Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খামারিদের হাহাকার

উত্তরাঞ্চলে হাজার হাজার দুধ বিক্রেতা বেকায়দায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু প্রবেশ কমে যাওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের অনেক তরুণ উদ্যোক্তা খামার গড়ে তুলেছেন। তরুণরা খামার করে দুধ বিক্রি করেন। হাজার হাজার কৃষক গরু পালন করে কেউ দুধ বিক্রি করেন; কেউ বা কোরবানির জন্য গরু প্রস্তুত করেন। কিন্তু হঠাৎ খামারিদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। একজন উদ্যোক্তার মতে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলা এবং বগুড়া অঞ্চল মিলে প্রায় প্রতিদিন ৮ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। গড়ে ৪০ টাকা ধরে ৮ লাখ লিটার দুধের দাম ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু দুধ বিক্রি করতে না পেরে এখন তারা চরম বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছেন।

ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসার অস্তিত্ব পাওয়ায় আদালতের নির্দেশে বেসরকারি পর্যায়ে পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চিলিং পয়েন্ট বন্ধ রেখেছে। এতে দুধ নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের হাজার হাজার খামারি। সরকার নিয়ন্ত্রিত মিল্কভিটাকে আদালতের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করা হলেও এখনো অবিক্রীত রয়েছে হাজার হাজার লিটার দুধ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ৮৪৩৪টি খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে প্রতিদিন ২ লাখ ৫ হাজার লিটার দুধ উৎপন্ন হয়। মিল্কভিটার আওতাধীন সিরাজগঞ্জ-পাবনার খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ না করায় প্রায় ৪০ হাজার খামারি বিপাকে পড়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায় মিল্কভিটা, আড়ং, প্রাণ, আকিজ, ফার্মফ্রেশ তাদের লক্ষাধিক গরু থেকে উৎপাদিত প্রায় ২ লাখ লিটার দুধ বিপণন না করতে পেরে চরম ক্ষোভ ও হতাশায় ভুগছে। রংপুর-দিনাজপুরের খামারিদের অবস্থা আরো খারাপ।

ডেইরি ফার্ম করে প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন রংপুর-দিনাজপুরের অনেক খামারি। তবে হঠাৎ এ ঝড়ে খামারের গরুগুলো ধরে রাখা তাদের পক্ষে দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, রংপুর অঞ্চলে শত শত খামার গড়ে উঠেছে পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানীয় ক্রয়কেন্দ্র বা চিলিং পয়েন্টগুলোকে কেন্দ্র করে। শুধু রংপুর-দিনাজপুরেই প্রতিদিনের চাহিদা প্রায় ৬০ হাজার লিটার দুধ। এসব পয়েন্ট আদালতের নির্দেশে দুধ কেনা বন্ধ করে দেয়ায় দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।

গত সোমবার ২৯ জুলাই সরকার নিয়ন্ত্রিত সিরাজগঞ্জের মিল্কভিটাকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রেখে আরেকটি নির্দেশনা জারি করেন আদালত। কিন্তু খামারিরা বলছেন, এই অঞ্চলে (রংপুর-দিনাজপুর) পাস্তুরিত দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যে ৬০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে তার মধ্যে প্রাণ ২০ হাজার, ব্র্যাক ১৮ হাজার ও আরডি ১০ হাজার দুধ নেয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটা সংগ্রহ করে মাত্র ৮ হাজার লিটার। ফলে বাকি ৫০ হাজার লিটার দুধ বিক্রির ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই সঙ্কটে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে রংপুর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, এ পদক্ষেপে আস্তে আস্তে অগ্রসর হতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পাওয়া যাবে।

পাবনা-সিরাজগঞ্জের অবস্থা প্রায় অভিন্ন। পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় খামারি ও কৃষকরা ২৯ জুলাই রাস্তায় দুধ ফেলে প্রতিবাদ করেছেন। খবর নিয়ে জানা যায়, দেশে বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় ১৪টি কোম্পানি এখন তরল দুধ সংগ্রহ করে। সরবরাহ ভালো থাকলে পাবনা-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া থেকে দৈনিক ৭ থেকে ৮ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে কোম্পানিগুলো। ভরা মৌসুমে দুধ সংগ্রহের পরিমাণ আরো বেড়ে যায়। কোম্পানিগুলো যে দুধ সংগ্রহ করে, তার মূল কেন্দ্র সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরে। প্রতি লিটার দুধের দাম হিসেবে তারা চাষিদের দেয় ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা। মূল্য নির্ভর করে দুধে ননির মাত্রার ওপর। ওই অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকটা দুধের ওপর নির্ভরশীল।

পাবনার বিক্ষুব্ধ খামারিরা জানান, বৃহত্তর পাবনার ভাঙ্গুরা, ফরিদপুর, বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়াসহ আশপাশের উপজেলার ১৫ হাজার খামার থেকে প্রতিদিন আড়াই লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়, যা রাষ্ট্রায়ত্ত মিল্কভিটাসহ চারটি বেসরকারি কোম্পানিতে সরবরাহ করা হতো। হাইকোর্টের নির্দেশনায় মিল্কভিটা কিছু দুধ কিনলেও বেসরকারি কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্তে দুধ সংগ্রহ বন্ধ আছে। এতে ১০ থেকে ১২ টাকা দরে দুধ বিক্রি করেও মিলছে না ক্রেতা।

পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ওই জেলায় দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারের সংখ্যা ৫৫৬৪টি। এসব খামারে ১ লাখ ৭০ হাজার গাভী থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ লাখ লিটার দুধ খামারিরা সংগ্রহ করেন। কিন্তু দুধ সংগ্রহ এখন বন্ধ।

শাহজাদপুরের পোতাজিয়া চন্দ্রপাড়া গ্রামের আব্দুর রউফ বলেন, আমার এলাকায় সবাই গো-খামারি, সবার ঘরেই দুধের উৎপাদন আছে। হঠাৎ দুধ সরবরাহ বন্ধ থাকায় আমার এলাকার কোথাও দুধ বিক্রি হচ্ছে না। এখন আমরা খামারিরা এত দুধ নিয়ে কোথায় যাবো। বাধ্য হয়ে পানিতে ফেলছি। শাহজাদপুরের পোতাজিয়া প্রথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. ওয়াজ আলীর বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ। এখন হঠাৎ কোম্পানিগুলো দুধ সংগ্রহ বন্ধ করায় আমরা হাজার হাজার খামারি কোথায় যাবো? গরুগুলোকেই বা কী খাওয়াব? গরু হতে দুধ না দোয়ালে গরুর দুধজ্বর হবে।

মিল্কভিটা বাঘাবাড়ি প্লান্টের ডিজিএম ইদ্রিস আলী বলেন, আদালতের নির্দেশে আমরা দুধ সংগ্রহ ও বিপণন বন্ধ রেখেছি। এখানে প্রতিদিন ১ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করা হলেও খামারিদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে না।
খামারিরা জানান, কোম্পানিগুলোর দুধ ক্রয় বন্ধ করায় খামারের পশু ও নিজেদের পরিবার নিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। তারা বলেন. প্রধান আয়ের উৎস দুধ উৎপাদন করে বাজারজাত করা হলেও দুধ উৎপাদনে কোনো অনিয়ম করি না। অথচ কেন আমাদের দুধ নেয়া হচ্ছে না? সরকারের কাছে দাবি- যারা দোষ করে তাদের বিচার করা হোক। আর খামারিরা যারা সৎ উপায় অবলম্বন করি, তাদের প্রতি যেন সদয় হন।



 

Show all comments
  • ash ৩১ জুলাই, ২০১৯, ৫:০৫ এএম says : 1
    ASHOLE AMADER DESHER AI SHORKAR OKORMA, HOPELESSS BOKOLOM SHORKAR !! MATHAY KHALI GOBOR R SHOYTANI BUDHI SARA R KISU NAI
    Total Reply(0) Reply
  • Yourchoice51 ৩১ জুলাই, ২০১৯, ১০:৪৩ এএম says : 0
    Helllo, what's going on with the lab-tests? Is there any way to verify the veracity of the lab-tests? Money talks too loud in Bangladesh; so the quality of lab-tests cannot be ignored. The hard-working farmers are producing 100% pure milk; but the so-called tests made them the worst suffers. God bless!
    Total Reply(0) Reply
  • Ruhul amin ৩১ জুলাই, ২০১৯, ১০:৪৫ এএম says : 0
    sorkar oti drouto ar somadan kora dorkar.amra anurod korbo.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ