক্ষে নিয়ে মুঠোফোন হাতিয়ে নিয়ে বের করে দেন।

অপরদিকে রাত সাড়ে আটটার দিকে ওসি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদ উপলক্ষে দায়িত্বপালন শেষে থানায় আসেন। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলোচনাকালে ধর্ষণের ঘটনায় এক অভিযুক্ত আটকের বিষয়টি তিনি জানতে পেরে হতবাক হন। পুরো ঘটনা জানার পর তার নির্দেশে থানায় মামলা হয়।

পরিদর্শক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বিষয়টি তিনি পরে জেনেছেন। ওসি জানার পর থানায় মামলা হয়েছে। মামলার বাদী হন ধর্ষিতা নিজেই। ঘটনায় অভিযুক্ত শিমুলকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার টাঙ্গাইলের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে ও ধর্ষিতাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।



 

Show all comments
  • Mahadev Roy ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১:৪৯ এএম says : 0
    বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই জবাবদিহি নেই তাই এত অপকর্ম
    Total Reply(0) Reply
  • Alok Bikash Chakma ১১ আগস্ট, ২০১৯, ২:২৩ এএম says : 0
    এ নরপশুদের ধরে এনে এক মাসের মধ্যে ফাঁসি দিলে তারপর বুঝবে।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবুল ১১ আগস্ট, ২০১৯, ২:২৬ এএম says : 0
    কি অবস্থা দেশের, কি হচ্ছে আমাদের দেশে??
    Total Reply(0) Reply
  • Nasir Uddin ১১ আগস্ট, ২০১৯, ২:২৮ এএম says : 0
    আদালতের কাছে একটাই দাবি এই জঘন্য কাজের জন্য ফাঁসি একটাই দাবি ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই
    Total Reply(0) Reply
  • Eery Nir ১১ আগস্ট, ২০১৯, ২:২৯ এএম says : 0
    দিন দিন পশুর সংখ্যা বেড়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • Bely Rahman ১১ আগস্ট, ২০১৯, ২:২৯ এএম says : 0
    আমাদের জীবন এখন কঠিন সংকটের মুখোমুখি। এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার কোন পথ আছে বলে মনে হয় না। একমাত্র আল্লাহই পারেন আমাদের রক্ষা করতে।
    Total Reply(0) Reply
  • Engr.Ashikur rahman ১১ আগস্ট, ২০১৯, ২:৩০ এএম says : 0
    Bangladasher bortoman j obosta tati kore khub tara tari Allah r gojob asbi.jar karone valo manus gulo o khotigrosto hobi.Allah ader hedayet dan korun.
    Total Reply(0) Reply
  • sk Rubayet ১১ আগস্ট, ২০১৯, ৯:০১ এএম says : 0
    এদের .... কেটে দেওয়া হক
    Total Reply(0) Reply
  • আবু হায়াত ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১১:৫২ এএম says : 0
    সঠিক পথে সরকার গঠন হলে। এমন ঘটনা অনেক কমে যেত। বাংলাদেশে এক দল একটানা দুইবার ক্ষমতায় যাও মানে অপরাধীদের জন্যে ১০ বছরের ছাড়পত্র মেলা। ১০০% গ্যারান্টি এই সরকারের পক্ষে অপরাধ দমন সম্ভব নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • দেব কুমার অধিকারী ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫২ পিএম says : 0
    ধর্ষক দের জন্য নতুন করে আইন করা দরকার, তাদের জন্য একটাই মাত্র শাস্তি তাহলো গণসমূক্ষে মৃত্যুদণ্ড।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ