Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডিএনএ নমুনা অন্যের হাতে দিলে যে সমস্যা হতে পারে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৯, ৫:১৫ পিএম

বহু মানুষ ইদানীংকালে নিজের ইচ্ছায় তাদের ডিএনএ দিয়ে দিচ্ছে। নিজের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে জানা এবং নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানার জন্য তারা এ কাজ করছেন। নিজের সবচেয়ে গোপনীয় তথ্য কেন আমরা অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছি? এর বিনিময়ে আমরা কী পাচ্ছি? যদি আপনি আপনার তথ্য ফেরত চান, তাহলে কী হবে?

সাম্প্রতিক বছরে ডিএনএ টেস্ট করার প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালের শুরু পর্যন্ত চারটি ডাটাবেস প্রতিষ্ঠানে দুই কোটি ষাট লাখ মানুষ তাদের ডিএনএ অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে - অ্যানসেসট্রি, ২৩এন্ডমি, মাইহেরিটেজ এবং জিন বাই জিন।

২০১৬ সালে টুয়েন্টি থ্রি অ্যান্ড মি নামের প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাছে সংরক্ষিত ডিএনএ তথ্য ১৩টি ঔষধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি ডিএনএন টেস্ট-এর জন্য বেশ পরিচিত। জেনেটিক নামের একটি ঔষধ কোম্পানি ১০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে পারকিনসন্স রোগে ভুগছে এমন ব্যক্তিদের ডিএনএ তথ্য নিয়েছে। অন্যদিকে এই তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করার জন্য গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ৩০০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

‘টুয়েন্টি থ্রি অ্যান্ড মি’ বিবিসিকে জানিয়েছে, তাদের গ্রাহকদের ৮০ শতাংশ ডিএনএ দিয়েছে গবেষণা কাজে ব্যবহারের জন্য। তারা চাইলে যে কোন সময় সেটি প্রত্যাহার করতে পারে।

অ্যালবার্টা ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্য আইন ইন্সটিটিউটের পরিচালক টিম কলফিল্ড বলেন, মানুষ জেনে-বুঝে তার ডিএনএ দিচ্ছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, ডিএনএ দেবার আগে তারা একটি লম্বা প্রশ্নমালা পূরণ করে। তখন মানুষ বুঝেশুনে এটি করছে কিনা সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

‘ব্যক্তিগত বিষয়গুলোর দিকে মানুষের নজর দেয়া উচিত। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান অনেক সময় ঔষধ কোম্পানিগুলোর সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করে’, বিবিসিকে বলেন কলফিল্ড।

ডিএনএ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্রাহক যে কোন সময় চাইলেই তাদের সম্মতি প্রত্যাহার করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা বেশ জটিল। ‘এই তথ্যগুলো যখন একত্রিত করা হয়, তখন এগুলো ফিরে পাওয়া বেশ জটিল। যদি প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে কী হবে?’ প্রশ্ন তোলেন মি: কলফিল্ড।

গত মে মাসে ভাইস নিউজ-এর সাংবাদিক সামন্থা কোল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই তার যোনিপথ সংক্রান্ত পরীক্ষার কিছু কাগজপত্র জব্দ করেছে। ডিএনএ ফার্ম ইউবায়োমি’র কাছে যোনিপথ সংক্রান্ত নমুনা দিয়েছিলেন মিস কোল। এফবিআই যখন এই প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান পরিচালনা করে তখন এসব তথ্য তারা নিয়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় মার্কিন পুলিশ ডিএনএ তথ্য সংগ্রহকারী ফার্মগুলোর তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করেছে।

গত এপ্রিল মাসে মার্কিন পুলিশ এমন এক ব্যক্তির ডিএনএ তথ্য আপলোড করেছে যিনি ক্যালিফোর্নিয়াতে একাধিক ধর্ষণ, হত্যা এবং চুরি-ডাকাতির সাথে সম্পৃক্ত। পুলিশ যেখানে এই ডিএনএ তথ্য আপলোড করেছে সেটি একটি ফ্রি অনলাইন তথ্যভাণ্ডার। এখানে যে কোন ব্যক্তি তার জেনেটিক কোড আপলোড করে তার স্বজনদের খুঁজে নিতে পারে।

লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজ-এর ইনফরমেশন সিকিউরিটি রিসার্চ গ্রুপের প্রধান এমিলিয়ানো ক্রিসটোফারো বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষের ডিএনএ তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলছে, তারা কখনো তথ্য নিরাপদ রাখার নীতি মেনে চলে না। গ্রাহকদের স্বার্থের বিষয়টি তাদের মনে থাকে না।

ইউসিএল ইন্সটিটিউট-এর অধ্যাপক জয়েস হারপার বলেন, তিনি দুটো ডিএনএ তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করেছেন তার বংশতালিকা খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে তথ্য নিরাপদ রাখার নীতি ব্যবহার করা হয় কিনা সেটি নিয়ে তার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। টিম কলফিল্ড মনে করেন, স্বাস্থ্য সম্পর্কে তাকে যে তথ্য দেয়া হয়েছে সেটি খুব একটি সহায়ক নয়। সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ