Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদের আগেই সড়ক-মহাসড়ক চলাচল উপযোগী করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

চলমান বন্যা এবং ভারি বৃষ্টিপাতে দেশের সড়ক-মহাসড়ক ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ১১টি মহাসড়কসহ সারাদেশে ৮ হাজার কিলোমিটার সড়কের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যেসব চারলেন মহাসড়ক নির্মিত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলো ভেঙেচুড়ে চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বন্যার কারণে নৌপথও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যাতায়াতের মূল এই দুই পথ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এবারের ঈদযাত্রা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের সার্বিক সড়ক ও পানিপথের যে করুণচিত্র উঠে এসেছে, তাতে ঈদে ঘরমুখী মানুষকে অশেষ ভোগান্তিতে যে পড়তে হবে, তা আগাম ধারণা করা যায়। ঈদের আগে এসব সড়ক কতটা চলাচল উপযোগী হয়ে উঠবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যে করুণদশা দেখা দিয়েছে, তাতে এই সড়কে ঈদযাত্রা অত্যন্ত দুরুহ হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সড়কে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে তা কল্পনাও করা যায় না।

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় সড়ক পথে। এ খাতে বরাদ্দও থাকে বেশি। তবে ব্যয় অনুযায়ী যেভাবে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার হওয়ার কথা তা একেবারে অনুপস্থিত। বিষয়টি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সড়কগুলো যেন অর্থ অপচয়ের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে। এসব সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারে যে কর্তৃপক্ষ এবং ঠিকাদার রয়েছে মূলত তাদের গাফিলতি এবং এন্তার দুর্নীতির জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও সড়কপথ সহজ, মসৃণ ও টেকসই হচ্ছে না। কয়েক মাস আগে প্রকাশিত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে যোগাযোগ খাত সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। অবশ্য এ খাতে দুর্নীতির বিষয়টি জরিপ না দেখেও সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। সম্প্রতি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চারলেন উদ্বোধনের আগে দেবে যাওয়ার খবর দেশের মানুষ জেনেছে। সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই সড়ক যে দুর্নীতির কবলে পড়েছে তা বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে বলেছেন। নিম্নমানের উপকরণ এবং যথাযথভাবে নির্মাণ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করাই এর অন্যতম কারণ। শুধু এই সড়ক নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনের মহাসড়কটি চালু হওয়ার এক বছরের মাথায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পুনরায় সংস্কারকাজের প্রয়োজন পড়ে। এ পরিস্থিতি সারাদেশের সড়কজুড়েই বছরের পর বছর ধরে চলছে। বলা যায়, সড়ক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদরদের জন্য সড়ক-মহাসড়ক দুর্নীতির এক মহাউৎসে পরিণত হয়েছে। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এর টেকসই নিয়ে কোনো কথা বলতে শোনা যায় না। একটি সড়ক নির্মিত হবে বা হচ্ছে, তা ন্যূনতম কতদিন টেকসই হবে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। ফলে দেখা যায়, নির্মাণকালে বা নির্মাণ শেষ হওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সড়ক বেহাল দশায় উপনীত হয়। এসব ক্ষেত্রে নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের কমন একটি যু্িক্ত দিতে দেখা যায়। আর তা হচ্ছে, বৃষ্টি এবং ওভারলোড যানবাহন চলাচলের জন্য এ পরিস্থিতি হচ্ছে। এ ধরনের যুক্তি যে অগ্রহণযোগ্য তা একজন সাধারণ মানুষও বোঝে। কারণ বাংলাদেশে ঝড়-বৃষ্টি-বন্যা এবং ওভারলোড যানবাহন চলাচল নতুন কিছু নয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তাদের আবহাওয়া উপযোগী এবং তদানুযায়ী সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করে থাকে। আমাদের দেশে খরা-বৃষ্টি-বন্যা স্বাভাবিক বিষয়। কাজেই সড়কগুলোও এই আবহাওয়া উপযোগী করে নির্মাণ করা উচিত। পরিতাপের বিষয়, সড়ক সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি মোটেও মাথায় নিচ্ছে না। কারণ তারা জানে, এ বিষয়টি মাথায় নিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে তা টেকসই হবে এবং তাদের দুর্নীতির সুযোগ ও সড়ককে পুঁজি করে তাদের ব্যবসাও কমে যাবে। জনগণের ট্যাক্সের অর্থের এমন অপচয় বিশ্বের আর কোথাও হয় কিনা তা আমাদের জানা নেই। দুঃখের বিষয়, নির্মিত ও নির্মাণাধীন সড়ক-মহাসড়ক করুণ পরিস্থিতি কেন হয় এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যেমন বাস্তবসম্মত কোনো তথ্যমূলক বক্তব্য পাওয়া যায় না, তেমনি যেসব ঠিকাদার এর সাথে জড়িত তাদের জবাবদিহির বিষয়টিও জানা যায় না। ফলে আবহাওয়ার একটু হেরফের হলেই সড়ক-মহাসড়কগুলো চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১২ আগস্ট ঈদুল আযহা উদযাপিত হতে পারে। ইতোমধ্যে বন্যা ও বৃষ্টিতে সড়ক-মহাসড়ক যে দুর্দশা দেখা দিয়েছে, তাতে এই অল্প সময়ে তা মেরামত করা একপ্রকার অসম্ভব ব্যাপার। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় যাত্রীদের অত্যন্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হতে পারে। তারপরও আসন্ন ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য ঈদের আগেই সড়ক মেরামতে জোর উদ্যোগ নিতে হবে। গত ঈদে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সড়কগুলো মসৃণ থাকায় ঈদযাত্রা বেশ স্বস্তিদায়ক ছিল। সেই চকচকে ও ঝকঝকে মসৃণ সড়কই বন্যা-বৃষ্টির কবলে পড়ে একেবারে বালির বাঁধের মতো হয়ে পড়বে, তা কল্পনাও করা যায় না। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, সড়কগুলো চকচকে মোড়কের আড়ালে অত্যন্ত দুর্বলভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। যদি এসব সড়কের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের মিনিমাম মেয়াদের গ্যারান্টি এবং সব ধরনের আবহওয়া উপযোগী হওয়ার বাধ্যবাধকতা দেয়া হতো তাহলে এই করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। এখন এসব সড়ক স্বল্প সময়ে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করতেও দেখা যাবে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এই অর্থ জনগণের পকেট থেকেই যাবে। এটাকে অর্থের অপচয় এবং নয়ছয় করা ছাড়া আর কী বলা যেতে পারে! আমাদের কথা স্পষ্ট, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে মেয়াদভিত্তিক টেকসই-এর নিশ্চয়তা দেয়ার বিধান করতে হবে। এই মেয়াদের মধ্যে সড়ক-মহাসড়কে ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অনুপযোগিতা দেখা দিলে তার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে এবং তাদের খরচেই মেরামত করে দেয়ার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। জনগণের অর্থে নির্মিত সড়ক-মহাসড়ক কারো স্থায়ী আয়ের উৎসে পরিণত হবে, তা হতে পারে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন