বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
জয়দেবপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ-ভুলতা হয়ে বন্দর। সেখান থেকে ফতুল্লা-কেরানীগঞ্জ দিয়ে সাভারের বলিয়ারপুর। আরেকটি অংশ সংযোগ ঘটাবে সাভার-জয়দেবপুরের। এ সীমারেখা ধরেই ঢাকা মিডল রিং রোড নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে জয়দেবপুর-বন্দর অংশের কাজ আগামী সেপ্টেম্বরেই শুরু হচ্ছে। বন্দর-সাভার অংশেরও কাজ শুরুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। দুটি সড়কই নির্মাণ হচ্ছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায়। যদিও একই গতিপথে পিপিপিতে দুটি সড়ক নির্মাণের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ)। এর কোনোটিই ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ হবে না বলে মনে করছে সংস্থাটি।
পিপিপিতে নির্মিতব্য সড়ক দুটির একটি ঢাকা বাইপাস। জয়দেবপুর থেকে শুরু হয়ে দেবগ্রাম, ভুলতা হয়ে মদনপুর-বন্দর পর্যন্ত যাবে সড়কটি। এটি নির্মাণে বিনিয়োগ করছে জাপানের মারুবেনি করপোরেশন। নির্মাণকাজ পেয়েছে চীনের সিচুয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ (এসআরবিজি), বাংলাদেশের শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এ ঢাকা বাইপাস নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রকল্পটি।
অন্যদিকে নির্মিতব্য আরেকটি সড়ককে চিহ্নিত করা হচ্ছে ঢাকা পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামে। বন্দর থেকে শুরু হয়ে ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, নিমতলী হয়ে সাভারের বলিয়ারপুর পর্যন্ত যাওয়ার কথা রয়েছে সড়কটির। জি-টু-জি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের যৌথ অর্থায়নে উড়াল সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। শেষ হয়েছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও। ঢাকা পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড হাইওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের অধীনে।
বাস্তবায়নের ঠিক আগে শেষ মুহূর্তে এসে এক গতিপথে পিপিপির দুটি সড়ক নিয়ে আপত্তি তুলেছে ডিটিসিএ। ডিটিসিএর এ নিয়ে গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি সভা গত মাসে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এক পথে দুটি পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার পক্ষে মত দেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। বিষয়টি ডিটিসিএর ১২তম বোর্ডসভারও আলোচ্য সূচিতে রাখা হয়। যদিও গত ১৯ জুন অনুষ্ঠিত ওই বোর্ডসভায় এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
সংস্থাটির আপত্তির জায়গাগুলো জানতে চাইলে ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ঢাকা মিডল রিং রোডের অংশ হিসেবে দুটি পিপিপি সড়ক নির্মাণ করা হলে এর কোনোটিই কার্যকর হবে না। কারণ দুটি সড়কই টোল দিয়ে ব্যবহার করতে হবে। নারায়ণগঞ্জ বন্দর থেকে একটি অংশ যাবে জয়দেবপুরে, আরেকটি সাভারে। দুটি গন্তব্যই খুব কাছাকাছি। এতে বিনিয়োগকারীদের রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব পড়বে। তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ কারণেই আমরা এখানে দুটি পিপিপি প্রকল্পের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি।
ঢাকা বাইপাস সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২২ সালে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরবর্তী ২৫ বছর টোল আদায়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে নেবে। এ সময়ে সড়কটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বেও থাকবে প্রতিষ্ঠানগুলো। নির্মিতব্য বাইপাস সড়কটির ধীরগতি লেন দিয়ে টোলমুক্তভাবে চলাচল করা যাবে।
অন্যদিকে পূর্ব-পশ্চিম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল করতে হলেও যানবাহনগুলোকে টোল দিতে হবে। এজন্য সড়কটিতে নির্মাণ করা হবে ১৬টি টোল প্লাজা, যার প্রতিটিতেই থাকছে তিনটি করে টোল বুথ। ২০২০ সালে শুরু হয়ে ২০২৫ সাল নাগাদ সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।
পিপিপির অধীনে একই গতিপথে দুটি সড়ক নির্মাণের কারণে ভবিষ্যতে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, সাধারণভাবে দেখলে মনে হবে, পিপিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তো কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু ভবিষ্যতে এটা নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে। পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগকারীরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টোল আদায় করে নির্মাণ ব্যয় তুলে নেয়। সরকারের সঙ্গে বিনিয়োগকারীর চুক্তি থাকে। এ সময়ে প্রকল্প এলাকায় কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করা যাবে না, যাতে এসব অবকাঠামো ওই প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়। এর মানে, পিপিপিতে সড়ক হলে অন্তত ২০-২৫ বছর সেখানে আর কোনো উন্নয়ন করা যাবে না। ভবিষ্যতে এটা বড় সমস্যা হয়ে উঠতে পারে, যেটা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার এলাকায় এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) সমন্বিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও সেগুলো বাস্তবায়নের কথা বলা আছে। আমাদের উন্নয়নগুলো যদি সেভাবে করা না হয়, তাহলে এই যে একটা মহাপরিকল্পনা করা হলো, সেটা কোনো কাজে লাগবে না। ডিটিসিএ একই গতিপথে দুটি পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে আপত্তি জানিয়েছে। এটা তারা মহাপরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতেই করেছে। তাদের পাশ কাটিয়ে এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সরকারের কোনো সংস্থারই উচিত হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।