Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:১২ পিএম

রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোয় এখন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের ভিড় বাড়ছে। এতে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। তবে এসব রোগীর অধিকাংশই ঢাকায় এসে ডেঙ্গুতে সংক্রমিত হয়েছেন বলে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন। এ অবস্থায় তারা স্থানীয়দের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালগুলোর ডেঙ্গু পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে।

চট্টগ্রামে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৪৮ জন। বর্তমানে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদের অধিকাংশই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে ঢাকায় গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।
চমেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীরা জানিয়েছেন, তারা সবাই আক্রান্ত হওয়ার আগে ৬ থেকে ১০ দিন বিভিন্ন কাজে ঢাকায় অবস্থান করেছিলেন। ঢাকা থেকে ফেরার পরই তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

খুলনা বিভাগে চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে ৭১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তরা খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও বাগেরহাট এলাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪ জন, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ ও গাজী মেডিকেল হাসপাতালে তিনজন ভর্তি হয়েছেন। খুলনা বিভাগের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে খুলনা জেলা শীর্ষে রয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও যথাযথ পরীক্ষায় শনাক্ত না হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়নি।

ডেঙ্গু সংক্রমিত ব্যক্তিরা খুলনার বাইরে অবস্থানকালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিমত চিকিৎসকদের। তাদের মধ্যে খুলনার সিটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি নয়জনই ঢাকা থেকে যাওয়ার পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে খুলনা সরকারি হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে। বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও তাতে খরচ বেশি। পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ১০০ থেকে দেড় হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডাক্তার মুসা আল মনসুর জানান, গত তিন-চার দিনে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বেশকিছু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৬ জনের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন আরো ১২ জন।

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তারা প্রত্যেকে বিভিন্ন সময়ে মেডিসিন ওয়ার্ড ১, ২, ৩ ও ২৯ নং ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। এদের সবাই ঢাকাতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. সুলতান আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এদের প্রত্যেকেরই শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে। এরা সবাই ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ আছেন, যারা ঢাকায় রোগ শনাক্ত হওয়ার পরই রংপুরে এসেছেন।

নড়াইলের কয়েকজন বাসিন্দা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও তাদের প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চিকিৎসকরা জানান, নড়াইলের বাসিন্দা যারা অন্য কোথাও যাননি, তাদের কেউই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হননি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা অন্য জায়গা থেকে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। এদের কয়েকজনকে এরই মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনাসহ অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নড়াইলের দুই বাসিন্দা মারা গেছেন। তারা হলেন ইকরাম হোসেন (৪৫) ও রুখসানা পারভীন রানী (৫২)।

এদের মধ্যে নড়াইল সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ইকরাম হোসেন ঢাকায় চাকরি করতেন। গত সপ্তাহে বাড়িতে ফোন করে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। বুধবার রাতে গ্রামে যাওয়ার জন্য ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন তিনি। নড়াইলের কালনা ফেরিঘাটে এসে বাসের অন্যান্য যাত্রী বাইরে নামলেও তিনি নামেননি। এ সময় পরিবহনের লোকজন বুঝতে পারেন তার মৃত্যু হয়েছে। পরে তারা বাস নিয়ে নড়াইল সদর থানায় চলে যান। সেখানে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়।

অন্যদিকে রুখসানা পারভীন রানী ১৯ জুলাই রাতে যশোরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার স্বামী আসলাম খান লুলু জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রুখসানা পারভীন পারিবারিক কাজে ঢাকায় আসেন। সেখান থেকে নড়াইল যাওয়ার পর জ্বরে আক্রান্ত হন। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণের পরও অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে যশোরের ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেদিনই গভীর রাতে তাকে ঢাকায় আনার প্রস্তুতির মধ্যেই মারা যান রুখসানা পারভীন।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানিয়েছেন, বর্তমানে হাসপাতালে আটজন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গত কয়েক দিনে তারা ভর্তি হয়েছেন।
গত এক সপ্তাহে বরিশালের ১৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ছয়জন এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন বলে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকের হোসেন জানান। বাকি সাতজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডেঙ্গুজ্বর

১৬ নভেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ