পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা লোক দেখানো
এজাহারভুক্ত রিশান ফরাজী গ্রেফতার
বরগুনায় প্রকাশ্য দিবোলোকে চাঞ্চল্যকর রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হত্যায় জড়িত বলে দাবি করেছে পুলিশ। তিনি হত্যা পরিকল্পনায় সরাসরি অংশ নিয়েছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ, গ্রেফতার আসামীদের স্বীকারোক্তি এ তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন। এদিকে, গতকাল হাইকোর্টে মিন্নির রিমান্ড বাতিলের জন্য করা একটি রিট আবেদনে সাড়া দেননি হাইকোর্ট। তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পুলিশ সূত্র জানায়, সংবাদ সম্মেলনে বরগুনার এসপি বলেন, এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া সব আসামি এবং মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সুস্পষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মিন্নিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মিন্নি এ হত্যাকাÐের বিষয়ে জানতেন। শুরু থেকে পরিকল্পনকারীদের সাথেও ছিলেন। খুনিদের সব ধরনের মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। মিন্নি নিজেও এ হত্যাকাÐের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। হত্যাকাÐের আগে-পরে খুনিদের সঙ্গে মিন্নির বহুবার কথোপকথন হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় মূল নায়ক নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সঙ্গে মিন্নিও পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাÐে জড়িত ছিল। গ্রেফতার অনেকে মিন্নির জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এছাড়া মিন্নির নিজের বক্তব্যেও হত্যায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। হত্যার আগে নয়ন বন্ডসহ গংয়ের অনেকের সাথে তার কথাপোকথনের তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার আগের দিন (২৫ জুন) মিন্নি নয়ন বন্ডদের বাড়িতে গিয়ে এ হত্যার পরিকল্পনা করে। এ হত্যাকাÐের ৬ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এ হত্যায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতার কথা জানায়।
হুমায়ুন কবির বলেন, ফুটেজে মিন্নি রিফাত শরীফকে রক্ষার যে চেষ্টা সেটি ছিল লোক দেখানো। মিন্নি নয়নকে জাপটে ধরলেও সে তাকে (মিন্নি) কোনো আঘাত করেনি। এছাড়া নয়নকে অভিযুক্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে এমনটি করেছিল। ঘটনার আগের দিন এবং ঘটনার পূর্ব মুহূর্তে নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির মুঠোফোনের আলাপ-আলোচনা থেকে বিষয়টির প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে।
পুলিশ সুপার বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার তিন নম্বর আসামি মো. রাশিদুল হাসান রিশান ওরফে রিশান ফরাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় অভিযান চালিয়ে রিশানকে গ্রেফতার করা হয়। তবে কখন কোথা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই বলেননি।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দু-একটি গণমাধ্যম রিফাত হত্যাকাÐ নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ পর্যন্ত এজাহারনামীয় ৮ জনসহ মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকাÐে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদেরকে আওতায় আনা হবে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, একটি মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করে হত্যাকাÐটি সংঘটিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দু’দিন আগে সোমবার হেলাল নামে একজনের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় রিফাত শরীফ। হেলাল নিহত রিফাত শরীফের বন্ধু হলেও নয়ন বন্ডেরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। ফোনটি উদ্ধার নিয়ে স্বামী রিফাতের মারধরের শিকার হন তিনি। পরে হত্যাকাÐের আগের দিন মঙ্গলবার নয়নের সঙ্গে দেখা করে সেই ফোনটি নয়নের হাতে তুলে দেন মিন্নি। মারধর আর ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতে রিফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় বলে সেই সূত্র জানায়।
এদিকে, রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির রিমান্ড বাতিলের জন্য করা একটি রিট আবেদনে সাড়া দেননি হাইকোর্ট। এ মুহূর্তে তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়ে দেন হাইকোর্ট। তবে লিখিতভাবে আবেদন অথবা মামলাটি হাইকোর্টে বিচারের জন্য আবেদন করতে পরামর্শ দেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন আদেশ দেন। এর আগে জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারুক হোসেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বিকাল ৪টায় বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। পরে দ্বিতীয় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হত্যায় মিন্নির সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
গ্রেফতারদের মধ্যে ১০ জন রিফাত হত্যাকাÐে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়াও চারজন অভিযুক্ত রিমান্ডে রয়েছে। রিশান ফরাজীকে রিমান্ডে নেওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।