পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ছেলেধরা আতঙ্কে গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর বাড্ডায় একজন এবং নারায়ণগঞ্জে জন নিহত ও একজন আহত হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার রাতে কেরানীগঞ্জে এক যুবক নিহত ও অপর এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছে। এর আগে গত ৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে একজন ও ১৮ জুলাই নেত্রকোনায় গণপিটুনিতে একজনের মৃত্যু হয়। এরমধ্যে নেত্রকোনায় গণপিটুনির শিকার ওই ব্যক্তির ব্যাগ থেকে একটি শিশুর মাথাও উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৭ জুলাই চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে গণপিটুনির শিকার হন তিনজন। নিহতদের লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে অজ্ঞাত পরিচয়ের (৪০) এক নারী নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল পৌনে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উত্তর বাড্ডায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদরাসা পাশাপাশি অবস্থিত। সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনজন বোরকা পরিহিত নারী ওই এলাকায় যান। তারা স্কুলের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। বাধার মুখে দুজন পালিয়ে গেলেও অপরজন গণপিটুনির শিকার হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
ডিএমপির গুলশান জোনে এডিসি আহাদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, নিহতের পরিচয় উদ্ধার এবং ঘটনার প্রকৃত কারন জানার জন্য তদন্ত চলছে। এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে এক যুবক নিহত হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পরিচয় জানা যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শী স্কুল শিক্ষক সাঈদ হৃদয়ার আহমেদ জানান, মিজমিজি আল আমিন নগর এলাকায় আইডিয়াল ইসলামিক কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্লে-গ্রæপের এক শিক্ষার্থীকে সকাল ৮টার দিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল এক যুবক। ওই শিক্ষার্থী তাকে দেখে স্যার স্যার বলে চিৎকার করলে যুবকটি তাকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দেয়। এ সময় ওই যুবককে দাঁড়াতে বললে সে একটি রিকশা নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ তিনশ’ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজ জানান, নিহতের নাম পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এছাড়া এর নেপথ্যে অন্য কোন কারন রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় রসুলপুর গ্রামে শরীফ মিয়ার বাড়ির সামনে দুই যুবক ঘোরাফেরা করতে থাকেন। এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তাদের ঘোরাফেরার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়। দুই যুবক ঠিকঠাক উত্তর দিতে না পারায় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে দুই যুবককে পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আহত এক যুবককে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অপরজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি জানান, দুই যুবকের শরীরে কিলঘুষির চিহ্ন আছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত যুবকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অজ্ঞাত দুই যুবক ছেলেধরা চক্রের সদস্য হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ছেলে ধরা সন্দেহে নারীকে মারধর
এদিকে দুপুরে মিজমিজি এলাকায় ছেলে ধরা সন্দেহে শারমিন বেগম (৩৫) নামে এক নারী এক প্রবাসীর বাড়িতে যায়। এ সময় ওই নারীর কথাবার্তা এলোমেলো মনে হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে ছেলে ধরা সন্দেহে মারধর করে। খবর পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ওই নারীকে উদ্ধার করে খানপুর তিনশ’ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। শারমিন পটুয়াখালী সদর উপজেলার মরিচবুনিয়া গ্রামের সালমান শাহের স্ত্রী বলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিন পারভেজ জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি) সুবাস চন্দ্র সাহা জানান, ঘটনা দুটি তদন্ত করা হচ্ছে। গুজবে কান না দিয়ে এমন কোনও ঘটনা ঘটলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে থানা পুলিশকে জানানোর আহ্বান জানান তিনি।
গুজব ছড়াবেন না আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না
পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’ বলে একটি গুজব ছড়ানোকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মর্মান্তিকভাবে কয়েকজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্র বিরোধী কাজের সামিল এবং গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যু ঘটানো ফৌজদারী অপরাধ। গতকাল পুলিশ সদর দফতরের এ আইজি( মিডিয়া) মো. সোহেল রানা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সব কথা বলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো নিহতের ঘটনা ঘটেছে পুলিশ প্রত্যেকটি ঘটনা আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে গণপিটুনি দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। গুজব ছড়ানো এবং গুজবে কান দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে গণপিটুনি না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।