পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পদ্মা-যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি ও তীব্র ঘূর্ণিস্রোতের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ফেরি চলাচল প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রচÐ স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ৪টি ফেরি চলাচল করতে না পারায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। যান্ত্রিক সমস্যায় সংস্কারে আছে এ রুটের আরো ৭টি ফেরি। এতে করে ফেরির সঙ্কটও দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে।
অন্যদিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ডাম্প ফেরি কে-টাইপ ও ছোটসহ অন্তত ১০ ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করায় এ নৌরুটে এখন যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। স্রোতের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে গত বুধবার সন্ধ্যায় পর একই ঘাটে ফিরে আসে ২টি ফেরি। সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত :
রাজবাড়ি জেলা সংবাদদাতা জানান, তীব্র স্রোতের কারণে আগে থেকেই বন্ধ হয়ে আছে রোরো ফেরি খানজাহান আলী ও ইউটিলিটি ফেরি শাপলা-শালুক। এছাড়া রুটের ৫টি ফেরি প্রায় ১ মাস ধরে সংস্কারে আছে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ রুটে সচল ছিল মাত্র ১১টি ফেরি। কিন্তু ফেরিগুলোর নদী পার হতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২-৩ গুণ সময় বেশী লাগছে। যার ফলে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। যানজটে আটকে পড়ে সহস্রাধিক যানবাহন। ৩/৪ দিনেও নদী পার হতে পারছে না অপচনশীল পণ্যবাহী যানবাহন। ১/২ দিন ধরে আটকে থেকে কয়েকশ কাঁচামালবাহী ট্রাকের পণ্য পঁচতে/পাকতে শুরু করেছে। পাটুরিয়া ঘাটেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
বিআইডবিøউটিসির দৌলতদিয়া অফিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী ও যানবাহন বোঝাই করে রোরো ফেরি আমানত শাহ দৌলতদিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু মাঝ নদীতে এসে তীব্র স্রোতের কারণে ফেরিটি আর সামনে আগাতে পারে না। এ অবস্থায় প্রায় ৪ ঘন্টা সেখানে ইঞ্জিন চালু রেখে ফেরিটি স্থীর রাখতে পারলেও এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে ফিরে যায়। একইভাবে বেলা ১২টার দিকে রোরো ফেরি শাহজালাল পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়ার ৬নং ঘাটের কাছাকাছি আসলেও তীব্র স্রোতে শেষ পর্যন্ত ঘাটে ভিড়তে পারেনি। ওই ফেরিটিও পাটুরিয়া ফিরে গিয়ে যাত্রী ও যানবাহন নামিয়ে দেয়। উদ্ধারকারী জাহাজের সহযোগিতায়ও ফেরি দুটিকে গন্তব্যে আনা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মায় পানি বেড়ে দৌলতদিয়ার ৬ নং ঘাটের পন্টুন নিমজ্জিত হয়ে গেছে। পন্টুনের র্যাম উঁচু হয়ে যাওয়ায় সেখান দিয়ে ঠিকমত যানবাহন ফেরিতে উঠতে পারছে না। ঘাট মেরামতের দায়িত্বে থাকা বিআইডবিøউটিএ’র দায়িত্বশীল কাউকেই সেখানে দেখা যায়নি। এ সময় সেখানে উপস্থিত গোয়ালন্দের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করলে তাদের কর্মীরা এসে ফেরির র্যাম ও নিমজ্জিত রাস্তায় বালু ও খোয়া ফেলে উঁচু করার কাজ শুরু করে।
এ ব্যাপারে গোয়ালন্দের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দৌলতদিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাট। অথচ এখানে বিআইডবিøউটিএ’র কোন অফিস বা স্থায়ীভাবে কোন কর্মকর্তা থাকেন না। ফলে জরুরী মুহুর্তে তাদের অনুপস্থিতিতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। আমি বিষয়টি বিআইডবিøউটিএ’র চেয়ারম্যানকে মুঠোফোনে অবগত করেছি।
সড়কে আটকে থাকা বাস চালক অভিযোগ করেন, তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকে থেকে অনেক যাত্রীই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কিন্তু এরকম দূর্ভোগের মধ্যে যাত্রীবাহী যানবাহনের সাথে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অনেক পন্যবাহি ট্রাক ফেরিতে উঠিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় অন্তত ৫ শতাধিক অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান যাত্রীরা গত ২/৩ দিন ধরে ঘাট এলাকায় আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
যশোর থেকে আসা কলা, পিঁয়াজ, কাচা মরিচ বোঝাই ট্রাক চালক আ. জলিল, রহমান মিয়া, লুতফর রহমানসহ কয়েকজন জানান, দুদিন ধরে মহাসড়কেই দাঁড়িয়ে আছি। প্রচÐ রোদ ও গরমে কাঁচা পণ্যগুলো পাকতে ও পচতে শুরু করেছে। দ্রæত পণ্যগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতি হবে।
বিআইডবিøউটিসি দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, রুটে চলাচলকারী ১৫টি ফেরির মধ্যে তীব্র ¯্রােতের কারণে ৪টি ফেরি চলাচল করতে পারছে না। অন্য ফেরিগুলো ট্রিপে অতিরিক্ত সময় লাগায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মানুষের দূর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহি যানবাহনগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। পন্যবাহি ট্রাক পারাপার বিষয়ে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পচনশীল পন্যবাহি কিছু ট্রাক বাসের সাথে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, মেরামতে থাকা রুটের ৫টি ফেরি আগামী সপ্তাহে রুটে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
মাদারীপুর জেলা ও শিবচর উপজেলা সংবাদদাতা জানান : স্রোতের বিপরীতে টিকতে না পারায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ডাম্প ফেরি কে-টাইপ ও ছোটসহ অন্তত ১০ ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করায় এ নৌরুটে এখন যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে। স্রোতের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে গত বুধবার সন্ধ্যায় পর একই ঘাটে ফিরে আসে ২টি ফেরি। এতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এ রুটে পুরোপুরী ফেরী চলাচল বন্ধ হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ঈদুল আজহায় এখানে যাত্রীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করতে পারে।
বিআইডবিøউটিসির এজিএম মেরিন একেএম শাহজাহান জানান, উজান থেকে ঢলের পানি নেমে আসায় পদ্মায় এখন প্রচুর স্রোত। এ স্রোতের প্রতিক‚লে মান্ধাতার আমলের ৬টি ডাম্প ফেরি, ২টি মিডিয়াম ও ১টি কে টাইপ ফেরি সহ মোট ৯টি ফেরি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে মঙ্গলবার দুপুর ২টা হতে এ ৯টি ফেরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বুধবার সন্ধ্যার পর ঘাটে ফিরে এসেছে ২টি ফেরি। বর্তমানে এ নৌরুটে ১৫টি ফেরি চলাচল করলেও এখন মাত্র ৪ টি ফেরি দিয়ে কোন রকমে পারাপার অব্যাহত রাখা হয়েছে। ফলে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করায় উভয় ঘাটে প্রায় হাজারো যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। বিআইডবিøউটিসির এই কর্মকর্তা আরো জানান, গতবছর শিমুলিয়া ঘাট থেকে বর্তমান রানিং চ্যানেলের আরো কিছুটা ভাটিতে একটি বিকল্প চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলাচল করতো। কিন্তু এ বছর ওই চ্যানেলটি ড্রেজিং না করায় সেখান দিয়ে ফেরি চলাচল সম্ভব হচ্ছেনা। যদি ওই চ্যানেলটি খোলা থাকতো, তাহলে সেখান দিয়ে ফেরিচলাচল সম্ভব ছিল। কারণ ওই চ্যানেলে স্রোতের ধারা অনেকটা শিথিল। বাংলাদেশ অভ্যন্তরিণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআডবিøউটিএ) বারবার বলার পরেও ওই চ্যানেলটি চালুর কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে পদ্মায় স্রোতের ধারা না কমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া এসব ফেরি পুনরায় সচল করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনকি বাকী ফেরি ৪টি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এদিকে ফেরি ধীরগতি হওয়ায় উভয় পাড়ে সহস্রাধিক যানবাহন আটকে পড়ে আছে। যানবাহনের লাইন পদ্মা সেতুর এপ্রোচ সড়ক পর্যন্ত পৌঁছেছে। এপ্রোচ সড়কের এক কিলোমিটার জুড়ে ট্রাকের সাড়ি দেখা গেছে। এতে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে আসা সকল ফেরি, লঞ্চ,স্পীডবোটগুলো উজান বেয়ে অতিরিক্ত সময় নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। প্রতিটি ফেরি পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগছে।
বিআইডবিøউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সহকারী ম্যানেজার জসিম হোসেন বলেন, পদ্মায় প্রবল স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মাত্র ৩টি ফেরি চলাচল করতে পারছে। এ কারণে উভয় পাড়েই যানবাহন আটকে পড়েছে। ফেরি সার্ভিস সচল রাখতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।