পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। তখন থেকেই হিন্দু উগ্রবাদী জনতা গো-হত্যার সন্দেহে মুসলমানদের উপর হামলা ও তাদের পিটিয়ে হত্যা করছে। গরুর গোশত খাওয়া ও রাখা নিয়েও হিংসার বলি হতে হচ্ছে। তাদের এই পরিস্থিতিতে মুসলমানদের উপর হত্যা ও নির্যাতনের বিষয়টি হালকা করে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল কিন্তু বিজেপি সরকারের এই উগ্রসা¤প্রদায়িকতা বন্ধ হয়নি। তাহলে কি ভারতে মুসলিম হত্যাই বিজেপি’র টার্গেট?
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত স্বাধীনতার সময় স্বার্থের কারণে আমাদের উপকার করলেও স্বাধীনতার পর থেকে এমন কোন জুলুম-নির্যাতন নেই যা তারা করেনি। ভারতে মুসলমান অত্যাচার দেখে আসমান-জমিনও কেঁদে উঠে। এতো নির্যাতনের পরে ভারতে মুসলিম হত্যা বন্ধ করতে বিশ্বের মুসলিম নেতারা নীরব কেন? কেন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না?
এমন অবস্থায় মুসলমানদের করণীয় কী? অবশ্যই মুসলমানদের করণীয় রয়েছে। দিক নির্দেশনা রয়েছে, এখন দেখার বিষয় বিশ্বের মুসলিমগণ সে দিক নির্দেশনা গ্রহণ করছেন কিনা, মানছেন কিনা?
রাসূল (সা.) বলছেন, মুসলমানরা পরস্পর ভাই, অর্থাৎ দুনিয়ার কোথাও একজন মুসলমানও যদি আক্রান্ত হয়, আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে দুনিয়ার প্রত্যেক মুসলমানই সে যাতনা কষ্ট অনুভব করবে এবং সেই কষ্ট দূর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মুসলিম ভাই বোনসহ শিশুরা নির্যাতিত, লাঞ্ছিত, অপমানিত হচ্ছে, মার খাচ্ছে, খুন হচ্ছে, জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে, আমাদের মা বোনদের নরপিশাচরা নিগৃৃহীত করছে, তাদের ইজ্জত আভ্রু কেড়ে নিচ্ছে, গণধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তা প্রতিহত করার জন্য উম্মাহ হিসেবে আমরা কি সাধ্যনুযায়ী চেষ্টা করছি?
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ট্রেনে হুগলীর বেসরকারি এক মাদ্রাসা শিক্ষককে একটি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের লোকজন তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করতে চেষ্টা করছে এবং তাকে মারধর করে ট্রেনের প্ল্যাটফরম থেকে ফেলে দিয়ে তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করানোর হুমকি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষক শাহরুখ।
ভারতের রাজখন্ডের রাজ্যে একদল হিন্দু ২৪ বছর বয়ষ্ক তাবরেজ আনসারীকে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে বেঁধে চতুর্দিক থেকে নির্যাতন করছে। স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে এ ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। লোকজন লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে এবং ‘জয় শ্রীরাম জয় হনুমান’ বলতে তাকে বাধ্য করতে চেষ্টা করছে। কিন্তু তিনি বলছেন না। তবে ভিডিওতে দেখা গেছে তিনি মার খেতে খেতে কাতর স্বরে বলতে থাকেন আমার মা মারা গেছেন, তার নামে শপথ করে বলছি আমি এমন কাজ করিনি, অর্থাৎ চুরি করিনি। কিন্তু তাকে রেহাই দেওয়া হয়নি। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার চারদিন পর মারা যান। তাবরেজ মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী শায়েস্তা আনসারী এনটিভি চ্যানেলকে বলেন, তার স্বামী মুসলমান, এজন্য তাকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখন আমার কেউ নেই, আমি এখন কীভাবে বাঁচবো?
এমনকি এক অন্ধ দম্পত্তিকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়। ৬৭ বছরের আবুল বাশার ও তার স্ত্রী বেদনা বিবি (৬১) বর্ধমানের অন্ডালের চিটাডাঙ্গা এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে কট্টর হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা তাদের ঘিরে ধরে। ‘জয় শ্রীরাম ও জয় মা স্লোগান’ দিতে বাধ্য করে। হিন্দুদের সমাজ কি এতোটাই নিচে নেমে গেছে? যে অন্ধ দম্পত্তিকে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা হচ্ছে। তাদের ভগবান রাম কি এই অপরাধের অনুমতি দেন?
সম্প্রদায়ের লোক লুটপাট করে আগুন জালিয়ে দিয়েছে। অনলাইনে প্রায়ই দেখা গেছে- রমজান মাসে তারাবীর নামাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আজানের সময় মাইক খুলে নিয়ে গেছে। মুসলমানদের মসজিদ থেকে ঘাড় ধরে বের করে দিচ্ছে। একটি মসজিদ ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে। ঈদের নামাজ চলাকালীন সময়ে তীর ধনুকে হামলায় তীরবিদ্ধ হয়েছে যুবক। মুসল্লিদের রক্তমাখা ঈদুল ফিতর ফেইসবুকে দেখেননি এমন কেউ বোধ হয় নেই।
মোদি সরকারের এই উগ্রসা¤প্রদায়িকতা বন্ধ করার জন্য ওআইসি’র প্রতি দাবি জানাচ্ছি। ভারতের নির্যাতিত মজলুম মুসলমানদের রক্ষার জন্য অনুরোধ করছি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতি। বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশ ও রাষ্ট্রনেতাদের প্রতিও অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠন, খ্যাতিমান পীর মাশায়েখগণের প্রতি, যাদের রয়েছে কোটি কোটি ভক্ত অনুসারী এবং লাখ লাখ মসজিদের ইমাম সবার-ই উচিত এই বিপন্ন মুসলমানদের রক্ষার জন্য প্রতিবাদ করা।
দেশের বিভিন্ন ইসলামী দলগুলো প্রতিবাদ জানানো শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দেশের প্রধান বৃহত্তম ইসলামী দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ভারতের মুসলিম গণহত্যা বন্ধে আগামী ৩০ জুলাই বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল ও স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচী ঘোষণা দিয়েছেন। এই গণমিছিলে নেতৃত্বে দেবেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম পীর সাহেব চরমোনাই। এ কর্মসুচী পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন নেতৃবৃন্দ। ইসলাম ও নির্যাতিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনে ভারত অভিমুখে লংমার্চের মতো কঠিন কর্মসূচী দিতেও প্রস্তুত রয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
ভারত যখন ২০০৯ সালে টিপাইমুখে বাঁধ দেওয়া শুরু করেছিল ঠিক তখনী এ দলটি রাজধানী ঢাকা থেকে টিপাইমুখ অভিমুখে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী নিয়ে লংমার্চ করে সিলেটের টিপাইমুখ অভিমুখে সমাবেশ করে বাঁধ বন্ধের জন্য ভারত সরকারকে কঠোর হুশিয়ারী প্রদান করেন। এতে ভারত সরকার টিপাইমুখ বাঁধ বন্ধ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ভারতে মুসলিম নির্যাতন বন্ধে যে কোন কঠিন কর্মসূচী দিতেও তারা প্রস্তুত রয়েছেন।
সেই সাথে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলবো- আপনি রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বিশ্বে আজ প্রশংসিত। এমতাবস্তায় ভারতীয় মজলুম মুসলমানদের রক্ষায় আরেকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বাংলার মানুষ আপনাকে কখনো ভুলবেনা।
সারা বিশ্বে আমার মুসলিম বোনদের ইজ্জতহরণ, ভাইদের উপর করুন নির্যাতন ও ছোট্ট শিশুদের আর্তনাদ দেখে মনে হয় বিশ্বে ২’শ কোটি মুসলমানদের দরকার নেই, প্রয়োজন শুধুমাত্র একজন বীর সেনাপতির। যে মরক্কোর মরুভূমি থেকে ছুটে আসবে ইউসুফ বিন তাসকিনের মতো। বড়ই প্রয়োজন খালিদ বিন ওলিদের, তারিক বিন জিয়াদের, সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ূবীর মতো বীর সেনাদের। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দুনিয়াতে বেঁচে নেই, মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ দুনিয়াতে নেই, কিন্তু বাংলার মুসলমানদের ভয়ের কোন কারণ নেই। বাংলার জমিনে বেঁচে আছেন শাহজালালের উত্তরসূরীরা। যারা বিশ্বের কোথায়ও মুসলিম আক্রান্তের খবর পেলে প্রতিবাদে ফেটে উঠে এবং জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকেন।
লেখক: রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।