Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত মানুষ

| প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০১৯, ১২:০০ এএম

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশ বেশ কয়েকটি দুর্যোগের কবলে পড়েছে। একদিকে ভয়াবহ বন্যা, অন্যদিকে ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার। এই দুই দুর্যোগে দেশের অনেক অঞ্চলের মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরাঞ্চল ডেঙ্গুর প্রকোপ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে তা মহামারি রূপ ধারণ করছে। ইতোমধ্যে চিকিৎসক, শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখের মতো মানুষ। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। এ এক মহাআতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরাঞ্চলে ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারের পাশাপাশি গত প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। অনেকে বলছেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে বন্যা এতটা ভয়াবহ রূপ লাভ করেনি। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু, সড়কসহ কৃষির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল বেশ কয়েকটি দৈনিকে বন্যার ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ পাওয়া গেছে। দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বন্যায় ৩১ জেলার ১ লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমি ডুবে গেছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার ৬৬৫ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি। এতে এ বছর ১ লাখ টন আউশ ধান কম উৎপাদন হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। শুধু কৃষিজমি নয়, বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে গরু-ছাগলের খামারিরা। জামালপুরে আড়াই হাজার খামারের মধ্যে ডুবেছে ১২০০ খামার। এছাড়া বন্যার্ত এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। এসব এলাকার মানুষ এখন দিশাহারা।

বন্যা এবং ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবন বিপন্নদশায় উপনীত হয়েছে। রাজধানীতে ডেঙ্গু যেভাবে বিস্তার লাভ করেছে তা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নিধন নিয়ে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছে। নগরবাসী দুই মেয়রকে ব্যর্থ বলে অখ্যায়িত করেছে। প্রায় প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় এবং মশক নিধনে অকার্যকর ওষুধের ব্যবহার ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা যাচ্ছে না। দেখা যাবে, অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রজন্ন ও প্রকোপ মৌসুমে তা প্রতিরোধ করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। নগরবাসীকে এ সময় পর্যন্ত অসহায় হয়েই থাকতে হবে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ডেঙ্গু এখন শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তার লাভ করছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা যে মহামারি রূপ ধারণ করবে তাতে সন্দেহ নেই। বন্যাকবলিত অঞ্চলের মানুষ যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও দুঃখ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে চলছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, বন্যার্তদের সাহায্যার্থে যে পরিমাণ সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ কার্যক্রম প্রয়োজন তা খুবই অপ্রতুল। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি, মেয়র, পৌর মেয়রদের উদ্যোগ অনেকটা লোক দেখানো হয়ে পড়েছে। ক্যামেরার সামনে ত্রাণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেই দায়িত্ব পালনের নমুনা দেখাচ্ছে। অথচ এই জনপ্রতিনিধিরাই ভোটের সময় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। এখন তাদের এলাকার বন্যাকবলিত জনগণ যে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে, এ নিয়ে তাদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বা হচ্ছে, তার সঠিক তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, যারা বন্যাকবলিত হয়ে উঁচু বাঁধ, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে সেখানে কিছু ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। দুর্গম এলাকার যেসব মানুষ আশ্রয়ের জায়গা না পেয়ে ঘরের চালে বা নৌকায় ভেসে বেড়াচ্ছে সেখানে ত্রাণ কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ত্রাণ কার্যক্রমে সমাজের ধনী শ্রেণী কিংবা ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। অথচ এই শ্রেণীটি সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিয়েই পয়সা-কড়ির মালিক হয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় এবং সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করার দায়িত্ব তারা পালন করছে না। ত্রাণ কার্যক্রমের সার্বিক দিকে বিবেচনায় মনে হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, বন্যায় মানুষ, ফসলাদি, গবাদি পশু ভেসে গেলেও তেমন কিছু আসে যায় না। এবারের বন্যায় সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষতি এবং চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঈদের বাকি সর্বসাকুল্যে পনের দিন। অচিরেই মানুষের ঈদযাত্রা শুরু হবে। সড়কের বেহালদশায় লাখ লাখ যাত্রীকে কী দুর্ভোগে পড়তে হবে, তা আগাম বলে দেয়া যায়। সড়ক কর্তৃপক্ষ এসব সড়ক-মহাসড়ক কোনো রকমে জোড়তালি দিয়ে ঠিক করা শুরু করেছে। তবে ঈদযাত্রায় বৃষ্টি এবং যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এই জোড়াতালি কোনোভাবেই টিকবে না তা সকলেরই জানা। ফলে এবারের ঈদযাত্রা মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশনের যেমন কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই, তেমনি তা প্রতিরোধে সহসা কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে-এমন আশা এখন আর নগরবাসী করে না। তারা যেন তাদের নিয়তি মেনে নিয়েছে। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে, যেখানে লাখ লাখ মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত, হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির জায়গা নেই, সেখানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করে বিষয়টিকে ‘গুজব’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এটা যে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার এক ধরনের অপচেষ্টা, তা সচেতন নাগরিকমাত্রই বুঝেছেন। তবে আমরা আশা করব, সিটি করপোরেশন প্রকৃত চিত্র অনুধাবন করে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করা একান্ত জরুরী। বন্যার্তদের পাশে সমাজের বিত্তবান থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বানভাসী মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্দশার মধ্যে পড়ে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর। সবকিছুই তাদের নতুন করে শুরু করতে হয়। এ সময়টায় তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকারের উচিত হবে এদিকটা খেয়াল রেখে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে এবং তারা যাতে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারে এমন আগাম কার্যক্রম গ্রহণ করা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন