বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হজই একমাত্র ইবাদত, যার নিয়ত করার সময়ই আল্লাহ তায়ালার নিকট সহজতা ও কবুলের দোয়া করা হয়। অন্যান্য ইবাদত থেকে হজের আমলটি যে কঠিন তা এ থেকেই স্পষ্ট। হজের সঠিক মাসআলার জ্ঞান যেমন জরুরি, তেমনি তা আদায়ের কৌশল এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে করণীয় বিষয়গুলোর প্রতি পূর্ণ খেয়াল রাখাও জরুরি।
হজে যেসব ভুল হতে দেখা যায় তা সাধারণত উদাসীনতার কারণেই হয়ে থাকে। তাই নিম্নে সচরাচর ঘটে থাকে এমন কিছু ভুল উল্লেখ করা হচ্ছে, যেন হাজীগণ এসব ভুলভ্রান্তি থেকে বেঁচে সুষ্ঠুরূপে হজ আদায়ে সক্ষম হন। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন।
ইহরামের দুই রাকাত নামাজের জন্য ইহরাম বিলম্বিত করা : ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ম আছে। তাই অনেককে দেখা যায়, এ দুই রাকাত নামাজের সুযোগ না পাওয়ার কারণে ইহরাম বিলম্বিত করতে থাকে। এমনকি এ নামাজ পড়তে না পারার কারণে কেউ কেউ ইহরাম ছাড়াই মীকাতের ভেতরে পর্যন্ত চলে যায় অথচ ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা জায়েজ নয়।
তারা যেহেতু ইহরামের আগে দুই রাকাত নামাজ আদায়কে জরুরি মনে করে তাই তারা এমনটি করে থাকে। অথচ ইহরামের আগে নামাজ পড়া সকল মাজহাবেই মুস্তাহাব; জরুরি কিছু নয়। পক্ষান্তরে ইহরাম ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা নাজায়েজ। সুতরাং ইহরামের আগে নামাজের সুযোগ পেলে তো তা আদায় করা চাই, কিন্তু সুযোগ না পেলে সে কারণে ইহরাম বাঁধাকে বিলম্ব করবে না। -সহিহ মুসলিম ১/৩৭৬।
ইহরাম বাঁধার নিয়ম সংক্রান্ত ভ্রান্তিসমূহ : অনেকে মনে করে থাকে যে, ইহরামের কাপড় পরে নামাজ পড়ার পর নিয়ত করলেই ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যায়। এ ধারণা ভুল। এগুলো দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না। নিয়ত আরবীতে করা হোক বা বাংলাতে, সশব্দে করা হোক বা মনে মনে এর দ্বারা ইহরাম সম্পন্ন হয় না; বরং নিয়তের পর তালবিয়া পড়লে ইহরাম পূর্ণ হয়। অতএব বোঝা গেল, ইহরাম সম্পন্ন হয় দুই বস’র সমন্বয়ে : ১. হজ বা উমরার নিয়ত করা ও ২. তালবিয়া পড়া। -জামে তিরমিযী ১/১০২।
মক্কাগামীদের জন্য জিদ্দায় ইহরাম বাঁধা : কেউ কেউ আগে থেকেই ইহরাম বাঁধা ঝামেলা মনে করে এবং ভাবে যে, ইহরাম বেঁধে নিলেই তো ইহরামের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়ে যাবে। বিমান যেহেতু জিদ্দায় অবতরণ করবে, তাই জিদ্দায় ইহরাম বাঁধার ইচ্ছায় ইহরামকে বিলম্বিত করে। অথচ মীকাতের বাইরের হাজীদের জন্য ইহরাম ব্যতীত মীকাত অতিক্রম করা জায়েজ নেই। উপমহাদেশ থেকে গমনকারী হাজীদের জন্য মীকাত হলো কারনুল-মানাজিল ও যাতু ইরক যা অতিক্রম করেই জিদ্দায় যেতে হয়।
যদি কেউ বিনা ইহরামে মীকাত অতিক্রম করে তবে তার জন্য পুনরায় মীকাতে ফিরে এসে ইহরাম বেঁধে যাওয়া জরুরি। যদি তা না করে তবে দম ওয়াজিব হবে। যেহেতু বিমানে থাকা অবস্থায় মীকাতের জায়গা নির্ধারণ করা কঠিন বা ওই সময় ঘুমিয়ে পড়া, অন্যমনস্ক থাকা ইত্যাদি হতে পারে। তাই বিমানে চড়ার আগে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরাম বেঁধে নেয়ার কথা বলা হয়। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হাদিস : ১৫৭০২।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।