Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষতিগ্রস্ত আমন আবাদ হতাশা বাড়ছে কৃষকের

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারতের ঢল ও ভারী বর্ষণে উত্তর-মধ্যাঞ্চলে বন্যা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে কম বৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে সারা দেশে আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপযুক্ত দাম না পাওয়া ও পচনের পর্যাপ্ত পানির অভাবে তুলনামূলক কম হয়েছে পাট আবাদ। বোরো ধানের দাম না পেয়ে দেশব্যাপী হৈচৈ করেও কোন লাভ হয়নি। বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার অভাবে কৃষক প্রায় প্রতিটি মৌসুমে কোন না কোনভাবে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।

কর্মবীর কৃষক রাজনীতি ও অর্থনীতির ঘোরপ্যাচ বোঝেন না। কৃষকের কোন পেনশন নেই। নেই অবসর কিংবা ছুটিছাটা। দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন কৃষাণ-কিষাণীরা। তবুও কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা নেই। এসব কারণে গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষকের মধ্যে চাষাবাদে হতাশা বাসা বাঁধছে। এসব কথা কৃষি বিশেষজ্ঞ, মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকের।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ডক্টর মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, কৃষিপণ্য উৎপাদনে রেকর্ড গড়লেও বাংলার কৃষক বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত। বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক ।

কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খানের কথা, বাজার ব্যবস্থাপনার প্রধান শর্ত হচ্ছে, দেশে মাল্টিপারপাস হিমাগার গড়ে তোলা। এটি আছে হাতেগোনা কয়েকটি। দেশে আছে কৃষক সমবায় সমিতি পরিচালিত ২শ’ ৩৯টি শস্য গোডাউন। যা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। ‘পিক সিজনে’ বীজ এবং ভোজ্য শস্য সংরক্ষণ এবং ‘লিন পিরিয়ডে’ ধানসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় কিংবা তদারকিতে ক্রয় করে বাজারে বিক্রি করলে ভোক্তা ও উৎপাদক কৃষক উভয়েই লাভবান হতেন।

উৎপাদন ব্যবস্থা ও কৃষিপণ্যের মান সংরক্ষণের ব্যাপারে কৃষিবিদ ড. আখতারুজ্জামান জানান, বাংলাদেশে মান ও প্রসেসিং ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় বিদেশে রফতানি বাড়ছে না। ফসল ও ফল উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা সায়েন্টিফিক্যালি না হওয়ায় বিদেশিদের কাছে ব্যাড রেপুটেশন রয়েছে। এতেও সামগ্রিক কৃষি মার খাচ্ছে। তার কথা, দেশের সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনের রেকর্ড এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জায়গা করে নিয়েছে, তা সত্বেও কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। আবার কৃষক যে দামে তার মাঠ থেকে ফসল উৎপাদন করছেন তার থেকে অনেক বেশি দামে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় সব শহরে বিক্রি হচ্ছে। কৃষকের লাভের গুড় মধ্যসত্বভোগী নামক পিঁপড়াদের পেটে চলে যাচ্ছে।

তিনি জানালেন, ইউরোপ আমেরিকা জাপান কোরিয়া ভারতের কিছু কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে কৃষিপণ্যের বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেখানে কৃষকের জমি থেকে পণ্য সংগ্রহ করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করা হয়। পণ্য সংগ্রহের সময় কৃষককে একটা টোকেন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে পণ্য বিক্রি করার পরে তাকে ক্ষুদে বার্তায় কখন কোত্থেকে কত টাকা কিভাবে সংগ্রহ করা হবে সেটাও জানিয়ে দেয়া হয়। কৃষিপণ্যের কেনাবেচা সেখানে চলে অনলাইনে। বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকার বিদেশের এসব পদ্ধতি অনুসরণ করলে আমাদের কৃষক অনেক উপকৃত হবেন এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। হবেন আর্থিকভাবে লাভবান।

সূত্রমতে, কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তা বিধানে সরকারের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে নিয়মিত মনিটরিং দরকার বলে কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ এবং সচেতন ও পর্যবেক্ষকমহল থেকে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। তারা বলেছেন, কৃষক এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে আরো পিছিয়ে যাচ্ছেন। কারণ চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারছেন না। এসব বিষয়ে সরকারের বহুবিধ পরিকল্পনা আছে, কিন্তু নেই যথাযথ বাস্তবায়ন।
কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশের মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫শ’৫৬ হেক্টর। এর অনেক জমিতে এখনো তিন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ সামগ্রিক কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকের আর্থিক লাভবান হওয়ার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকায় কৃষি ও কৃষক দুই-ই পিছিয়ে পড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ