বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সাথে রোহিঙ্গাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানাগেছে। সফর দলের নেতা মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিন্ট থোয়ে রোহিঙ্গাদের সরাসরি মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়া হবে না বলে জানালে আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায়।
রবিবার দুপুরে মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সাথে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সাথে এক বৈঠকে শেষে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তবে সাংবিধানিক ধারা মতে রোহিঙ্গাদের বিদেশী হিসেবে মিয়ানমারে বসবাস করার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু মিয়ানমার প্রতিধিদলের এই কথায় রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে তাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে সুরাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।
রবিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডি- ৪ ব্লকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া হিন্দু খ্রিস্টান ও রোহিঙ্গাদের সাথে দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসেন মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিদল। এ সময় তারা মিয়ানমার সরকারের এই মনোভাবের কথা রোহিঙ্গাদের জানিয়ে দেন। পর্যবেক্ষকদের মতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এভাবে টালবাহানা করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া পেছাতে কাল
ক্ষেপণ করছেন বলেই মন হয়।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া প্রসঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গতকাল থেকে দফায় দফায় সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক করে আমি কথা বলেছি। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের সাংবিধানিক আইন অনুসারে ৩ ধরণের নাগরিকত্বের বিধান রয়েছে। সে মোতাবেক তার একটি হচ্ছে, তিন প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করে থাকলে কাউকে 'নেট্রালাইজড সিটিজেন শীপ' বা নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রয়েছে। এই বিধান মতে তারা সরাসরি মায়ানমারের নাগরিক না হলেও বিদেশী হিসেবে মিয়ানমারে বসবাস করার বৈধতা দেয়া আছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ধারা মোতাবেক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের জাতীয় আইডি কার্ড দেয়া হবে। যার কারণে তাদের জাতীয়তা পরিচয়ে কোন সমস্যা থাকবে না।
তবে মিয়ানমার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মারপ্যাঁচের কথায় রোহিঙ্গারা আশ্বস্ত হতে পারেনি বলে জানা গেছে। তাই তারা জানিয়ে দিয়েছে তাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি নয়।
মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সাথে ৩০ জন রোহিঙ্গা বৈঠকে মিলিত হন। এর মধ্যে ছিলেন পাঁচজন নারী সদস্য। আরো ছিলেন, চারজন খ্রিষ্টান এবং ১০ জন হিন্দু রোহিঙ্গা। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্ব দেন মাষ্টার মুহিবুল্লাহ নামের একজন রোহিঙ্গা নেতা।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরাতে গতকাল থেকে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দেশটির সরকারের পাঠানো প্রতিনিধিদল। তিন দিনের সফরে আসা প্রতিনিধিদলটি দ্বিতীয় দিনের মত রবিবারও দফায় দফায় রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন।
রোববার (২৮ জুলাই) সকালে ও দুপুরে সাড়ে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ক্যাম্প-৪ এ দুই দফায় বৈঠক করেন তারা।
বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিন্ট থোয়ে। তার নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন আরও ৯ জন সদস্য।
রোহিঙ্গাদের পক্ষে মাষ্টার মুহিব উল্লাহ’র নেতৃত্বে ৩০ জন সদস্য মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। তার মধ্যে পাঁচ জন নারী সদস্যও রয়েছেন। এছাড়া তাদের সাথে আসিয়ানের পাঁচ প্রতিনিধিও রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুলাই তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে তাদের এ সফর বলে জানা গেছে। তবে এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নানান শর্তের কারণে সঠিক কোনো সিদ্ধান্তে আসাযায়নি দুই দিনেও।
উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আশ্রিত এলাকা কক্সবাজারের মানুষ। দাবী উঠেছে তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের।
বাংলাদেশ সরকার দফায় দফায় চেষ্টা করেও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি দল পাঠাল মিয়ানমার সরকার। তবে রোহিঙ্গাদের চৌদ্দ পুরুষ মিয়ানমারের নাগরিক হলেও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের নাগরিক স্বীকার করতে রাজি না হওয়ায় এবারেও আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।